পটের গ্রাম নয়া এ বার পর্যটনে ‘মডেল’
টশিল্পে প্রসিদ্ধ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার নয়া গ্রামকে ‘মডেল’ করে সেখানে দেশি-বিদেশি পর্যটক টানতে উদ্যোগী হল জেলা প্রশাসন। ইতিমধ্যেই ওই প্রকল্পে রাজ্য পর্যটন দফতর ৬ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা মঞ্জুর করেছে। প্রশাসনিক কর্তাদের আশা, কাজ শেষ হলে বাড়বে দেশি-বিদেশি পর্যটক সংখ্যা। স্বাভাবিক ভাবেই লাভবান হবেন গ্রামের শিল্পীরা।
পিংলা ব্লকের নয়া গ্রামে ৬৫টি পরিবারের বসবাস। তাঁরা সকলেই পট তৈরির সঙ্গে যুক্ত। আর তার টানেই দেশ-বিদেশের বহু মানুষ ওই গ্রামে আসেন। পর্যটন দফতরের অর্থানুকূল্যে এ বার সেই গ্রামটিকেই আগাগোড়া বদলে ফেলতে চাইছে প্রশাসন। যেমনটি হয়েছিল কেরালার কোঝিকোড়ের সারগালাইয়া বা ওড়িশার রঘুরাজপুরে। এ বার তেমনই হবে নয়া গ্রামে। গ্রামবাসীর সঙ্গে এ নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশাসনের বৈঠক হয়েছে। গ্রামের মানুষও চান, দ্রুত গতিতে উন্নয়ন শুরু হোক।
কী ভাবে হবে উন্নয়ন? অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) সুমন ঘোষ বলেন, “সরকারি খরচে নয়া গ্রামের প্রতিটি বাড়ি একই ধাঁচে করে দেওয়া হবে। আদ্যন্ত সংস্কার করা হবে পানীয় জল, নিকাশি ব্যবস্থার।” এমন প্রস্তাবে বেজায় খুশি গ্রামের মানুষ। রহিম চিত্রকর, বাহাদুর চিত্রকরেরা বলেন, “এমনটা হলে এলাকার সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে। তাই আমরাও চাই দ্রুত কাজ হোক।”
শিল্পের টানে গ্রামে ভিড় করেন বিদেশিরাও। —ফাইল ছবি।
জানা দিয়েছে, নয়া গ্রামের ৬৫টি শিল্পী পরিবারের জন্য ৩০০ বর্গফুটের বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হবে। শুধু তাই নয় সেগুলি হবে একই রকম দেখতে। যদি কোনও ব্যক্তির ৩০০ বর্গফুট বাড়ি তৈরির জন্য নিজের জমি না থাকে সেক্ষেত্রে যে টুকু জমি রয়েছে সেখানেই বাড়ি করে দেওয়া হবে। পানীয় জলের জন্য ২টি সাব-মার্সিবল পাম্প বসানো হবে। ২টি ওভার হেড জলাধার তৈরি হবে। থাকবে পাইপ লাইনে জল সরবরাহের ব্যবস্থাও। তা ছাড়াও, পর্যটক আকর্ষণে রাস্তা ও নিকাশিনালা তৈরি করা হবে। গ্রামের পুকুরকে, বাগানকে সাজিয়ে তোলা হবে। নয়া গ্রামে ঢোকার মূল রাস্তায় থাকবে একটি বড় গেট। তা ছাড়াও আরও ২টি গেট করা হবে। শুধু তাই নয়, দেশি-বিদেশি পর্যটকদের থাকার জন্য আলাদা একটি কেন্দ্র তৈরি করা হবে। সেখানে আন্তর্জাতিক মানের সমস্ত সুযোগ সুবিধা থাকবে। করা হবে একটি মিউজিয়ামও। এক কথায়, গ্রামটিকে সাজানো ছবির মতো করে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে প্রশাসন।
আগে পটুয়া বলতে সাধারণত বোঝাত এমন এক সম্প্রদায়, যাঁদের জীবিকা ছিল ভিক্ষাবৃত্তি। তাঁরা ধর্মীয় ভাবাবেগকে সামনে রেখে পট আঁকতেন। যেমন, রাম-রাবণের যুদ্ধ বা সীতার বনবাস। বিষয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তৈরি হত সেই গান। লম্বা সেই পট খুলতে খুলতে গান গেয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়াতেন পটুয়ারা। তা দেখে চাল, আলু বা পয়সা দিতেন গ্রামের মানুষ। পরবর্তীকালে সরকার বা বিভিন্ন সংস্থার সাহায্যে পটচিত্র বিদেশেও খ্যাতি লাভ করে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পটচিত্র আধুনিক রূপ পেতে থাকে। এখন শাড়ি-ব্লাউজে, পাঞ্জাবি-জুতো, এমনকী ডাইনিং টেবিল, গ্লাসেও পটচিত্র শোভা পায়। বহু বিদেশি গবেষক ভারতীয় শিল্পকলা নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে পটচিত্রে আগ্রহ দেখিয়েছেন। তাঁরা বিস্তর কষ্ট সহ্য করে দিনের পর দিন নয়া গ্রামে থাকতেন। তা ছাড়া অনেক শিল্প সচেতন মানুষও মনের টানে এই গ্রামে আসেন। সব মিলিয়ে বছরে প্রায় সাড়ে তিনশো পর্যটক এই গ্রামে আসেন বলে প্রশাসন সূত্রে খবর।
প্রশাসনিক কর্তারা মনে করছেন, যেখানে ভাল রাস্তা নেই, থাকার জায়গা নেই, সেখানে যদি এত মানুষ আসতে পারেন তা হলে ‘মডেল’ গ্রাম করে সামগ্রিক পরিকাঠামোর উন্নতি করলে সহজেই পর্যটক সংখ্যা বাড়বে। তাঁদের হিসাব, বছরে যদি ১ হাজার পর্যটক আসে এবং প্রতি জন গড়ে ১ হাজার ডলার খরচ করে তা হলেও বছরে ওই এলাকায় গড়ে সাড়ে ৫-৬ কোটি টাকার ব্যবসা হবে। আর সেই লক্ষ্যেই মডেল গ্রামের ভাবনা বলে জানিয়েছে প্রশাসন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.