কখনও নীল, কখনও লাল বা রূপোলি আলোর রশ্মি ঠিকরে পড়ত রাজবাড়ির গম্বুজ-খিলানে। সন্ধ্যের পরে শতাব্দী পেরোনো রাজপ্রাসাদের চারপাশে তখন যেন মায়াবি পরিবেশ। নানা রঙের আলোয় রাজবাড়ি দেখে হাততালি দিয়ে উঠতেন পর্যটকেরা।
কোচবিহার রাজবাড়ির ওই আলোকসজ্জা এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বিকল হয়ে রয়েছে। প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা ব্যয় করে চিন থেকে নিয়ে আসা রাজ্য পর্যটন দফতরের বিশেষ ধরণের আলোকযন্ত্রে গত বছরের জুলাই মাসে বৃষ্টির জল ঢুকে বিকল হয়ে গিয়েছে। তারপর থেকে প্রতি সন্ধ্যায় রঙিন আলোর পরিবর্তে কোচবিহার রাজবাড়ি আলোকিত হয় শুধু সাদা আলোয়। তবে পুজোর মুখে ফের রাজবাড়ির আলোকসজ্জায় ‘রং’ ফেরাতে উদ্যোগী হয়েছে জেলা প্রশাসন।
চলতি মাসেই রাজবাড়ির আলোকসজ্জা নিয়ে সমীক্ষার কাজ শুরু হচ্ছে। এ বিষয়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরও জেলা প্রশাসনের থেকে রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “বিকল হয়ে থাকা আলো মেরামত করাই শুধু নয়, রাজবাড়িকে সামনে রেখে পর্যটক টানতে আরও বেশ কিছু পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। |
জেলা প্রশাসনের রিপোর্ট দেখে ধাপে ধাপে পদক্ষেপ করা হবে।” পুজোর আগেই রাজবাড়িকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু উদ্যোগ সম্পূর্ণ হবে বলে জানিয়েছেন জেলাশাসক মোহন গাঁধী। জেলাশাক বলেন, “পুজোর আগে নতুন করে রাজবাড়ির আলোকসজ্জা চালুর চেষ্টা হচ্ছে। আগে যাঁরা ওই আলোকসজ্জার কাজ করেছিলেন সেই সংস্থার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। কোন কোন যন্ত্রাংশ মেরামতি করা প্রয়োজন তা দেখতে সংস্থার প্রতিনিধিরা কোচবিহারে আসবেন। তাদের দ্রুত কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে।”
২০০০ সালে প্রথম কোচবিহার রাজবাড়িকে আলো দিয়ে সাজিয়ে তোলা হয়। পাঁচ বছরের মধ্যে সাদা আলোর সেই সাজ বিকল হয়ে পড়ে। এর পরে ২০০৯ সালে রাজ্য পর্যটন দফতর প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা খরচ করে বাহারি আলোকসজ্জা তৈরি করে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় এক ঘণ্টার জন্য লাল, নীল, বেগুনি থেকে রুপোলি নানা রঙের আলোয় রাজবাড়ি দেখতে পর্যটকদের মধ্যেও বাড়তি উৎসাহ তৈরি হয়েছিল। বছরখানেক ধরে সেই আলোকসজ্জা বিকল হয়ে থাকলেও কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। সম্প্রতি, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর থেকে রিপোর্ট চেয়ে পাঠানোর পরেই নতুন করে উদ্যোগ শুরু হয়েছে ।
আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষের একটি সূত্রের দাবি, চিন থেকে আনা ওই আলোকসজ্জার একাধিক যন্ত্রাংশ খোলা বাজারে পাওয়া না যাওয়াতেই মেরামতি সম্ভব হয়নি। সংস্থার কলকাতা সার্কেলের অধীক্ষক অশোক পটেল অবশ্য বলেন, “সদ্য দায়িত্ব নিয়েছি। বিশদে খোঁজ না নিয়ে কিছু বলা মুশকিল। তবে কোচবিহার রাজবাড়ির আকর্ষন বাড়াতে যে কোন উদ্যোগে সহযোগিতা করা হবে।” কোচবিহার হেরিটেজ সোসাইটির সম্পাদক অরুপজ্যোতি মজুমদার বলেন, “নিঃসন্দেহে ভাল খবর। তবে ওই পরিকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে আরও গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ।” |