বছর দুয়েক আগে ২০১১-২০১২ অর্থ-বর্ষে কেন্দ্রীয় বাজেটে ‘কান্দি মাস্টার প্ল্যান’-এর জন্য ৪৩৯ কোটি টাকা বরাদ্দও হলেও কাজ শুরু হয়নি। ফলে প্রতি বছরের মতো এ বারও সেপ্টেম্বরের বর্ষায় বানভাসি হওয়ার আশঙ্কায় মুর্শিদাবাদ, বীরভূম ও বর্ধমান জেলার বেশ কিছু এলাকার ১৪টি ব্লকের প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষ। কান্দি মহকুমার ৫টি ব্লক খড়গ্রাম, বড়ঞা, ভরতপুর ১ নম্বর এবং ২ নম্বর, কান্দি ও লাগেয়া নবগ্রাম, বেলডাঙা ২ নম্বর, বহরমপুর ব্লক ছাড়াও লাগোয়া বীরভূমের ৫টি এবং বর্ধমানের কেতুগ্রাম-সহ ১৪টি ব্লক প্রতি বছর বন্যায় প্লাবিত হয়। ওই ব্লকগুলিকে মাকড়সার জালের মতো ঘিরে রয়েছে ময়ূরাক্ষী, কূয়ে, বাবলা, কানা ময়ূরাক্ষী, দ্বারকা ও ব্রাহ্মণীর মতো নদ-নদী। রয়েছে বেলুল, বসিয়া, তেলকর, সাকিরা, হিজল, খেরুল, লাঙ্গলহাটার মতো বিশাল আয়তনের ৮-৯টি বিল। এই সব নদ-নদী, নালা ও বিল উপচিয়ে মাঠঘাট খেতিজমি ও লোকালয় ভাসিয়ে জল এসে পড়ে ভাগীরথীতে। ফি বছরের ওই বানভাসি থেকে মুক্তির পথ খুঁজতে ১৯৬২ সাল থেকে একের পর এক বিভিন্ন সরকারি কমিটি এলাকা পরিদর্শন করে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল মান সিং কমিটি, কেলকার কমিটি, প্রীতম সিং কমিটি।
প্রতি বছরের বন্যা থেকে রেহাই পেতে ওই সব কমিটির পক্ষ থেকে ‘কান্দি মাস্টার প্ল্যান’ রূপায়ণের জন্য সুপারিশ করা হয়। ওই সুপারিশ কার্যকর করতে গত অর্ধ শতাব্দী ধরে সব রাজনৈতিক দলই সোচ্চার। এমনকী ওই দাবি আদায়ের জন্য ২০০৭ সালে বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরীর নেতৃত্বে সপ্তাহ দুয়েক ধরে মুর্শিদাবাদ জেলায় ১৬৮ কিলোমিটার পদযাত্রাও হয়। অবশেষে বছর দুয়েক আগে কেন্দ্রীয় সরকার ‘কান্দি মাস্টার প্ল্যান’ অনুমোদন করে। তত্কালীন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় ২০১১-১২ সালের বাজেটে ‘কান্দি মাস্টার প্ল্যান’-এর জন্য ৪৩৯ কোটি টাকা বরাদ্দ করেন। তবে তা রূপায়ণের কাজ এক কদমও এগোয়নি। কেবল রাজনৈতিক দলগুলির পারস্পরিক দোষারোপ।
সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় এ ব্যাপারে বলেন, “৪৩৯ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে বলে ঘোষণা হয়েছে। কিন্তু দু’টি অর্থবর্ষ পার হয়ে গেলেও কাজ হয়নি।” কেন? মন্ত্রীর জবাব: “কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রী, কেন্দ্রের অর্থ সচিব ও স্বরাষ্ট্র সচিবের কাছে আমি নিজে এ পর্যন্ত মোট ৬ বার দেখা করে কান্দি মাস্টার প্ল্যানের টাকার বিষয়ে বলেছি। এ জেলা থেকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আছেন, সাংসদ আছেন। তাঁদের সঙ্গে দেখা করেও আমি বলেছি। কোনও সদুত্তর পাইনি।” অধীর চৌধুরীর পাল্টা অভিযোগ “আমি তো রাজীববাবুকে চিনিই না। তিনি আবার কবে আমার সঙ্গে দেখা করলেন? তিনি কবেই বা কান্দি মাস্টার প্ল্যানের টাকার জন্য আমাকে বললেন?” |