টানা বৃষ্টি মানেই বাড়িতে পা গুটিয়ে বসে জমিয়ে খাওয়াদাওয়া আর অফুরান আড্ডা। বর্ষার চেনা দস্তুর ছিল এটাই।
কিন্তু বাড়িতে বসে তো আর প্রেম-পিরিতি হয় না। আবার বৃষ্টিতে ভিজে প্রেমটাও রোজ রোজ মুশকিলের। অতএব, এমন একটা জায়গা চাই যেখানে ছাদও থাকবে, কাচের বাইরে বৃষ্টিও থাকবে, আবার টুকটাক মুখ চালানো, মর্জি মতো ঘুরে বেড়ানো বা সিনেমা দেখার সুযোগও থাকবে। সুতরাং মেঘলা দিন মন একলা ঘরে না থাকতে চাইলেই জোড়ায় অথবা দল জুটিয়ে চলে যান শপিংমলে।
গত তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে শিল্পাঞ্চলে দেখা মিলল এমনই ছবির। রাস্তাঘাট ফাঁকা, পাড়ার চায়ের দোকান ফাঁকা অথচ ভিড় উপচে পড়েছে দুর্গাপুরের শপিংমলগুলোয়। বিভিন্ন মলে ঘুরে দেখা গেল, ফুডকোর্টে, সিঁড়ির ধাপে, রেলিংয়ে ভর দিয়ে গল্পে মেতেছেন তরুণ-তরুণীরা। বাড়িতে বসে তেলেভাজা-মুড়ি কিংবা খিচুড়ি-ইলিশ মাছ ভাজার বদলে কাচের জানালা গিয়ে বন্ধু বা বান্ধবীর সঙ্গে বৃষ্টি দেখতে দেখতে চিপস্ বা স্ন্যাকসেই বেশি স্বচ্ছন্দ তারা।
তবে শুধু যে কমবয়েসীদের ভিড় রয়েছে তা নয় বারো থেকে বাহাত্তর সকলেই রয়েছেন মল-মহলে। অতনু, পাপিয়া, রেণুকা, ধীমানবাবুদের কথায়, “একবার ঢুকে পড়তে পারলেই ব্যাস। এ দোকান সে দোকান ঘোরা, কেনাকাটা করা বা মাল্টিপ্লেক্সে সিনেমা দেখা যা কিছুই করা যায়।” |
থাক না রক্ষী, আমাদের কাকে ভয়? দুর্গাপুরের শপিংমলে বৃহস্পতিবার সব্যসাচী ইসলামের তোলা ছবি। |
এছাড়া গরম গরম চা-কফি বা বা ভাজাভুজির দোকান তো রয়েইছে। দেখা মিলল ভরা শ্রাবণ উপেক্ষা করে পানাগড় থেকে দুর্গাপুরে চলে আসা এক জোড়ার। তাঁদের কথায়, “রোজ রোজ পার্কে বসা একঘেয়ে হয়ে গিয়েছে। তাছাড়া পরিচিত কেউ দেখে ফেলার ভয় তো থেকেই যায়। সেখানে এই মলটা সাজানো-গোছানো, বিশাল। ফলে অনেকের মধ্যে চোখে পড়ার সম্ভাবনা কম। আর নতুন পরিবেশে সঙ্গীকেও নতুনরকম লাগছে।”
দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটানোর সঙ্গে সঙ্গে পুরনো সঙ্গীকে নতুন করে খুঁজে পেতেই বোধহয় ভিড় জমিয়েছেন বয়স্করাও। কফির কাপ হাতে ফুডকোর্টে বসে আড্ডা মারছেন তাঁদের অনেকেই। হেঁসেলের পাট চুকিয়ে হাজির বেশ কয়েকজন নবদম্পতিও।
পুজোর কেনাকাটার ভিড় তো শুরু হয়েই গিয়েছে তার সঙ্গে বর্ষায় লোক টানতে বেশ কিছু পন্থা নিয়েছেন শপিংমল কর্তৃপক্ষও। তারা জানিয়েছেন, জুলাই মাসের মাঝামাঝি বর্ষা স্পেশাল ইলিশ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছিল। তার পরেও বিভিন্ন ছোটখাটো মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। যেমন, কোনও বুটিকের প্রদর্শনী বা হস্তশিল্প মেলা। আবার শনি-রবিবারগুলোতেও অনেকসময় ছোটখাটো অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
ফলে প্রেমের টানে আসা যুগলদের কেনাকাটার প্রেমে ফেলারও সব বন্দোবস্তো তৈরি। |