শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন প্রকল্পে অন্তত ২০০ কোটি টাকা দুর্নীতি হয়েছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করলেন বামেরা। তাঁদের অভিযোগ, ইতিমধ্যেই দুর্নীতির ঘটনায় কয়েকজন বাস্তুকার এবং ঠিকাদার সংস্থার কর্ণধারদের গ্রেফতার করা হলেও তত্কালীন চেয়ারম্যান এবং সেই সময় দায়িত্বে থাকা মুখ্য কার্যনির্বাহী বাস্তুকারকে আড়াল করার চেষ্টা হচ্ছে। তাঁদের গ্রেফতারের দাবিতে আগামী শুক্রবার এসজেডিএ’র সামনে অবস্থান বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন তাঁরা।
প্রাক্তন পুরমন্ত্রী তথা দার্জিলিং জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক অশোক ভট্টাচার্য দীর্ঘদিন এসজেডিএ-এর চেয়ারম্যান ছিলেন। অশোকবাবু জানান, ওই সংস্থায় তাঁর আমলে বহু কোটি টাকা টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করে তার সুদ থেকে এলাকার নানা উন্নয়নের কাজ করা হতো। তৃণমূল সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পরে রাতারাতি সেই টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। তার অধিকাংশ যে আত্মসাত্ কিংবা নয়ছয় হয়েছে সেটা এসজেডিএ-এর তরফে থানায় অভিযোগ জানানো থেকেই স্পষ্ট বলে অশোকবাবুর মনে করেন। প্রাক্তন পুরমন্ত্রী বলেন, “বহু কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও টালবাহানা করে প্রাক্তন চেয়ারম্যান এবং সেই সময় এসজেডিএ’র মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক পদে যিনি ছিলেন তাদের ধরা হচ্ছে না। সদস্যদের কয়েকজনকে লোক দেখানো জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এর বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলনে নামছি। যে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে সে ব্যাপারে নিরপেক্ষ তদন্ত করতে হবে। আমরা তাই সিবিআই তদন্তের দাবি তুলেছি।”
পাশাপাশি, সিপিএমের দার্জিলিঙের ভারপ্রাপ্ত জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকার বলেন, “শিলিগুড়ির বিধায়কের নামও এ ধরনের অভিযোগের মধ্যে জড়িয়ে গিয়েছে। তত্কালীন সিইও’কে পদোন্নতি দিয়ে মালদহের জেলাশাসক করা হয়েছে। শুনছি পঞ্চায়েত নির্বাচনে তিনি না কি তৃণমূলকে সহায়তা করেছেন। তাই তাঁর যাতে কিছু না হয় সে ব্যাপারে নেতা-মন্ত্রীদের একাংশও না কি সচেষ্ট হয়েছেন। শিলিগুড়ির মানুষ সবই দেখছেন। কোন মন্ত্রী, কাকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন, কীসের ভয়ে করছেন সব কিছুই নিশ্চয়ই একদিন প্রকাশ্যে আসবে।”
এসজেডিএ-র বর্তমান চেয়ারম্যান তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব অবশ্য আগেই দাবি করেছেন, তাঁদের সরকারই দুর্নীতি রুখতে সচেষ্ট। এমনকী খোদ মুখ্যমন্ত্রী পুলিশে অভিযোগ জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন। বাম জমানায় এ সব কল্পনাও করা যেত না বলে গৌতমবাবুর দাবি।
মহানন্দা অ্যাকশন প্ল্যানে নিকাশি তৈরি এবং ৩টি শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লি বসানোর কাজে এসজেডিএ’রতরফে ৫০ কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ করা হয় পুলিশে। পরে শিলিগুড়ি শহরে নিরাপত্তার স্বার্থে প্রায় ৯ কোটি টাকা খরচ করে বসানো ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার মান এবং বরাত পাওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তা নিয়েও পুলিশে অভিযোগ করা হয়। ইতিমধ্যেই এসজেডিএ’র তিন জন বাস্তুকার এবং ঠিকাদার সংস্থার কর্ণধার-কর্মী ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাক্তন চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য, দার্জিলিং জেলা কংগ্রেস সভাপতি শঙ্কর মালাকার, তৃণমূল কাউন্সিলর রঞ্জন শীলশর্মা সহ এসজেডিএ’র বোর্ডের সদস্যদের একাংশকে জেরা করেছে পুলিশ। দুই দফায় জেরা করা হয়েছে প্রাক্তন সিইও তথা বর্তমানে মালদহের জেলাশাসক গোদালা কিরণ কুমারকে।
|