আলু বোঝাই ট্রাক উল্টে যাত্রী বোঝাই ছোট গাড়ির উপর পড়ায় মৃত্যু হল আট জনের। মৃতদের মধ্যে পাঁচজন মহিলা, দুইজন পুরুষ ছাড়াও একটি দুই বছর বয়সী শিশু পুত্র রয়েছে। ট্রাকের নিচ থেকে ১৬ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে গুরুতর জখম নয়জনকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকিদের বীরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে চিকিত্সা চলছে। মঙ্গলবার দুপুরে জলপাইগুড়ি জেলার মাদারিহাট থানার রাঙ্গালিবাজনা গ্রামের পাশে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কে ঘটনাটি ঘটেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃতরা হলেন, কনক রায় (২৬), মালা ঘোষ (সরকার), মুক্তা সরকার (৭২), অঞ্জলি মণ্ডল (৪২) গোবিন্দি দেবী অগ্রবাল (৬৩), ইঞ্জি নায়েক (২), অমিত নায়েক (২৮) অপর ২২ বছর বয়সী যুবকের পরিচয় জানতে পারেনি পুলিশ। তাদের সকলের বাড়ি বীরপাড়া ও মাদারিহাট থানা এলাকায়। মৃতদের মধ্যে মাদারিহাট প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের নার্স ও তার শাশুড়ি রয়েছেন। ওই ঘটনার পর আতঙ্কে রাঙ্গালিবাজনা বাজারের দোকানপাট বন্ধ করে দেন ব্যবসায়ীর। |
মাদারিহাটে জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়ি। মঙ্গলবার ছবি তুলেছেন রাজকুমার মোদক। |
এলাকার বাসিন্দারা জানান, রাস্তার পাশে জনবহুল রাঙ্গালিবাজনা বাজার এলাকায় যান নিয়ন্ত্রণ করতে জাতীয় সড়কের উপর দুপাশে পুলিশ লোহার তৈরি স্পিড ব্রেকার বসায়। ভুটান থেকে আলু বোঝাই করা ট্রাকটি দ্রুত বেগে চলে আসার ফলে লোহার দুটি স্পিড ব্রেকারকে পাশ কাটাতে গেলে নিয়ন্ত্রণ হারায় ট্রাকটি। সে সময় দুটি গাড়ি বাজারের পাশে দাঁড়িয়েছে যাত্রী ওঠা নামা করছিল। আচমকা ট্রাকটির সঙ্গে একটি গাড়িটি ধাক্কা লাগার পর সেটি দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রী বোঝাই গাড়ির উপর উল্টে পড়ে। ট্রাকের তলায় চাপা পড়েন গাড়ির ১৮ জন যাত্রী। আধ ঘণ্টা বাদে ক্রেন আনার পর মৃত ও জখমদের বার করে আনা হয়। ঘটনার পর ট্রাকের চালক পালিয়ে যায়। ট্রাকটি শিলিগুড়ির বলে জেনেছে পুলিশ।
ভুটানের ফুন্টশিলিং থেকে আলু বোঝাই করে সেটি শিলিগুড়ির দিকে যাচ্ছিল। আলিপুরদুয়ারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আকাশ মেঘারিয়া বলেন, “ট্রাকটি দ্রুত বেগে যাচ্ছিল বলে মনে হচ্ছে। তবে স্পিড ব্রেকার না কি অন্য কোন কারণে ট্রাকটি নিয়ন্ত্রণ হারায় তা এখনও পরিষ্কার নয়। চালককে গ্রেফতার করার পর বিষয়টি স্পষ্ট হবে।”
প্রথম যে গাড়িটিকে ট্রাকটি ধাক্কা মারে সে গাড়ির জখম যাত্রী আজাউর আলম বলেন, “মাদারিহাট যাওয়ার উদ্দেশ্যে যাওয়ার জন্য ওই গাড়িতে উঠি, তখনও গাড়ি ছাড়েনি। পিছনে আরেকটি গাড়িটিও দাড়িয়েছিল। আচমকা একটি ট্রাক ধেয়ে আসতে দেখলাম। বিকট শব্দ কানে এল তারপর জ্ঞান হারাই।” প্রত্যক্ষ এক গ্রামবাসী জলিল হক বলেন, “ক্রেন দিয়ে ট্রাকটি তোলার সময় এক জখম আর্তনাদ করছিলেন। আচমকা ক্রেনের তার ছিঁড়ে ফের গাড়িটি পড়ে যায়। পরে দেখি লোকটি মারা গিয়েছে।”
মাদারিহাটের বাসিন্দা বিডিও অফিসের কর্মী সমীর সরকারের মায়ের হাত তিন সপ্তাহ আগে ভেঙে যায়। এদিন মাদারিহাট স্বাস্থ্য কেন্দ্রের নার্স, তাঁর স্ত্রী মালা দেবী মা মুক্তা দেবীকে বীরপাড়া হাসপাতালের চিকিত্সকের কাছে যান। চিকিত্সক মুক্তা দেবীর প্লাসটার কেটেও দেন। প্রথমের গাড়িটিতে চেপে শাশুড়ি ও পুত্রবধূ মাদারিহাটে রওনা দেন। ওষুধ কিনে পিছনের গাড়িতে বাড়ি ফেরার পথে সমীরবাবু রাস্তায় জানতে পারেন পথ দুর্ঘটনার খবরটি। মাদারিহাট বিডিও অফিসের ওই কর্মীর কথায়, “দুর্ঘটনার খবর জানার পর স্ত্রীকে ফোন করি। আর ওঁদের পেলাম না।” |