লাদাখে বায়ুসেনার হারকিউলিস নামিয়ে বৈঠকে জোর বাণিজ্যেই
পূর্ব লাদাখের পাথুরে জমিতে যখন ধুলো উড়িয়ে নামছে সুপার হারকিউলিস বিমান, তখন সবে ভোরের আলো ফুটেছে। নয়াদিল্লিতে ভারত-চিন কৌশলগত বৈঠক শুরু হতে তখনও কয়েক ঘণ্টা দেরি। যে বৈঠকের জন্য দিল্লিতে এসেছেন চিনের উপবিদেশমন্ত্রী লিউ ঝেংমিউ।
বেছে বেছে ঠিক এই দিনেই আকসাই চিনের দৌলত বেগ ওল্ডি বিমানঘাঁটিতে দেশের সব চেয়ে বেশি ভার বহনে সক্ষম বায়ুসেনা বিমানের এই অবতরণকে নয়াদিল্লির পেশি প্রদর্শন হিসেবেই দেখছেন কূটনীতিকরা। এই বিমানঘাঁটি, ফৌজি অফিসারদের মুখে ডিবিও থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে ভারত-চিন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি)। যার প্রকৃত অবস্থান নিয়ে বিবাদ রয়েছে দু’দেশের মধ্যে। গত এপ্রিলে এই বিমানঘাঁটি থেকেই কয়েক কিলোমিটার দূরে দিপসাং ভ্যালিতে ঢুকে চিনা সেনা টানা ২১ দিন বসে ছিল।
তিন বছর পর আগামী অক্টোবরে বেজিং সফরে যাবেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। তার আগে আজ দিল্লিতে দু’দেশের পঞ্চম কৌশলগত বৈঠকে ভারত সরব হলো প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় শান্তি বজায় রাখার দাবিতে। দৌলত বেগ ওল্ডিতে সুপার হারকিউলিস নামিয়ে নয়াদিল্লি বার্তা দিল, ভারতীয় সামরিক বাহিনীর অবস্থা এখন আর ১৯৬২ সালের মতো নয়। চিনকে জবাব দিতে ভারতও তৈরি। একই দিনে ব্রুনেইয়ে চিনের বাণিজ্যমন্ত্রী গাও হুচেংয়ের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়ানো নিয়ে বৈঠক করলেন ভারতের বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী আনন্দ শর্মা।
কূটনীতিকরা বলছেন, শক্তি প্রদর্শনে পিছপা না হলেও সীমান্তে শান্তি বজায় রেখে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়াতেই আগ্রহী ভারত। যে কারণে দিপসাং ভ্যালিতে চিনা সেনাদের দিকে ২১ দিনে ১টি গুলিও ছোড়া হয়নি। কিন্তু ভারত ইতিবাচক পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করলেও পরের পর সেনা অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটেই চলেছে। তাই নরমে-গরমে চলার নীতি নিয়ে চলছে ভারত। এবং সে কারণেই আজ দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের মুখেই সুপার হারকিউলিসকে নামানো হলো ডিবিও-র হিমেল জমিতে। ১৬ হাজার ৬১৪ ফুট উচ্চতায় এটি বিশ্বের সব চেয়ে উঁচু বিমানঘাঁটি।
চিনের সঙ্গে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার অদূরে লাদাখে বিশ্বের উচ্চতম বিমানঘাঁটি দৌলত বেগ ওল্ডিতে
নামছে বায়ুসেনার সব চেয়ে বেশি ভার বহনে সক্ষম সুপার হারকিউলিস। ছবি বায়ুসেনার সৌজন্যে।
বাষট্টি সালে ভারত-চিন যুদ্ধের সময় তৈরি হয়েছিল এই বিমানঘাঁটি। বছর তিনেক ব্যবহার হয়। তার পর থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল এটি। