বোর্ড গঠনে ধুন্ধুমার উত্তরে
ঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন কেন্দ্র করে কোথাও বোমা ছুড়ে, কোথাও আবার ভাঙা কাচের বোতল হাতে নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটল জলপাইগুড়ি জেলায়। সোমবার দিনভর জেলার নানা প্রান্তে রাজনৈতিক সংঘর্ষ হয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে লাঠি চার্জ ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় পুলিশ। রাজগঞ্জ এবং আলিপুরদুয়ারে ঢিলে জখম হয়েছেন পুলিশকর্মীরাও।
সোমবার শিলিগুড়ি কমিশনারেট অধীন জলপাইগুড়ি জেলার ফুলবাড়ি ২ গ্রাম পঞ্চায়েতে সকাল থেকেই বোর্ড গঠন নিয়ে উত্তেজনা তৈরি হয়। ২০ আসনের এই পঞ্চায়েতে বামফ্রন্ট ১০টি আসন জেতে। তৃণমূল এবং কংগ্রেস ৫টি করে আসন পায়। কংগ্রেস-তৃণমূল যৌথ ভাবে প্রধান পদের দাবি পেশ করে।
গোলমাল জলপাইগুড়িতে। ছবি: সন্দীপ পাল।
দু’পক্ষেরই সমান সংখ্যক আসন থাকায়, লটারি করে বোর্ড গঠন শুরু হয়। লটারিতে সিপিএম প্রাধন এবং উপ প্রধান দুটি পদ পেয়ে যাওয়ার পরেই এলাকায় গোলমাল শুরু। সিপিএমের অভিযোগ, তাদের পার্টি অফিস সহ কর্মীদের মারধর করেছে তৃণমূল এবং কংগ্রেস সমর্থকরা। তৃণমূল এবং কংগ্রেসের পার্টি অফিসেও ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে।
পঞ্চায়েত অফিসের সামনে জড়ো হওয়া দু’পক্ষের সমর্থকরা পাথর ছুড়তে শুরু করলে পুলিশ লাঠি চালায় বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় তৃণমূল এবং সিপিএম উভয়পক্ষই পুলিশকে আক্রমণের নিশানা করেছে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা এলাকার বিধায়ক গৌতম দেবের অভিযোগ, “সিপিএম তৃণমূল কর্মীদের উপর হামলা করেছে আর কিছু পুলিশ দাঁড়িয়ে আমাদের কর্মীসমর্থকদের আক্রান্ত হতে দেখেছে। পুলিশ কমিশনারকে সব জানাব।” অন্য দিকে, সিপিএমের অভিযোগ গ্রাম পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনের সময়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব উপস্থিত থাকায় পুলিশ প্রশাসনের সামনেই তাদের সমর্থকদের ওপর কংগ্রেস-তৃণমূল হামলা চালিয়েছে। প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য পাল্টা অভিযোগ করেন “যে ভাবে রাজ্য সরকারের এক জন মন্ত্রীর উপস্থিতিতে ফুলবাড়িতে বাম সমর্থকদের উপরে হামলা হয়েছে, তা গণতন্ত্রকে কলঙ্কিত করেছে। পুলিশ প্রশাসন নিরপেক্ষ আচরণ করেনি। পুলিশের সামনেই বামেদের উপর হামলা হয়েছে।”
ময়নাগুড়িতে ইটের আঘাতে জখম তৃণমূল কংগ্রেসের এক সমর্থক। ছবিটি তুলেছেন দীপঙ্কর ঘটক।
শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার কে জয়রামন বলেন, “পুলিশ কর্তব্যপালন করেছে। যদি কারও কোনও অভিযোগ থাকে তা জানালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশের কারও গাফিলতি থাকলেও বিভাগীয় তদন্ত করা হবে।”
সংঘের্ষে বোমাবাজির অভিযোগ উঠেছে রাজগঞ্জের কুকরজান এলাকায়। কুকুরজান গ্রাম পঞ্চায়েতে বাম এবং তৃণমূল সমান সংখ্যক আসন পায়। পঞ্চায়েত অফিসে প্রধান পদের জন্য লটারি শুরু হতেই এলাকায় তৃণমূল ও সিপিএম সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। পাথরের আঘাতে তিন পুলিশ কর্মী জখম হন। লাঠি চালিয়েও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় তিন রাউন্ড কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় পুলিশ। রাজগঞ্জ থানার ওসি সনাতন সিংহের হেলমেটও পাথরের আঘাতে ভেঙে যায়। লটারিতে তৃণমূল প্রধান পদ পায়। উপপ্রধান সিপিএমের।
ময়নাগুড়ির দোমহনী ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতে বামেরা তৃণমূলের থেকে একটি আসন বেশি পেলেও, তৃণমূলের কর্মী সমর্থকরা বাম সদস্যদের অফিসে ঢুকতে দেয়নি বলে অভিযোগ। এ দিন বোর্ড গঠনের আগে তৃণমূল সমর্থকরা পুলিশ কর্মীদের সামনেই লাঠি, লোহার রড নিয়ে বামেদের উপর চড়াও হয় বলে অভিযোগ। তৃণমূলের অভিযোগ, বামেরাই এ দিন তাদের উপর হামলা চালিয়েছে। সংঘর্ষে তাঁদের এক জনের মাথা ফেটেছে। অন্য দিকে, তৃণমূল সমর্থকরা লাঠি, রড, নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেও পুলিশ সরানোর ব্যবস্থা না নেওয়ায় ছয় বাম নির্বাচিত সদস্য শপথ নিতে যেতে পারেননি বলে সিপিএমের অভিযোগ। বিরোধীশূন্য পঞ্চায়েতে তৃণমূলের ৫ সদস্যের মধ্য থেকে প্রধান ও উপ প্রধান নির্বাচিত হন।
