অন্যান্যবার যেমন হয় তা আর হল না। বনধ দিনের চেনা ছবিটা পাল্টে গেল। শহরের সমস্ত দোকানপাট খুলে বন্ধ প্রত্যাহার করলেন আম জনতা। চলল বিভিন্ন রুটের সিটি অটো, বাস-সহ সমস্ত গাড়ি।
একটা কথা চালু রয়েছে শিলিগুড়িতে। তা হল, যে কেউ ডাকলেই না কি বনধ হয় এই শহরে! এ দিনে তা হল না। সোমবার পাহাড়ের বনধ এবং আলাদা রাজ্যের দাবি নিয়ে মোর্চার আন্দোলনের বিরোধিতায় শিলিগুড়িতে বাংলা ভাষা বাঁচাও কমিটির ডাকা বনধ ব্যর্থ হল। যা দেখে বন্ধের উদ্যোক্তো এবং সমর্থকরা কার্যত গা ঢাকা দেন বলে পুলিশের দাবি। তাদের কাউকেই রাস্তায় নেমে বনধ পালন করতে দেখা যায়নি।
এর জন্য শহরের ব্যবসায়ী বাসিন্দাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। পাহাড়ে বনধ বা সমতলে তার বিরোধিতায় পাল্টা বনধের বিরুদ্ধে তিনি এবং তাঁদের সরকার গোড়া থেকেই সরব হয়েছেন। এ দিনও সকালে তিনি দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে হিলকার্ট রোড, বিধান রোড, সেবক রোড দিয়ে হেঁটে ব্যবসায়ীদের দোকান খুলতে অনুরোধ করেন। কেউ বাধা দিলে নিরাপত্তা দেওয়ার আশ্বাস দেন। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, “আমরা বরাবরই সমস্ত রকম বনধের বিরোধী। |
বনধেও সচল শিলিগুড়ি। সোমবার তোলা নিজস্ব চিত্র। |
বনধের বিরোধিতায় রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই ব্যবস্থা নিয়েছে। বনধের দিন সরকারি অফিস আদালতে কর্মীদের হাজিরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বনধের বিরদ্ধে আগেও আমি নিজে রাস্তায় নেমেছি। এ দিনও ব্যবসায়ী বাসিন্দাদের কাছে আবেদন করেছি জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে। তাঁরা সাড়া দিয়েছেন।” তিনি জানান, শিলিগুড়ির মানুষ বনধ প্রত্যাহার করেছে। একইভাবে পাহাড়ের মানুষও বনধ প্রত্যাখ্যান করবে বলে তাঁরা আশাবাদী। সাত সকালে দোকানের সামনে বা বাজার চত্বরে জড়ো হয়ে যে ব্যবসায়ীরা দোকান খুলবেন কি না সাতপাঁচ ভাবছিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী এবং তাদের নেতা কর্মী, কাউন্সিলরদের বনধের বিরোধিতায় মিছিল করতে দেখে তাঁরা এর পর আর দেরি করেননি। একটি দুটি করে দোকান খুলতে শুরু করে। দোকান খুলতে দেখে বিধান মার্কেট সব্জি এবং মাছ, মাংসের বাজারেও ক্রেতাদের ভিড় বাড়ে। দলের কাউন্সিলর কৃষ্ণ পাল, দুলাল দত্ত, নান্টু পালদের নিয়ে গৌতমবাবু ততক্ষণে সেবক রোডে পৌঁছন। তাঁদের দেখে সেবক মোড়ে নিজের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা হরিপদ সরকার, দেবত রামবাবুরা দোকান খুলতে তত্পর হন। আসবাবের দোকানি হরিপদবাবু বলেন, “এ দিন সিকিমে একটি অফিসে জিনিস সরবরাহের টেন্ডার রয়েছে। দোকান না খুলতে পারলে সব বরবাদ হয়ে যেত। মাঝেমধ্যেই যে ভাবে বন্ধ হচ্ছিল তাতে ব্যবসার অনেক ক্ষতি হয়েছে। দোকানের ৬ জন কর্মী রয়েছে। দোকান বন্ধ থাকলে তাদেরও সমস্যায় পড়তে হয়।” একই সুরে বনধের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন পঙ্কজ গুপ্ত নামে এক করবারি। এ দিন সকাল থেকে যত বেলা গড়িয়েছে শেঠ শ্রীলাল মার্কেট, বিধান মার্কেটের ব্যবসায়ীরা তাদের দোকান খুলে করবার জমিয়েছেন। |
শিলিগুড়িতে বনধ ব্যর্থ করতে রাস্তায় নেমেছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব।
বনধের বিরোধিতা এবং পাহাড় সমতলের সম্প্রীতি রক্ষায় কংগ্রেসের মিছিল।
সোমবার ছবি দু’টি তুলেছেন বিশ্বরূপ বসাক। |
বনধের বিরোধিতায় এবং পাহাড় সমতলের সম্প্রীতি বজায় রাখতে এ দিন শিলিগুড়িতে মিছিল করে কংগ্রেস। জেলা কংগ্রেস সভাপতি (সমতল) শঙ্কর মালাকারের নেতৃত্বে দলের নেতা কর্মীরা বাঘা যতীন পার্ক থেকে মিছিল করেন। বনধের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন বিরোধী বামেরাও। দার্জিলিং জেলা সিপিএমের কার্যকরি সম্পাদক জীবেশ সরকার বলেন, “পাহাড়ের পরিস্থিতি জটিল রয়েছে। তার মধ্যে সমতলে বনধ মেনে নেওয়া যায় না। এ ধরনের বনধ ডাকার ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার যাতে কড়া ব্যবস্থা নেয় আমরা সেই দাবি করছি।” এদিন মোর্চার ডাকা ‘ঘর ভিতরো জনতা’য় প্রায় শুনসান ছিল শিলিগুড়ি সংলগ্ন বিভিন্ন জিটিএ এলাকা। শুকনা, শিমুলবাড়ি, গাড়িধূরা এলাকায় মোর্চার ঘরের ভিতরে থাকার ফতোয়া মানেননি কেউই। এলাকা সুনসান থাকলেও দোকান পাটের ঝাঁপ খোলা ছিল। পাঁচ দিন থেকে এক দিনের কর্মসূচিতে নেমে এলেও তাও মন থেকে মেনে নিতে পারছেন না তা পরিষ্কার হয়ে যায় এলাকবাসীর কথাতেও। গোর্খাল্যান্ডের সমর্থনে অকপট থাকলেও বনধে যে সায় নেই তা স্পষ্ট জানান গণেশ কারকি, রীতা সুব্বা, তেলে সুব্বারা। |