|
|
|
|
সংসদে বিল স্থগিত, তবু ৩ রাজ্যে চালু খাদ্য সুরক্ষা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
বিরোধীদের হট্টগোলে সংসদে আজও পাশ হল না খাদ্য সুরক্ষা বিল। শেষ পর্যন্ত তা কবে হবে, তা-ও এখন ঝাপসা। তবু ভোটের আগে আনুষ্ঠানিক ভাবে খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্প শুরু করার ব্যাপারে লগ্নভ্রষ্ট হল না কংগ্রেস। বরং গরিবি হঠানোর প্রশ্নে রাজীব গাঁধীর স্মৃতি উস্কে আজ তাঁর জন্মতিথিতেই দিল্লিতে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের সূচনা করে দিলেন সনিয়া গাঁধী। একই দিনে কংগ্রেস শাসিত হরিয়ানা ও অরুণাচল প্রদেশও এই প্রকল্প শুরু করে দিল। খাদ্যের অধিকারকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়ার অঙ্গীকার বাস্তবায়নের মাধ্যমে সনিয়া বার্তা দিতে চাইলেন দেশের ৬৭ শতাংশ জনসংখ্যাকে। তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে একই মঞ্চ থেকে বিজেপি-র সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন কেন্দ্রীয় খাদ্যমন্ত্রী কে ভি টমাস। খাদ্য সুরক্ষা বিলে বিরোধিতার জন্য তিনি মোদীকেই কাঠগড়ায় তুললেন।
দিল্লির তালকাটোরা স্টেডিয়ামে আজ এই অনুষ্ঠান মঞ্চের ছবিতেই বস্তুত ধরা রইল লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের প্রচার কৌশলের একটি দিক। খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পকে তুরুপের তাস করে এক দিকে যেমন গ্রাম ও গরিবের আস্থা পেতে চাইছে কংগ্রেস, তেমনই প্রকল্পে বিরোধিতার প্রশ্নটি তুলে মোদীকে গরিব-বিরোধী হিসেবে প্রতিপন্ন করতেও সক্রিয় দলের নেতারা। সে জন্য গুজরাতে অপুষ্টি এবং অনাহারের পরিসংখ্যানও তুলে ধরার পথেই হাঁটবে কংগ্রেস।
এই কৌশলের পাল্টা দিতে তৈরি বিজেপিও। তালকাটোরা স্টেডিয়ামে সনিয়া আজ যখন প্রকল্পের সূচনা করেছেন, তখন বাইরে বিক্ষোভ দেখান বিজেপি কর্মীরা। অভিযোগ, উপভোক্তা তালিকা তৈরি না করেই খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্প রূপায়ণে নেমেছে কংগ্রেস। |
|
মঙ্গলবার রাজীব গাঁধী সদ্ভাবনা পুরস্কারের মঞ্চে সনিয়া গাঁধী ও মনমোহন
সিংহ। রয়েছেন উস্তাদ আমজাদ আলি খানও। ছবি: প্রেম সিংহ। |
বিজেপির এই বিক্ষোভ অবশ্য স্পর্শ করেনি সনিয়াকে। এমনকী খাদ্য বিল নিয়ে সংসদে দেরির জন্য বিরোধীদের প্রসঙ্গও তোলেননি তিনি। তুলেছেন রাজীব গাঁধীর প্রসঙ্গ। তাঁর কথায়, “দারিদ্রের ছবিটা খুব কাছ থেকে দেখেছেন রাজীব গাঁধী। তাঁদের জন্য কষ্ট পেয়েছেন। গরিব মানুষের ক্ষমতায়ন তাঁর স্বপ্ন ছিল। ইউপিএ সরকার তাঁর সেই স্বপ্ন পূরণের পথেই হেঁটেছে।” আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকল্প সূচনা করে সনিয়া বলেন, “দেশের বহু মানুষ এখনও দু’বেলা দু’মুঠো খেতে পান না। তাঁদের সন্তানরা অপুষ্টিতে ভুগছে। তাঁদের মুখে খাদ্য তুলে দিতে সরকার বদ্ধপরিকর।”
