প্রতারণার অভিযোগে ধৃত দুই চালকল মালিককে জেরা করল সিআইডি-র একটি বিশেষ প্রতিনিধি দল। মঙ্গলবার মন্তেশ্বর থানায় অভিজিৎ মণ্ডল ও অরিজিৎ মণ্ডল নামে সুনন্দা চালকলের দুই মালিককে জিজ্ঞাসাবাদ করে তারা।
দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সিআইডি-র তিন সদস্যের দল ধৃতদের জেরা করে। সিআইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, গত পাঁচ মাস ফেরার থাকাকালীন ওই দু’জন কোথায় কোথায় ছিলেন, কী ভাবে তাঁরা পুলিশের চোখে ধুলো দিয়েছেন সে সব জানতে চাওয়া হয়। তাঁদের কোথায় কী সম্পত্তি রয়েছে, জেরায় সে নিয়েও প্রশ্ন করা হয় বলে খবর।
সমবায় সমিতিকে ধান বিক্রি করে দাম না পাওয়ায় ২০১২ সালের শেষ দিক থেকে বারবার অবস্থান-বিক্ষোভ করছিলেন মন্তেশ্বরের জামনার প্রায় দেড়শো চাষি। সংশ্লিষ্ট সমবায়ের তরফে জানানো হয়, সুনন্দা চালকলকে ওই ধান দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু চালকলের তরফে প্রায় ৯১ লক্ষ টাকা দাম মেটানো হয়নি। তাই এই সমস্যা। চালকল মালিকদের সঙ্গে প্রশাসন বৈঠকেও বসে। শেষে বকেয়া টাকার একটি চেক প্রশাসনের হাতে তুলে দেন অরিজিৎবাবুরা। কিন্তু যে তারিখে সেটি ভাঙানোর কথা ছিল, সে দিন দেখা যায় ওই চালকল মালিকদের অ্যাকাউন্টে কোনও টাকাই নেই। এর পরেই ওই দু’জনের বিরুদ্ধে নিউ মার্কেট থানায় অভিযোগ দায়ের করে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিগম। অভিযোগ হয় মন্তেশ্বর থানাতেও। |
কালনা আদালত চত্বরে নিজস্ব চিত্র। |
পুলিশের পাশাপাশি ঘটনার তদন্তে নামে সিআইডি-ও। মার্চ থেকে ফেরার ছিলেন দু’জনই। পুলিশের দাবি, চালকল মালিকদের বাড়ি, নানা আত্মীয়দের বাড়িতে তল্লাশি চালানো হলেও দুই ভাইয়ের খোঁজ মেলেনি। বর্ধমান শহর, কাটোয়া, মন্তেশ্বর, বাঁকুড়া, আসানসোলের কালিপাহাড়ি, এমনকী ওড়িশার পারাদ্বীপেও অভিযান চালানো হয়। জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, “অভিযোগ পাওয়ার পরেই আমরা খবর পেয়েছিলাম, কলকাতার এক আইনজীবীর কাছে গিয়েছে দুই ভাই। অল্পের জন্য সে দিন সেখান থেকে তাঁদের ধরতে পারিনি আমরা।” পুলিশ সূত্রে জানা যায়, অভিজিৎবাবুরা একাধিক বার উচ্চ আদালতে জামিনের আবেদন করেছেন।
পুলিশ আরও জানায়, তাঁদের অবস্থান যাতে বোঝা না যায়, সে জন্য ওই দু’জন মোবাইল ব্যবহার করতেন না। নিজেদের ও আত্মীয়ের বাড়িতে পুলিশ নজর রাখছে বুঝে সে সব জায়গা মাড়াতেন না তাঁরা। টাকাপয়সা জোগানো-সহ নানা যোগাযোগের মাধ্যম ছিলেন চালকলের দু’এক জন বিশ্বস্ত কর্মী। একই জায়গায় বেশি দিন থাকতেন না অরিজিৎবাবুরা।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি কাটোয়া থেকে খণ্ডঘোষের গোপীনাথপুরে সুনন্দা চালকলের এক কর্মী সুব্রত দত্তের বাড়িতে আশ্রয় নেন অভিজিৎ ও অরিজিৎ। সেই সময়ে পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন পর্ব চলছে। বাসিন্দাদের নজরে পড়ে, গ্রামে মাঝেমধ্যে নানা রকম গাড়ি ঢুকছে। তাতে যাতায়াত করছেন অচেনা দুই মাঝবয়সী ব্যক্তি। গ্রামবাসী সন্দেহ শুরু করলে বিষয়টি পুলিশের কানে পৌঁছয়। পুলিশ খবর নিয়ে জানতে পারে, ওই দুই ব্যক্তিই পলাতক দুই চালকল মালিক। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন চালকলের আর এক কর্মী তরুণ দাস। এর পরেই পুলিশ ওই গ্রাম থেকে তাঁদের গ্রেফতার করে।
তদন্তে পুলিশ জেনেছে, শুধু চাষিদের টাকা বকেয়া রাখাই নয়, একটি ব্যাঙ্ক থেকে নেওয়া তিন কোটি টাকা ঋণও শোধ করেননি ওই দুই চালকল মালিক। ধৃতদের বাড়ি ও চালকলেও অভিযান চালানো হতে পারে বলে সিআইডি সূত্রে জানা গিয়েছে।
|