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে চিনের রণংদেহি মনোভাবের জবাব হিসেবে নতুন করে এর পুনর্গঠনের কাজ শুরু করে সেনাবাহিনী ও বায়ুসেনা। ৪৩ বছর পরে ফের এএন-৩২ বিমান মাটি ছোঁয় ডিবিও-র। ওঠানামা করেছে হেলিকপ্টারও। এ বার সি-১৩০ জে সুপার হারকিউলিস। একসঙ্গে ২০ টন রসদ নিয়ে উড়তে পারে এটি। প্রাক্তন এয়ার মার্শাল প্রণব বরবরার কথায়, “ওই এলাকায় সেনা জওয়ানদের কাছে রসদ ও উপকরণ পৌঁছে দিতে বায়ুসেনার বিমানই ভরসা। এএন-৩২ দশ বারে যে রসদ নিয়ে যাবে, হারকিউসিল এক বারেই তা করে দেবে। আর যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে বুঝতেই পারছেন, কী কী নিয়ে যাওয়া সম্ভব। ৪৩ বছর আগেই এর দরকার ছিল। সীমান্তের ও পারে এর ফলে কড়া বার্তা যাবে।” একই মত প্রাক্তন বায়ুসেনা প্রধান ফালি হোমি মেজরের। সকলেই বলছেন, প্রয়োজনে ভারত যে চিন সীমান্তে আগুন ঝরাতে পারে, এখন তা প্রমাণিত।
সেনা-কর্তারা বলছেন, ডিবিও-র মতো উচ্চতায়, আবহাওয়ার মেজাজ-মর্জি সামলে হারকিউলিসের এই মসৃণ অবতরণ জওয়ানদেরও মনোবল বাড়াবে। প্রাক্তন লেফটেন্যান্ট জেনারেল ডি বি শেখাতকারের কথায়, “ঘটনাটি গুরুত্বপূর্ণ তিন ভাবে। এক, আমরা কত দ্রুত সেনার জন্য রসদ পৌঁছতে পারি, তার প্রমাণ মিললো। দুই, ডিবিও বিতর্কিত এলাকার একেবারে গা ঘেঁষে অবস্থিত। তিন, স্পষ্ট বার্তা গেল যে, আমাদের বাহিনী আর ১৯৬২-র দশায় নেই। ভারতকে আর উপেক্ষা করা সম্ভব নয়।”
সুপার হারকিউলিস কাল শেষরাতে মাটি ছাড়ে দিল্লির কাছে হিন্ডন বায়ুসেনা ঘাঁটি থেকে। সরাসরি উড়ে গিয়ে নামে ডিবিও-তে। চালকের আসনে ছিলেন তেজবীর সিংহ, বিশেষ অভিযানের জন্য তৈরি ‘ভেইল্ড ভাইপার’ স্কোয়াড্রনের প্রধান।
বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী আনন্দ শর্মার সঙ্গে চিনের বাণিজ্যমন্ত্রী গাও হুচেং। ব্রুনেইয়ে দ্বিপাক্ষিক
বাণিজ্য-সম্পর্ক বাড়ানো নিয়ে কথা বলেন দু’জনে। মঙ্গলবার। পিটিআইয়ের তোলা ছবি।
প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় পেশিশক্তির প্রমাণ দিলেও নয়াদিল্লিতে কিন্তু আজ কূটনৈতিক ভারসাম্য বজায় রেখেই চিনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক মজবুত করার দিকে জোর দিয়েছে ভারত। গত মে মাসে চিনের প্রধানমন্ত্রী লি খ্যছিয়াং নয়াদিল্লিতে এসে জানিয়ে গিয়েছিলেন, ভারতীয় পণ্যের জন্য চিনের বাজারকে আরও বেশি করে খুলে দিতে এ বার সক্রিয় হবেন তাঁরা। নতুন বিদেশসচিব সুজাতা সিংহের সঙ্গে চিনের উপবিদেশমন্ত্রীর আলোচনা ও আনন্দ শর্মার সঙ্গে সে দেশের বাণিজ্যমন্ত্রীর বৈঠক দুই ক্ষেত্রেই ভারতের বার্তা ছিল সীমান্তের নিরাপত্তা নিয়ে আপস করা হবে না, তবে বেজিং-দিল্লি সীমান্ত-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর উপরেই জোর দিচ্ছে ভারত।
বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, দু’দেশের মধ্যে বয়ে যাওয়া নদীগুলিকে আরও বেশি করে কাজে লাগানো নিয়েও এ দিন কথা হয়েছে নয়াদিল্লিতে। সেই বৈঠকে লাদাখে পিপলস লিবারেশন আর্মির ঘাঁটি গেড়ে থাকা নিয়ে সদুত্তর না পাওয়া, চুমার পোস্ট এলাকায় ঢুকে নজরদারি ক্যামেরা উপড়ে নিয়ে যাওয়ার (পরে তা ফেরত দিয়েছে চিন) মতো ঘটনা নিয়ে ভারতের উদ্বেগের কথা উল্লেখ করা হলেও এটা-ও স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে যে, কূটনৈতিক আলোচনাতেই ভারত এ সব সমস্যা মেটাতে চায়।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.