পরিষেবায় সন্তুষ্ট না-হলে এ বার খাস কলকাতার রান্নার গ্যাস গ্রাহকেরাও অপছন্দের সংস্থা ও ডিস্ট্রিবিউটর বদলে ফেলার সুযোগ পাবেন। ঠিক মোবাইল ফোনের মতো। তেল সংস্থা সূত্রের খবর, মন্ত্রকের সায় পেলে চলতি মাসেই সেই সুবিধা (ইন্টার পোর্টেবিলিটি) চালু হয়ে যাবে। এ জন্য ইন্ডিয়ান অয়েল (আইওসি), হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়াম (এইচপি) এবং ভারত পেট্রোলিয়াম (বিপি) গাঁটছড়া বেঁধেছে।
ঠিক মতো পরিষেবা না-পেলেও এত দিন সংস্থা বা ডিস্ট্রিবিউটর বদলের সুযোগ ছিল না। ফলে রান্নার গাস পেতে হয়রানি হলেও গ্রাহকের কিছু করার ছিল না। জানুয়ারিতে কেন্দ্র একই সংস্থার গ্রাহকদের ডিস্ট্রিবিউটর বদলের সুযোগ প্রথম চালু করে চণ্ডীগড়ে। এর পর চেন্নাইয়ের একাংশেও তা চালু হয়। কেন্দ্রের দাবি, এর ফলে গোটা ব্যবস্থা আরও স্বচ্ছ হবে। প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে সংস্থা ও ডিস্ট্রিবিউটরদের পরিষেবার মানও উন্নত হবে। ইতিমধ্যেই পরিষেবার মানের ভিত্তিতে ডিস্ট্রিবিউটরদের ‘স্টার রেটিং’ ব্যবস্থাও চালু হয়েছে।
তবে গ্রাহকদের এই সুবিধা পেতে একই এলাকায় একাধিক ডিস্ট্রিবিউটর থাকা জরুরি (শিল্পের পরিভাষায় ওভারল্যাপিং)। আইওসি-র ক্ষেত্রে এটা সম্ভব হলেও অন্য দুই সংস্থার ক্ষেত্রে ডিস্ট্রিবিউটর কম হওয়ায় সমস্যা ছিল। সে জন্য তিনটি সংস্থা মিলে এক একটি এলাকা (ক্লাস্টার) তৈরি করেছে। আইওসি-র ডিজিএম (এলপিজি) রবীন্দ্রনাথ ঘোষ জানান, কলকাতায়ও এই সুবিধা চালু হবে শীঘ্রই। তিনটি সংস্থা এ জন্য বৈঠকে বসে প্রয়োজনীয় খুঁটিনাটি খতিয়ে দেখেছে। এইচপি এবং বিপি-ও জানিয়েছে, কেন্দ্রের নির্দেশ পেলেই এই ব্যবস্থা চালু করতে প্রস্তুত তারাও।
সংস্থা এক থাকলে ডিস্ট্রিবিউটর বদলের ক্ষেত্রে ততটা সমস্যা নেই। কারণ সে ক্ষেত্রে গ্যাস সিলিন্ডার ফেরত দেওয়ার সমস্যা নেই। কিন্তু সংস্থা আলাদা হলে সিলিন্ডার ফেরত কী ভাবে নেওয়া হবে, তা নিয়েই কিছুটা জটিলতা ছিল। তিন সংস্থা আলোচনার মাধ্যমে তার সমাধানসূত্র বার করায় এখন আর সংস্থা বদলের ক্ষেত্রেও সমস্যা হবে না।
এই সুবিধা চালুর জন্য কলকাতাকে ১০টি অঞ্চলে (ক্লাস্টার) ভাগ করে নিয়েছে ওই তিন সংস্থা। একটি ক্লাস্টারে আবার কয়েকটি করে এলাকা রয়েছে। যেমন ক্লাস্টার-১-এ রয়েছে রাসবিহারী অ্যাভিনিউ, সাদার্ন অ্যাভিনিউ, ভবানীপুর, হাজরা, কালীঘাট এলাকা। সেখানে আইওসি-র ৫, এইচপি-র ২ ও বিপি-র ২ জন ডিস্ট্রিবিউটর রয়েছে। সংস্থাগুলি জানিয়েছে, ওই ক্লাস্টারের একজন গ্রাহক তালিকার যে-কোনও একজন ডিস্ট্রিবিউটরকে বেছে নিতে পারবেন।
