আগামী মাসের গোড়াতেই দার্জিলিং যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার রাতে ফেসবুক বার্তায় মুখ্যমন্ত্রী জানান, একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য তাঁকে লেপচা সম্প্রদায়ের তরফে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তিনি লেখেন, “আমি কুড়ি বারেরও বেশি দার্জিলিং গিয়েছি। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আবার যাব।”
এই বার্তায় গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নাম না করে পাহাড়ে আন্দোলনেরও কড়া সমালোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি লেখেন, “আমার সরকার পাহাড়ের বাসিন্দাদের পরিষেবা দিতে সম্পূর্ণ দায়বদ্ধ। তা হলে ছ’মাস অন্তর এই বিক্ষোভ কর্মসূচি কেন? এই ‘রাজনৈতিক দূষণ’ কেন? এর ফলে উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে, মানুষ ভুগছে, দার্জিলিং ভুগছে।” মুখ্যমন্ত্রীর ফেসবুক-বার্তার বিষয়ে অবশ্য মোর্চা নেতৃত্ব মন্তব্য করতে চাননি। দলের সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি বলেন, “আমরা ওই ফেসবুক-বার্তার কথা জানি। এটা নিয়ে এখনই কিছু বলার নেই।” |
সোমবার রাতের ঝড়বৃষ্টিতে ভেঙে পড়েছে গাছ। মঙ্গলবার দার্জিলিঙের ম্যাল রোডে রেজা প্রধানের তোলা ছবি। |
আজ বুধবার মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা বৈঠকে বসতে পারেন। সেখানে আলোচনার পরে দলের তরফে বিবৃতি দেওয়া হতে পারে। মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতা জানান, গোর্খাল্যান্ড জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটির বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে মত বিনিময় করা হবে। কারণ, লেপচা সম্প্রদায়ের জন্য যে পৃথক উন্নয়ন বোর্ড রাজ্য সরকার গঠন করেছে তাতে আগেই আপত্তি জানিয়েছে মোর্চা। তাদের অভিযোগ, রাজ্য সরকার পাহাড়ে ‘বিভাজনের রাজনীতি’ করছে। মোর্চার অনেকেরই বক্তব্য, সংখ্যালঘু ও অনগ্রসর সম্প্রদায় উন্নয়ন দফতর জিটিএ-কে হস্তান্তর করেছে রাজ্য। তাই লেপচা সম্প্রদায়ের জন্য কিছু করতে গেলে জিটিএ-এর মাধ্যমেই করা উচিত।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের জেরে গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে আন্দোলন অবশ্য সাময়িক থমকে রয়েছে। সোমবার রাতে প্রবল ঝড়বৃষ্টিতে পাহাড়ের তিন মহকুমায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এক মহিলা-সহ তিন জন জখম হয়েছেন। বহু এলাকার যান চলাচল বন্ধ।
গোটা পাহাড়েই বিদ্যুত্ সরবরাহ, বিএসএনএল-এর পরিষেবা বিপর্যস্ত। পাইপ ফেটে জল সরবরাহও বন্ধ বহু এলাকায়। সরকারি বাংলোয় জেনারেটর, ইনভার্টার থাকলেও অন্য সব এলাকা অন্ধকার। দার্জিলিঙের একটি সরকারি আবাসনের বাসিন্দারা জানান, মোমবাতি মজুত না-করায় অন্ধকারে রাত কাটাতে হচ্ছে। মঙ্গলবার রাতে কালিম্পঙের মেল্লি এলাকায় ধস নেমে শিলিগুড়ির সঙ্গে কালিম্পং ও সিকিমের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার খবর মিলেছে।
তার আগে মঙ্গলবার সকালেই মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি বলেন, “মঙ্গল ও বুধবার রাস্তায় নেমে মিটিং-মিছিলের কর্মসূচি স্থগিত রাখা হয়েছে। পরের দু’দিন অবশ্য পুরনো কর্মসূচি বহাল থাকবে।” তবে মঙ্গল-বুধেও কেউ দোকান খুলবেন না বা কাজে যাবেন না বলে আশা করছে মোর্চা। এ দিন গ্রেফতার হন মোর্চা প্রভাবিত সরকারি কর্মচারী সংগঠন ‘জনমুক্তি কর্মচারী সংগঠনে’র সভাপতি খড়গ বিক্রম সুব্বা। এ নিয়ে মোট ধৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৬৫১।
অগস্টের গোড়া থেকে আন্দোলন শুরুর পর থেকে পুলিশ-প্রশাসনের অফিসারদের সঙ্গে যোগাযোগ কার্যত বন্ধ জিটিএ সদস্যদের। তবে দুর্যোগের পরে অনেক জিটিএ সদস্য ত্রাণের ব্যাপারে প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। মোর্চার একাধিক নেতা-কর্মী জানান, বিমল গুরুঙ্গ পদত্যাগ না-করলে নগদে ত্রাণ বিলির ব্যবস্থা করতে পারতেন। অতীতে তিনি চকবাজারে আগুনে ক্ষতিগ্রস্তদের নগদ ক্ষতিপূরণ দিয়েছিলেন।
সিপিআইয়ের প্রবীণ নেতা এ বি বর্ধন মঙ্গলবার কলকাতায় অভিযোগ করেন, সরকারই পাহাড়ের পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলছে। তিনি বলেন, “সরকারের উস্কানিমূলক বিবৃতিতে জটিলতা তৈরি হচ্ছে।”
|