ফুলবাড়িতে ভাঙচুর। ছবি তুলেছেন বিশ্বরূপ বসাক।
আলিপুরদুয়ার ২ ব্লকের চাপরের পাড় ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন চলাকালীন বাম সমর্থকদের সঙ্গে কংগ্রেস-তৃণমূল সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। ঢিলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের গাড়ি সহ দুটি পুলিশের গাড়ির কাচ ভেঙে যায়। পুলিশকে লক্ষ করে চকলেট বোমাও ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। ৪ রাউন্ড কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। সংঘর্ষে ঘটনায় পুলিশ ৩ জনকে আটক করে। বিকেলে বোর্ড গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হলে নির্দল প্রার্থীকে প্রধান করে বামফ্রন্ট বোর্ড গঠন করে। নির্দলকে অপহরণ করে সিপিএম লুকিয়ে রেখেছিল বলে কংগ্রেস-তৃণমূলের অভিযোগ। এ দিন বামেদের সঙ্গে নির্দল প্রার্থী গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে আসার পরেই দু’পক্ষের সংঘর্ষ বেধে যায়।
নানা সংঘর্ষের পাশাপাশি ‘বিচিত্র রাজনৈতিক জোট’ গঠনের অভিযোগ উঠেছে। কোচবিবারে তৃণমূল সদস্যকে হারিয়ে প্রধান নির্বাচিত হন বিক্ষুব্ধ সদস্য। সোমবার বক্সিরহাট ব্লকের বারকোদালি ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের এই ঘটনায় তৃণমূলের অন্দরেই চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। তৃণমূলের বক্সিরহাট ব্লক সভাপতি রথীন মণ্ডল বলেন, “দলীয় ভাবে তদন্ত করে ওই ঘটনায় জড়িত সদস্যদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” মালদহের রতুয়ায় কংগ্রেসকে বোর্ড থেকে দূরে রাখতে তৃণমূল ও সিপিএমের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে বলে রাজনৈতিক মহলে জোর জল্পনা। সোমবার রতুয়া ১-এর ত্রিশঙ্কু সামসিতে সিপিএমের ও বিলাইমারি পঞ্চায়েতে তৃণমূলের প্রধান নির্বাচিত হয়েছেন। সিপিএম অবশ্য তৃণমূলের সঙ্গে কোনও রকম সমঝোতার কথা এ দিন অস্বীকার করেছে।
একই রকম ঘটনা ঘটেছে মালদহ কোতোয়ালিতেও। সিপিএমের সঙ্গে জোট বেঁধে গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করে গনি পরিবারকে তৃণমূল রাজনৈতিক কোনঠাসা করার চেষ্টা করেছে বলে রাজনৈতিক মহলের দাবি। গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূলের প্রধান এবং সিপিএমের উপপ্রধান নিবার্চিত হয়েছেন। এই ঘটনায় জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী আবু হাসেম খান চৌধুরী বলেছেন, “মালদহে কংগ্রেসকে রুখতে তৃণমূল ও সিপিএম সব নীতি-আদর্শ বিসর্জন দিয়েছে।” তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি সাবিত্রী মিত্র বলেছেন, “তৃণমূল কংগ্রেসকে হারাতে রাজ্য জুড়ে কংগ্রেস সিপিএমের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। এ দিকে এখানে আমাদের প্রধানকে কেউ সমর্থন করলে কংগ্রেস নীতি আদর্শের কথা বলছে।” সিপিএম জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র বলেন, “দলীয় নির্দেশ উপেক্ষা করে তৃণমূল কংগ্রেসকে যাঁরা সমর্থন করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন ব্লকের রামচন্দ্রপুর গ্রামপঞ্চায়েতে বামেদের সমর্থন নিয়ে বোর্ড গঠন করেছে কংগ্রেস। ডুয়ার্সের চালসা মাটিয়ালি ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন করেছে সিপিএম এবং ঝাড়খন্ড মুক্তি জোট। বোর্ড গঠনকে কেন্দ্র করে সিপিএম ও তৃণমূল কংগ্রে কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়ায় চালসাতে। মেটেলি থানার এক এএসআই জখম বলে জানা গিয়েছে।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.