আশঙ্কা ছিল, তবে পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিন নজিরবিহীন শান্ত ছিল মুর্শিদাবাদের ডোমকল। ভোট-পর্ব মেটার পরে বোর্ড গঠনে নিয়ে সেই ডোমকলই উত্তপ্ত হয়ে উঠল রবিবার রাত থেকে।
তৃণমূল-সিপিএম সংঘর্ষে ওই দিন রাত থেকেই সন্ত্রস্ত হয়ে ছিল ডোমকলের পাহাড়পুর এলাকা। সোমবার সকাল থেকেই শুরু হয় দু-পক্ষের তুমুল বোমা বর্ষণ। দুপুরে সেই বোমাবাজির মধ্যে পড়ে মারা যান আনসার শেখ (৩৭) নামে স্থানীয় মোক্তারপুর গ্রামের এক বাসিন্দা। বোর্ড গঠন পর্বের প্রথম বলি আনসার তাদেরই সমর্থক বলে দাবি করেছে শাসকদল। তৃণমূলের দাবি, বোমার আঘাতে গুরুতর জখম হয়েছেন মতিউর রহমান নামে আরও এক দলীয় কর্মী। তাঁকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় বহরমপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ডোমকলের পাহাড়পুর পঞ্চায়েতের ২০টি আসনের মধ্যে ৮টি গিয়েছে বামেদের দখলে। কংগ্রেসের টিকিটে যে ৯ জন জয়ী হয়েছিলেন তাঁরা সকলেই শাসকদলে নাম লেখানোর পরেই শুরু হয় গণ্ডগোল। ওই পঞ্চায়েতের বাকি তিনটি আসনে জয়ী নির্দল প্রার্থী বামেদের সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে বোর্ড দখলের লড়াই বোমা-পাইপগানের যুদ্ধে গড়ায়। তারই জেরে গত দু’দিনের লাগাতার সংঘর্ষ। এ দিন পঞ্চায়েত অফিসের সামনের রাস্তায় তৃণমূল সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে সিপিএমের। এই সময়ে শাসকদলের জমায়েত থেকেই বোমা ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। ব্লক তৃণমূল সভাপতি আমিনুল হাসান গণ্ডগোলের জন্য পুলিশকে কাঠগড়ায় তুলেছেন। তিনি বলেন, “সিপিএম পরিকল্পিতভাবে মিছিল করে আমাদের কর্মীদের উপর চড়াও হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে থেকেও কোনও পদক্ষেপ করেনি।”
বোমা-গুলির লড়াইয়ের খবর মিলিছে নদিয়ার মামজোয়ান পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন নিয়েও। সেখানেও এ দিন বিকেলে হলদিপাড়া এলাকায় সিপিএম-তৃণমূল সংঘর্ষে সাত জন জখম হয়েছেন। বোর্ড গঠন নিয়ে এ দিন গণ্ডগোল ছড়িয়েছে হুগলির সিঙ্গুরেও। সেখানেও শাসকদলের প্রতিপক্ষ ছিল বামেরা। বোমা-গুলি না চললেও দু’পক্ষের হাতাহাতিতে সিঙ্গুরের বড়বাজার এলাকায় বেশ কয়েক জন আহত হয়েছেন। হুগলির শ্রীরামপুর-উত্তরপাড়া ব্লকের নবগ্রাম পঞ্চায়েতেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও শাসকদলের আক্রমণে এ দিন বোর্ড গঠন করতে পারেনি সিপিএম। গ্রাম পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনকে কেন্দ্র করে কোথাও বোমা, কোথাও হাতাহাতি কোথাও বা কাচের ভাঙা বোতল হাতে সংঘর্ষের খবর পাওয়া গিয়েছে জলপাইগুড়ি জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকেও।
প্রধান বাছাইকে কেন্দ্র করে ভাঙড়ের ব্যেঁওতা-২ পঞ্চায়েত অফিস চত্বরে বোমাবাজি-ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত অভিযোগে তিন জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। রবিবার রাতে ভাঙড়ের হাতিশালা থেকে পুলিশ ইসমাইল মোল্লা, রবিউল মোল্লা এবং আলাউদ্দিন মোল্লা নামে তিন জনকে ধরে। ধৃতদের বাড়ি ওই এলাকাতেই। তবে মূল অভিযুক্ত স্থানীয় তৃণমূল নেতা জুলফিকার মোল্লাকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। ওই দিন দুপুরেই তৃণমূলের তরফে দলীয় ভাবে প্রধান বাছাইকে ঘিরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব দেখা দেয়। তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলাম ও তাঁর অনুগামীদের প্রায় দু’ঘণ্টা আটকে থাকতে হয় পঞ্চায়েত অফিসেই। অফিস চত্বরে ভাঙচুর চলে। বোমাবাজি হয়। আরাবুলের গাড়ি-সহ পাঁচটি গাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়। তৃণমূল নেতা জুলফিকার মোল্লার মদতে তাঁর লোকজনই হামলায় জড়িত বলে অভিযোগ।
|