সনিয়ার এই আবেগের পাশাপাশি আজ দেখা গিয়েছে কে ভি টমাসের আগ্রাসনও। গত কয়েক দিন ধরে খাদ্য সুরক্ষা বিল নিয়ে কখনও প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে, কখনও অকংগ্রেসি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের চিঠি লিখে চলেছেন মোদী। আজ সেই প্রসঙ্গ তুলে টমাস বলেন, “এর আগে যখন খাদ্য বিল নিয়ে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর মত চাওয়া হয়েছিল, তখন কেন নীরব ছিলেন তিনি? আসলে খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্প রূপায়ণের প্রক্রিয়ায় দেরি করাতে চাইছেন মোদী।”
হরিয়ানা এবং অরুণাচল প্রদেশও আজ খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্প রূপায়ণ শুরু করেছে। এই প্রকল্পের আওতায় গরিব পরিবারগুলি মাসে মাথা পিছু ৫ কেজি করে খাদ্য শস্য পাবে। গর্ভবতী মহিলা ও সন্তান প্রসবের পর ছ’মাস পর্যন্ত মহিলাদের খাদ্য শস্য সরবরাহ করবে সরকার। আবার ৬ মাস থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের পুষ্টিকর রান্না করা খাবার সরবরাহ করা হবে। এই নিয়মের অতিরিক্ত ভর্তুকি মূল্যে ডাল সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে হরিয়ানা।
খাদ্য সুরক্ষা নিয়ে এই রাজনীতির সমান্তরালে এ-ও বাস্তব যে, বিলটি আজও সংসদে পাশ করাতে পারেনি সরকার। লোকসভার প্রশ্নোত্তর পর্ব স্থগিত করে খাদ্য বিলটি পাশের জন্য সরকার আজ তৎপর হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু বামেরা পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির বিরোধিতায় স্লোগান তুলে সভা অচল করে দেন। কয়লা খনি বণ্টনের ফাইল উধাওয়ের ঘটনা নিয়ে শোরগোল ফেলে দেয় বিজেপিও। ফলে দফায় দফায় মুলতুবি হয়ে যায় লোকসভা।
সরকারের তরফে বলা হচ্ছে, বৃহস্পতিবার ফের লোকসভায় বিলটি পাশ করানোর চেষ্টা হবে। বর্তমান বিলে দশটি সংশোধনের প্রস্তাবও আনবে সরকার। প্রসঙ্গত, খাদ্য সুরক্ষা অর্ডিন্যান্স জারি করে কয়েকটি রাজ্যের জন্য খাদ্য শস্য বরাদ্দের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছিল কেন্দ্র। কিন্তু সংশোধনী এনে তা শুধরোতে চাইছে সরকার। এমনকী নয়া সংশোধনীতে পশ্চিমবঙ্গের জন্য বরাদ্দ খাদ্যশস্যের পরিমাণ আড়াই লক্ষ টন বাড়ানোর প্রস্তাবও রাখা হয়েছে।
কেন্দ্রের এই সক্রিয়তাকে সামনে রেখে বিলটি নিয়ে সক্রিয় হল পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস। এ দিন বিলের সমর্থনে এক মিছিলের শেষে দলের নেতা মানস ভুঁইয়া বলেন, “কংগ্রেস মানুষকে কাজ, শিক্ষার অধিকার দিয়েছে। এ বার খাদ্যের অধিকার দিতে চলেছে। অথচ তৃণমূল বিভিন্ন ভঙ্গিতে বিরোধিতা করছে। বিজেপি-সিপিএম সংসদে গণ্ডগোল করে বিল পাশ পণ্ড করতে চাইছে।”
|
পুরনো খবর: রাজীবের জন্মদিনেই খাদ্য বিল পাশ করাতে মরিয়া সনিয়ারা |
|
|
|
|
|