|
|
|
|
খাদ্য বিলে বিজেপির বাধাই অস্ত্র কংগ্রেসের
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
সংসদে অচলাবস্থার জন্য বিজেপিকে কাঠগড়ায় পাশাপাশি তাদের খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পের বিরোধী হিসেবেও তুলে ধরতে সক্রিয় হল কংগ্রেস। এ নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রচারে নেমে পড়তে চাইছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব।
লোকসভা নির্বাচনের আগে সংসদের এ বারের বাদল অধিবেশনে খাদ্য সুরক্ষা বিল পাশ করানো ছিল সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার। সেই সঙ্গে নয়া জমি বিল এবং অর্থনৈতিক সংকটের বাতাবরণে পেনশন ও বিমা বিল পাশ করিয়ে বিদেশি লগ্নি টানার পথ সুগম করার লক্ষ্যও ছিল সরকারের। অধিবেশন শুরুর আগে এর সবগুলিতেই সরকারের পাশে থাকার প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত ছিল বিজেপির তরফে। কিন্তু বাদল অধিবেশনের প্রথম দিন থেকে বিভিন্ন বিষয় তুলে লাগাতার সভা অচল করে দেওয়ার ব্যাপারে বড় ভূমিকা নেন বিজেপি নেতৃত্ব। কখনও পাকিস্তান, কখনও কয়লা কেলেঙ্কারির প্রসঙ্গ তুলে সভা অচল করে দেয় বিজেপি। সেই সঙ্গেই যোগ হয় অন্ধ্রপ্রদেশ ভাগের বিরোধিতায় সেখানকার তেলুগু দেশম সাংসদের বিক্ষোভ। যার জেরে একাধিক বার সভা মুলতুবি করে দিতে হয়েছে। ফলে অধিবেশন শুরুর পর থেকে একটিও গুরুত্বপূর্ণ বিল এখনও পাশ করানো সম্ভব হয়নি সরকারের পক্ষে। এমনকী সংসদ চালানোর জন্য আজ অন্ধ্রপ্রদেশের এগারো জন সাংসদকে সরকার সাসপেন্ড করার প্রস্তাব দিলে, প্রতিবাদে সরব হন লোকসভার বিরোধী দলনেতা সুষমা স্বরাজ। বিরোধিতা এত চরমে ওঠে যে, আজও লোকসভা মুলতবি হয়ে যায়। |
অন্ধ্র ভাগের প্রতিবাদে নিজেকে চাবুক। বৃহস্পতিবার সংসদ
ভবন চত্বরে তেলুগু দেশমের সাংসদের প্রতিবাদ। ছবি: পিটিআই। |
সুষমা অবশ্য বলেন, “আমরা সভা চালাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সরকারের কারণেই সভা অচল হচ্ছে। কারণ এমন কিছু ঘটনা সরকার ঘটাচ্ছে, তার পর আর চুপ করে বসে থাকা যায় না।” এ কথা বলে ফের সরকারের বিরুদ্ধে কয়লা কেলেঙ্কারি প্রসঙ্গ তুলে ধরেন সুষমা। পাল্টা জবাবে সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কমলনাথ বলেন, “আসলে বিজেপি সভা পণ্ড করার জন্য প্রতিদিনই ছুতো খুঁজছে। কিছু বিষয় না পেলে কাল হয়তো দিল্লির বৃষ্টি নিয়ে সভা অচল করবে!”
তাৎপর্যপূর্ণ হল, লোকসভা লাগাতার অচল থাকলেও রাজ্যসভা কিন্তু চলছে। এমনকী রাজ্যসভায় সম্প্রতি কোম্পানি বিল পাশও হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে যে, বিজেপি যদি সংসদ অচল করেই রাখতে চাইবে, তা হলে রাজ্যসভা চলছে কী ভাবে? জবাবে কংগ্রেস মুখপাত্র আজ বলেন, “কারণটা জলের মতো সহজ! খাদ্য সুরক্ষা বিলটি প্রথমে লোকসভায় আলোচনা ও পাশ হওয়ার কথা। সেই কারণেই লোকসভা অচল করে রাখছে বিজেপি।”
তা হলে কি উদ্বেগে কংগ্রেস?
কংগ্রেস শীর্ষ সূত্রে জানা যাচ্ছে, একেবারেই নয়। সংসদের অচলাবস্থার জন্য প্রকাশ্যে তাঁরা বিজেপি-র সমালোচনা করলেও তলে তলে কিন্তু মোটেই অখুশি নন। বরং দলের নেতারা বলছেন, সংসদে এ যাত্রায় খাদ্য সুরক্ষা বিল পাশ না হলে দিল্লি, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়-সহ পাঁচ রাজ্যের ভোটে সেটাকে প্রচারে অন্যতম হাতিয়ার করবে দল। প্রসঙ্গত, খাদ্য সুরক্ষা বিল নিয়ে ইতিমধ্যে অর্ডিন্যান্স জারি করেছে সরকার। সংসদে এ বার সেই অর্ডিন্যান্স পাশ না হলে তা বাতিল হয়ে যাবে। কিন্তু সরকারের নেতারা বলছেন, সে ক্ষেত্রে ফের অর্ডিন্যান্স জারি করবে কেন্দ্র। মন্ত্রিসভার এক সদস্যের ব্যাখ্যা, “যে হেতু কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলিতে খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্প রূপায়ণ শুরু হয়ে গিয়েছে, তাই এ বার পাশের রাজ্যগুলি থেকে অচিরেই ওই প্রকল্প রূপায়ণের দাবি উঠবে বলে দলের আশা। ভোটের আগে উত্তরপ্রদেশ, বিহার, মধ্যপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গের মতো অকংগ্রেসি রাজ্যগুলিতে সেই দাবিকে আরও উস্কে দিতে তৎপর হবে কংগ্রেস। ফলে বিজেপি সংসদে যে অচলাবস্থা তৈরি করে রেখেছে, তাতে আখেরে দলেরই রাজনৈতিক সুবিধা হবে।”
সর্বভারতীয় কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, “সংসদে এ বার খাদ্য সুরক্ষা বিল পেশ হওয়ার আগেই সনিয়া গাঁধী বিজেপি-র উদ্দেশে বলেছিলেন, দোহাই এ বার সংসদ চালাতে দিন। কারণ, খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্প পাশ হলে গরিব মানুষ দু’বেলা খেতে পাবেন।” ফলে এ বার বিলটি পাশ না হলেও সনিয়া বিজেপি-র বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক প্রচারে নামার বড় সুযোগ পাবেন।
এ দিকে সংসদে অচলাবস্থা নিয়ে বিজেপি-র অন্দরেও মতান্তর শুরু হয়ে গিয়েছে। রাজ্যসভা সচল রাখতে সভার বিরোধী দলনেতা অরুণ জেটলি সরকারের সঙ্গে ‘সহযোগিতা’ করায় দলে তাঁর সমালোচনা করেছেন যশবন্ত সিনহা, সুষমার মতো লোকসভার নেতানেত্রীরা। এ নিয়েও আজ কটাক্ষ করেছে কংগ্রেস।
|
পুরনো খবর: রাজীবের জন্মদিনেই খাদ্য বিল পাশ করাতে মরিয়া সনিয়ারা |
|
|
|
|
|