বৃষ্টি কমে গেলেও ব্যারাজের ছাড়া জলে প্লাবনের ভ্রুকুটি
টানা তিন দিন পশ্চিমবঙ্গকে হাবুডুবু খাইয়ে শেষ পর্যন্ত ঝাড়খণ্ডে গেল বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপ। বুধবার দুপুরে ঝাড়খণ্ডে ঢোকার পর নিম্নচাপের শক্তিও কমেছে। তাতেও অবশ্য স্বস্তি নেই। গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে গত তিন দিনের অতিবৃষ্টি আর ব্যারাজের ছাড়া জলে জঙ্গলমহলের তিন জেলা এবং রাজ্যের উপকূলবর্তী অঞ্চলে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
উদ্বেগ বাড়িয়েছে ব্যারাজ থেকে ছাড়া জলের পরিমাণ। উত্তর-পশ্চিম ওড়িশা এবং ঝাড়খণ্ডের দক্ষিণ-পূর্বাংশে বৃষ্টির জেরে গালুডি ব্যারাজ থেকে বুধবার ২ লক্ষ ৫৫ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়। চাণ্ডিল ব্যারাজ থেকে ৪৫ হাজার কিউসেক এবং বাঁকুড়ার কংসাবতী ব্যারাজ থেকে ছাড়া হয়েছে ৫০ হাজার কিউসেক জল। মাইথন জলাধার মঙ্গলবার রাত থেকে জল ছেড়েছে ১২ হাজার কিউসেক। পাঞ্চেত থেকেও ১৫ হাজার কিউসেক করে জল ছাড়া হচ্ছে।
পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে বুধবার দুই মেদিনীপুরে আসেন সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে জলসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র-সহ সেচ দফতরের কর্তারা। পাঁশকুড়া ঘুরে মেদিনীপুর শহরে এসে কংসাবতীর অ্যানিকেত বাঁধ পরিদর্শন করে বৈঠকে বসেন দুই মন্ত্রী। সেচমন্ত্রী বলেন, “২০০৮ সালে গালুডি থেকে ৩ লক্ষ কিউসেক জল ছাড়ায় মেদিনীপুরে বন্যা হয়েছিল। এ বারও জল ছাড়া হয়েছে। তবে সেচ দফতর ভাল কাজ করায় এখনও বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।”

দেখে মনে হয় ব্যারাজ থেকে জল ছাড়া হয়েছে। তা নয়। নিম্নচাপে পুরুলিয়া ১ ব্লকের খাল-বিলের জল
মিশে ফুলে উঠেছে তারা জলাধার। জল নেমে যাচ্ছে কংসাবতী নদীতে। বুধবার সুজিত মাহাতোর তোলা ছবি।
নিম্নচাপ দুর্বল হওয়ায় কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টি কমেছে। হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস, নিম্নচাপ আরও দুর্বল হয়ে ছত্তীসগঢ়ের দিকে যাবে। তার জেরে আগামী দু’-তিন দিন গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে হাল্কা বৃষ্টি হবে। বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া নিম্নচাপের জেরেই দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে শুরু হয় ভারী বৃষ্টি। মঙ্গলবার থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের নিরিখে সব রেকর্ড ভেঙেছে পুরুলিয়ার তুসুমা। সেখানে ১৯০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। সমানে টক্কর দিয়েছে কলকাতাও। মহানগরে বৃষ্টির পরিমাণ ৯৪ মিলিমিটার। দমদমে বৃষ্টি হয়েছে ৮০ মিলিমিটার ও ব্যারাকপুরে ৭০ মিলিমিটার।
এ দিনই দুপুরে কেশপুরে জলের স্রোতে ভেসে মৃত্যু হয়েছে এক মহিলার। কংসাবতী সেচ দফতরের সুপারিনটেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার (১) বিশ্বনাথ কুমার বলেন, “মঙ্গলবার রাতেও ভারী বৃষ্টি হয়েছে। ফলে মুকুটমণিপুর জলাধারে জলস্তর আরও বেড়েছে। তাই জল ছাড়ার হার বাড়ানো হয়েছে।” সুবর্ণরেখা ও ডুলুং নদী একাকার হয়ে প্লাবিত হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের সাঁকরাইলের বিস্তীর্ণ এলাকা। গোপীবল্লভপুর ও নয়াগ্রামের কিছু এলাকাও জলের তলায়। পরিস্থিতি মোকাবিলায় জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এনডিআরএফ) এবং রাজ্য অসামরিক প্রতিরক্ষা দফতরের উদ্ধারকারী দলকে ডাকা হয়েছে। পুরুলিয়াতেও বাঘমুণ্ডি-বলরামপুর সড়ক, বাঘমুণ্ডি-ঝালদা সড়কে কুটিডি সেতুর উপর দিয়ে জল বইছে। জলমগ্ন হয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরি ও রামনগরের উপকূলবর্তী এলাকা। মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।
প্রশাসন জানিয়েছে, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা তৈরি। সেচমন্ত্রীও বলেন, “আমরা কন্ট্রোল রুম খুলেছি। সব রকম প্রস্তুতি সেরে রেখেছি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.