প্রবন্ধ ৩...
সাগরে হ্যাঁ, গঙ্গায় না, কেন?
শ্চিমবঙ্গের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর ‘ইলিশ’-এর অবস্থা এখন অদ্ভুত। সাগর থেকে তার আমদানি তুলনায় গত বারের থেকে বেশি। কিন্তু গঙ্গার ইলিশ! সে কোথায়? কেন সে নেই নদীতে? ইলিশ সমুদ্রের মাছ। সমুদ্রে সে বড় হয়। প্রাকৃতিক নিয়মে ডিম ছাড়তে সে নদীর মিষ্টি জলে প্রবেশ করে। ডিম, ডিম থেকে উৎপন্ন বাচ্চা লবণ সহ্য করতে পারে না, তাই মা-ইলিশ ডিম ছাড়ে মিষ্টি জলের নদীতে। সঙ্গে বাবা-রাও থাকে। তাদের নিঃসৃত শুক্রাণু সমৃদ্ধ শুক্ররস ডিম’কে নিষিক্ত করে বাচ্চার জন্ম দেয়। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু, বর্ষা বঙ্গোপসাগরের ইলিশকে (Tenualosa ilisha) মায়ানমার, বাংলাদেশ হয়ে আমাদের দেশের দিকে টেনে আনে। কিন্তু এমন কী ঘটেছে, যার জন্য সে মুখ ফিরিয়েছে?
বঙ্গোপসাগরে চওড়া মহাদেশীয় তাক (কন্টিনেন্টাল), মৌসুমি বায়ু, মাঝারি থেকে বেশি বৃষ্টি ও জলপ্রবাহ, জলের উপরিতলের তাপমাত্রা ২০ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড, উপরিতলের কারেন্ট, বর্ষায় উপকূলের জলে কম লবণের প্রভাব এ সবের কারণে ইলিশ পাওয়া যায়।
বর্ষায় গঙ্গার উপরের ঠান্ডা জল মোহনায় গিয়ে জলে লবণের পরিমাণ কমায় ও জৈববস্তু যুক্ত পলি নিয়ে যায়, যা জলে প্ল্যাংটনের পরিমাণ বাড়ায়। প্ল্যাংটন ইলিশের খাদ্য। ১৯৭৫ সালে ফরাক্কা ব্যারেজ তৈরির পর গঙ্গায় উপর থেকে নীচের দিকে মিষ্টি জল আসার পরিমাণ কমতে শুরু করে। এটা গঙ্গায় ইলিশ না-পাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ। গঙ্গায় প্রবাহ না থাকলে জলের তাপমাত্রা বাড়ে, যার প্রভাবে মাছ হয় না। এ ছাড়াও বৃষ্টির ঘাটতি আর একটা বড় কারণ।
এখন গঙ্গায় নোংরা জল পড়ছে। নদীর সঙ্গে যুক্ত খালে লকগেট তৈরি হয়েছে চাষের সুবিধার জন্য। জল কিছু দিন আটকে থাকলেই তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সেই নোংরা, গন্ধময় জল লকগেট খুলে আবার গঙ্গাতে ফেলা হচ্ছে। ফলে জলে জৈবিক অক্সিজেন ঘাটতি বাড়ছে, ভারী ধাতব বস্তু জলে আসছে। এ সব অন্য মাছের ডিম এবং চারাকেও নষ্ট করছে। প্রতিবেদকের গবেষণালব্ধ ফলে দেখা যাচ্ছে যে, ইলিশের ওজন কমছে এবং ৩০০ থেকে ৩৫০ গ্রাম মাছ পরিণত হয়ে যাচ্ছে। মা-মাছের দেহে ডিমের সংখ্যা কমছে।
এর পর অন্য বিপদ। সাগরে আজ কয়েক হাজার ট্রলার ঘুরে বেড়াচ্ছে। সঙ্গে রয়েছে বিদেশি ট্রলারের দাপট। ইলিশ বেচারিদের মিষ্টি জলে ঢোকার সুযোগই নেই। আর যদি বা ঢোকে, তারা যে নিশ্চিন্তে ডিম ছাড়বে তারও উপায় নেই। গঙ্গায় যে পরিমাণ জাল দেওয়া হয়, তাতে ইলিশের উপরের মিষ্টি জলের দিকে ওঠার সম্ভাবনা নেই। ধরা পড়বেই। জাল প্রায় ২০-২৫ হাত চওড়া, লম্বায় ২৫০-৩০০ মিটার। এর সঙ্গে আছে বিন-জাল, যার মুখ হাঁ-করা, পিছনের দিকটা চোঙার মতো। এই জালের ফাঁস খুব সরু। ফলে ইলিশের বাচ্চা-সহ অন্য মাছের বাচ্চারা সহজেই ধরা পড়ে।
গঙ্গায় ইলিশের ডিম দেওয়া এবং চারা তৈরির জায়গা বা আঁতুড়ঘরগুলো খোঁজা দরকার। ইলিশের ডিম ছাড়ার সময় (জুন থেকে সেপ্টেম্বর) ও চারা পাওয়ার সময় (এপ্রিল, মে, নভেম্বর), সেই জায়গাগুলো রক্ষা করা এবং সেই সময় ইলিশ-জীবীদের অন্য জীবিকার ব্যবস্থা করা।
তবে সব কিছুর উপরে দরকার গঙ্গায় মিষ্টি জলের সরবরাহ বৃদ্ধি করা। ফরাক্কা ব্যারেজ তৈরির পরবর্তী সময়ে যার পরিমাণ অনেক কমেছে। কিন্তু তার উপায় কী? বয়স্ক এক মৎস্যজীবীর কথায় ‘ইলিশ আমরা অনেক পাব, যদি ফরাক্কা ব্যারেজ ভেঙে দেওয়া যায়’। তা যখন হবে না, তখন আমাদের এখন যা আছে, তা-ই নিয়েই সুবিবেচনার সঙ্গে চলতে হবে।
এটা সুখের কথা যে, ভারত সরকার, বাংলাদেশ সরকার যৌথ ভাবে ইলিশ নিয়ে ভাবছে। ইলিশ পুনরুদ্ধারের জন্য ভারত সরকার তো ইতিমধ্যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এই সব পরিকল্পনা কার্যকর হলে অদূর ভবিষ্যতে বাঙালির কাছে ইলিশ সাধ্যের মধ্যে পৌঁছবে।

শ্রীরামপুর কলেজে প্রাণিবিদ্যার শিক্ষক বঙ্গবাসী কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.