ক্লাস্টার-২-এ মধ্যে রয়েছে আমহার্স্ট স্ট্রিট, কুমোরটুলি, শ্যামবাজার ও সংলগ্ন সি আর অ্যাভিনিউ এলাকা। সেখানে মোট ডিস্ট্রিবিউটরের সংখ্যা: আইওসি-৬, এইচপি-৬ ও বিপি-৩। ক্লাস্টার-৯-তে আছে পার্ক সার্কাস, তিলজলা, তপসিয়া, ট্যাংরা, বালিগঞ্জ। ক্লাস্টার-১০-এ রয়েছে কসবা-ঢাকুরিয়া ও সংলগ্ন এলাকা।
আপাতত সংস্থাগুলির ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইনেই অপছন্দের ডিস্ট্রিবিউটর বদলের সুযোগ দেবে তেল সংস্থাগুলি। সংশ্লিষ্ট সূত্রের মতে, সরাসরি বর্তমান ডিস্ট্রিবিউটরের কাছে গিয়ে তাঁকে ছেড়ে অন্যত্র যাওয়ার আবেদন জানালে গ্রাহককে তিনি সেই সুযোগ নাও দিতে পারেন। তাই সরাসরি গ্রাহকের পছন্দ-অপছন্দ নিজেরাই জেনে নিয়ে সেই মতো ব্যবস্থা নিতে চায় তেল সংস্থাগুলি। তেল মন্ত্রকের ছাড়পত্র পেলে সংস্থা একই রেখেও ডিস্ট্রিবিউটর বদলের (ইন্ট্রা পোর্টেবিলিটি) সুযোগ পাবেন গ্রাহকেরা। তবে সে ক্ষেত্রে একই এলাকায় আইওসি-র ডিস্ট্রিবিউটরের সংখ্যা বেশি হলে সেই সংস্থার গ্রাহকেরা যতটা সুবিধা পাবেন, এইচপি বা বিপি-র ক্ষেত্রে ততটা না-ও পেতে পারেন। কারণ অনেক জায়গায় তাঁদের ডিস্ট্রিবিউটরের সংখ্যা কম।
গ্যাস সংস্থা একই রেখে ডিস্ট্রিবিউটর বদলের পদ্ধতি: প্রথমে সংশ্লিষ্ট সংস্থার ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশন করানোর পরে ওয়েবসাইট থেকেই পছন্দের নতুন ডিস্ট্রিবিউটরকে চিহ্নিত করতে হবে। এরপর গ্যাস সংস্থাটি বর্তমান ডিস্ট্রিবিউটরের কাছে ই-মেল পাঠিয়ে জানাবে, গ্রাহক ডিস্ট্রিবিউটর বদল করতে চান। গ্রাহককে বোঝানোর জন্য বর্তমান ডিস্ট্রিবিউটর ৭২ ঘণ্টা সময় পাবেন। তার মধ্যে গ্রাহক ডিস্ট্রিবিউটরের আশ্বাসে সন্তুষ্ট না-হলে গ্যাস সংস্থার সংশ্লিষ্ট ফিল্ড অফিসার ও নতুন ডিস্ট্রিবিউটরের কাছে গ্রাহকের আর্জি জানিয়ে ই-মেল পাঠাবে সংস্থাটি। তার পর তেল সংস্থা নিজেই পুরনো ডিস্ট্রিবিউটরের কাছ থেকে ‘টাউন ট্রান্সফার ভাউচার’ (টিটিভি) নিয়ে গ্রাহককে ই-মেল পাঠিয়ে জানাবে নথিপত্র তৈরি, সেগুলি নিয়ে যেতে পারেন তিনি। গ্রাহককে নতুন ডিস্ট্রিবিউটরের কাছ থেকে সেগুলি সংগ্রহ করে পুরনো নথিপত্র সেখানেই জমা দিতে হবে। তারপরই তাঁর সংযোগ চালু হয়ে যাবে।
গ্যাস সংস্থা ও ডিস্ট্রিবিউটর, দু’টিই বদলের পদ্ধতি: এ ক্ষেত্রেও অনলাইনেই গ্রাহককে রেজিস্ট্রেশন করানোর পরে সংস্থা ও ডিস্ট্রিবিউটর বদলের আর্জি জানাতে হবে। বর্তমানে তিনি যে-সংস্থার গ্রাহক, তাদের ওয়েবসাইট-এর ক্লাস্টারের তালিকা থেকে অন্য সংস্থার ডিস্ট্রিবিউটর পছন্দ করবেন। সে ক্ষেত্রেও গ্রাহককে বোঝানোর জন্য ৭২ ঘণ্টাই মিলবে। তারপর গ্রাহক বর্তমান সংস্থার কাছ থেকে ই-মেল পাবেন যে, তিনি ডিস্ট্রিবিউটরকে সিলিন্ডার ও রেগুলেটর-সহ নথিপত্র জমা দিয়ে ট্রান্সফার ভাউচার নিয়ে যেতে পারেন। ওই সব নথি নিয়ে নতুন সংস্থা ও ডিস্ট্রিবিউটরের কাছে আবেদন জানাতে গ্রাহক ৩০ দিন সময় পাবেন।
|