|
|
|
|
রেলকর্মীদের গাফিলতিকে দুষলেন অধীরই |
অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় • ধমারাঘাট (বিহার) |
শয়ে শয়ে পুণ্যার্থী রেললাইন ধরে এগোচ্ছেন দেখেও রাজ্যরানি এক্সপ্রেস থামানোর ব্যবস্থা করেননি ধমারাঘাটের স্টেশন মাস্টার। কেন? প্রশ্ন তুলছেন রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী স্বয়ং।
সোমবার গভীর রাতে ধমারাঘাট স্টেশন চত্বর পরিদর্শন করেন অধীরবাবু। সেখানেই তিনি স্পষ্ট বলেন, দুর্ঘটনার জন্য রেলকর্মীরা তাঁদের গাফিলতির দায় এড়াতে পারেন না। খোদ রেল প্রতিমন্ত্রীরই অভিযোগ, “স্টেশন-মাস্টার, রেলকর্মী এবং পূর্ব-মধ্য রেলের কমার্শিয়াল ও সিগন্যালিং বিভাগ সঠিক ভাবে নিজেদের দায়িত্ব পালন করেনি।” তাঁর কথায়, স্টেশনে দু’টো প্যাসেঞ্জার ট্রেন দাঁড়িয়ে রয়েছে। সেগুলি থেকে শয়ে শয়ে লোক রেললাইনে নেমে পড়ছেন সে সব দেখেও রাজ্যরানি এক্সপ্রেস থামানোর চেষ্টা করেননি স্টেশন মাস্টার। উনি চাইলে আগেভাগেই ট্রেনটিকে স্টেশনের হোম সিগন্যালের লাল আলোয় থামাতে পারতেন।
অধীরবাবুর বক্তব্য, প্রতি বছর শ্রাবণ মাসে এই সময়ে ধমারাঘাটে প্রচুর ভক্ত সমাগম হয়। তা আগে থেকে জানায়নি রেলের কমার্শিয়াল বিভাগ। বিষয়টি জানা থাকলে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় বসত রেল কর্তৃপক্ষই। রাজ্য সরকারের উদাসীনতাকেও দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করেছেন রেল প্রতিমন্ত্রী। অধীরবাবু বলেন, “ভক্তদের ভিড়ের বিষয়ে রেলকে আগে থেকে সতর্ক করেনি জেলা বা রাজ্য প্রশাসন। আগাম খবর থাকলে পদক্ষেপ করা যেত।”
সোমবার রাত তিনটে নাগাদ খগরিয়ার ধমারাঘাটে পৌঁছয় কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর বিশেষ ট্রেন। বিক্ষোভকারীরা সিগন্যাল ব্যবস্থার যন্ত্রপাতি ভেঙে দেওয়ায় রেল লাইনের পাশে সব আলোই লাল। জলা-জঙ্গলে ঘেরা অন্ধকার এলাকায় ৪৫ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকে রেল প্রতিমন্ত্রীর ‘স্পেশ্যাল ট্রেন’। স্টেশন থেকে হেঁটে এসে চালক ও গার্ডকে লিখিত ‘সিগন্যাল ক্লিয়ারেন্স’ দেন এক রেলকর্মী। তারপরই ফের এগোয় ট্রেনটি। মন্ত্রীর জন্য ততক্ষণে জেনারেটর চালিয়ে সার্চ লাইটের ব্যবস্থা হয়েছে স্টেশন চত্বরে। |
|
আহতদের পাশে রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক। |
জেনারেটরের সেই আলোয় ভাঙাচোরা খেলনার মতো দেখতে লাগছিল রাজ্যরানি এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনটাকে। টুকরো-টুকরো হয়ে ছড়িয়ে রয়েছে চালকের কেবিনের যন্ত্রপাতি। পুড়ে যাওয়া কামরাগুলি থেকে তখনও ধোঁয়া বের হচ্ছে। বাতাসে কটু গন্ধ। পাশের লাইনেই সমস্তিপুর-সহর্ষ প্যাসেঞ্জারের পোড়া কঙ্কাল। স্টেশন মাস্টারের ঘরের জিনিসপত্র, টেলিফোন, অবিক্রীত টিকিট পড়ে রয়েছে প্ল্যাটফর্মে, রেললাইনে। অন্ধকারে কিছুটা দূরে গাছগাছালির আড়ালে জনশূন্য কাত্যায়নী মন্দিরের সাদা চূড়া।
রেলের পরিভাষায় দেশের সবচেয়ে ছোট স্টেশনগুলি ‘রোড-সাইড স্টেশন’ নামে পরিচিত। ধমারাঘাটের আয়তন তার চেয়ে সামান্যই বড়। একটিমাত্র নিচু প্ল্যাটফর্ম। বাঁধানো নয়। ওভারব্রিজ নেই, ‘পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেম’-ও নেই স্টেশনে। রেল আধিকারিকরা জানান, দিনে গড়ে স্বল্প দূরত্বের ৬০০-৭০০ টিকিট বিক্রি হয় সেখানে। কিন্তু পূর্ব-মধ্য রেল কর্তৃপক্ষ দুর্ঘটনার যে রকম ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সরেজমিন পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার পরে তা আর ধোপে টেকেনি। স্টেশনে দাঁড়িয়েই পূর্ব-মধ্য রেলের জেনারেল ম্যানেজারকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করে অধীরবাবু বলেন, “টিকিট বিক্রির উপরেই স্টেশনের উন্নয়ন নির্ভর করে, সেটা আমিও মানি। কিন্তু কোন স্টেশনের গুরুত্ব কতটা তা-ও মনে রাখতে হবে। প্ল্যাটফর্ম নেই, যাত্রীরা রেললাইন ছাড়া নামবেন কোথায়?” রেলের উচ্চপদস্থ অফিসারকে মন্ত্রী বলেন, “এত পুণ্যার্থী প্রতি বছর যাতায়াত করেন। তা-ও আপনারা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেননি। এত দিন দুর্ঘটনা হয়নি, এখন হল। এতগুলো লোক মারা গেল। দু’টো ট্রেনও পুড়ল।” ধমারাঘাট থেকে রওনা দেওয়ার আগে রেল প্রতিমন্ত্রী নির্দেশ দেন, যত দ্রুত সম্ভব এখানে প্ল্যাটফর্ম, ওভারব্রিজ এবং ঘোষণা-যন্ত্রের ব্যবস্থা করতে হবে। দুর্ঘটনা নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গড়ে দ্রুত রিপোর্ট জমা দেওয়ারও নির্দেশ দিয়ে যান তিনি।
স্টেশন পরিদর্শনের পর খগরিয়ার হাসপাতালে যান অধীরবাবু। কথা বলেন আহতদের পরিজনদের সঙ্গে। রেলের তরফে অনুদানের চেকও তাঁদের হাতে তুলে দেন তিনি। রেল সূত্রের খবর, ‘সেলুন-কারে’ বসেই রেলমন্ত্রী মল্লিকার্জুন খর্গের জন্য রিপোর্ট তৈরি করেন প্রতিমন্ত্রী অধীরবাবু। আজ সকালে পটনা থেকে বিমানে দিল্লি রওনা দেন তিনি।
|
পুরনো খবর: বিহারে ট্রেনের ধাক্কায় মৃত ৩৭, ভাঙচুর-আগুন |
|
|
|
|
|