কোথাও লতাগুল্মে মুখ ঢেকেছে ট্রান্সফর্মার, গিয়ার, স্যুইচ বক্স। কোথাও গাছের বড় ডাল এসে পড়েছে বিদ্যুৎবাহী তারের উপরে। কোনও জায়গায় আবার খুঁটির পরিবর্তে আস্ত একটি গাছকেই তার টানার কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। আর রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির বরাকর শাখার নানা এলাকায় এ সব কারণেই বর্ষার মরসুমে নিয়মিত বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটার অভিযোগ উঠেছে।
সম্প্রতি এই সব এলাকায় ঘনঘন বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন গ্রাহকেরা। বিকল হচ্ছে পর্ষদের মূল্যবান যন্ত্রাংশ। অথচ সমস্যা সমাধানে পর্ষদ কর্তাদের কোনই নজর নেই বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। সংস্থার আসানসোলের ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার মিতেশ দাশগুপ্ত জানান, বেশ কিছু দিন ধরে এমন অভিযোগ যে উঠেছে, তা তাঁরা জেনেছেন। এ’বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি।
সম্প্রতি সপ্তাহখানেক ধরে কুলটির বিস্তীর্ণ এলাকায় যখন তখন ঘনঘন বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। নাকাল হচ্ছেন শহরবাসী। ক্ষতি হচ্ছে পড়ুয়াদের। খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, এটি লোডশেডিংয়ের ঘটনা নয়। কেন এমন হচ্ছে তা জানতে চাওয়া হলে বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির বরাকর শাখার অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার স্বরাজ দাস স্পষ্ট ভাবে কিছু জানাতে পারেননি। তিনি বলেন, “একাধিক কারণ থাকতে পারে। বিদ্যুতের তারে গাছের ডাল পড়ে থাকা, ট্রান্সফর্মারের স্বাস্থ্যহানি ইত্যাদির জন্য এমন হতে পারে। আমরা খুঁজে দেখছি।” |
আসানসোলে তোলা নিজস্ব চিত্র। |
বিদ্যুৎ বিশেষজ্ঞেরা অবশ্য দাবি করেছেন, তার, ট্রান্সফর্মার লতায়-পাতায় ঢাকা পড়া বা গাছের ডাল পড়াই এর বিদ্যুৎ বিঘ্নের কারণ। সেলের বিদ্যুৎ বিশেষজ্ঞ তথা সরকারি লাইসেন্সপ্রাপ্ত বাস্তুকার অশোক সেনগুপ্তের মতে, বেশ কিছু জায়গায় বিদ্যুৎ পরিবাহী তারের উপরে বড় গাছের ডাল এসে পড়েছে। এই ঝড়জলের সময়ে ডালগুলি দোলা খেয়ে নানা তারে বারবার আঘাত করে। ফলে শর্ট সার্কিট হয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টির জলে ঝোপে ঢাকা ট্রান্সফর্মার, গিয়ার ও স্যুইচ বক্সেও শর্ট সার্কিট হয়ে বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। অশোকবাবু বলেন, “এর ফলে ঘরের যাবতীয় ইলেকট্রনিক্স সরঞ্জামের ক্ষতি হতে পারে। স্বাভাবিকের তুলনায় বিদ্যুতের মিটারও বাড়বে।”
বিশেষজ্ঞদের এই দাবি কতটা ঠিক তা খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা যায়, কুলটিতে জি টি রোডের পাশে অনেক জায়গায় বিদ্যুৎবাহী তারের উপরে ঝুলছে বড় গাছের ডাল। ট্রান্সফর্মার, সুইচ বাক্স, গিয়ারের দেখা পেতে গেলে ঝোপের মধ্যে হাতড়াতে হয়। রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির আসানসোলের ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার মিতেশ দাশগুপ্ত জানান, এ সব দেখভালের দায়িত্ব কোম্পানিরই। বিদ্যুৎ পরিবাহী তারের উপরে এসে পড়া গাছের ডাল কাটা, ঝোপঝাড় পরিষ্কার রাখার জন্য ঠিকায় লোক নিযুক্ত রয়েছে। বরাকর শাখাতেও এ সব পরিচর্যা ও দেখভালের জন্য একাধিক ঠিকাদারকে মোটা টাকায় বরাত দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কাজ যে কিছুই হয়নি তা এলাকা ঘুরলেই বোঝা যায়।
এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি বরাকর শাখার অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার স্বরাজ দাস। মিতেশবাবু বলেন, “পরিচর্যার কাজ হচ্ছে কি না তা আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করব।” |