হলুদ চাষ করে সোনালি ভবিষ্যৎ! জঙ্গলমহলের গ্রামে গ্রামে ঘুরে গত কয়েক মাস ধরে চাষিদের এই স্বপ্নই ফেরি করছেন বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক।
পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ ও বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে রাজ্যের জঙ্গলমহলের তিন জেলা পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরে শুরু হয়েছে হলুদ চাষের পাইলট প্রকল্প। এর পোশাকি নাম ‘অচিরাচরিত এলাকায় বিজ্ঞানভিত্তিক হলুদ চাষ ও প্রক্রিয়াকরণ কৃষি ব্যবস্থা’। পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নমন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা বলেন, “তিন জেলার চাষিদের জীবনের মানোন্নয়নের লক্ষ্যে এই প্রকল্প আমরা হাতে নিয়েছি।”
বিধান চন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তথা হলুদ প্রকল্পের যুগ্ম সঞ্চালক অরবিন্দ মিত্রের প্রস্তাবেই পর্ষদ তিন জেলায় এই পাইলট প্রকল্প শুরু করেছে। স্থানীয় প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে ফার্মার্স ক্লাব ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সাহায্যে চাষিদের হলুদ চাষে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। অরবিন্দবাবু জানান, রাজ্যের জঙ্গলমহলে জমির চরিত্র অনুযায়ী ধান চাষের তুলনায় হলুদ চাষে আর্থিক লাভের সম্ভাবনা বেশি। তাঁর দাবি, “এক বিঘে জমিতে হলুদ চাষে খরচ হয় কমবেশি ১০ হাজার টাকা। বেশির ভাগই বীজের খরচ। বিঘে প্রতি ফসল মেলে দুই থেকে আড়াই হাজার কিলোগ্রাম। বাজার দর কমবেশি ৪০ হাজার টাকা। বিঘেতে প্রায় ৩০ হাজার টাকা লাভ করতে পারেন চাষিরা।” |
আদর্শ পরিবেশ |
• ক্রান্তিয় অঞ্চল
• উষ্ণ-আর্দ্র আবহাওয়া
• বেলে, দোয়াঁশ, কালো ও লাল ক্ষারহীন মাটি
• অল্প ও মাঝারি বৃষ্টিতেও হলুদ চাষ সম্ভব |
|
ইতিমধ্যেই বাঁকুড়ার ছাতনা, গঙ্গাজলঘাটি, বাঁকুড়া ২, রাইপুর, শালতোড়া এবং পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর ২, আড়শা ও বাঘমুণ্ডি ব্লকে চাষিদের উৎসাহ দিতে দুই শিক্ষক শিবির করেছেন। প্রকল্পের তালিকায় রয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বিনপুর ১ ও ২ এবং জামবনি ব্লকও। প্রকল্পের মুখ্য সঞ্চালক দীপক ঘোষ বলেন, “হলুদ চাষে লাভের দিকটা চাষিদের বোঝানো হচ্ছে।”
প্রথম ধাপে বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে তৈরি করা উন্নত মানের হলুদের বীজ চাষিদের দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যেই তাঁরা প্রায় ৮০০ চাষিকে মাথাপিছু ১০ কিলোগ্রাম করে হলুদের বীজ দিয়েছেন। চাষ করলে বীজের পরিমাণ ১০ গুণ বেড়ে যাবে। সাধারণ চাষিদের সঙ্গে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদেরও হলুদ চাষে অন্তর্ভুক্ত করতে চাইছে প্রশাসন। চাষি ও স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের প্রশ্ন, “আর্থিক লাভ হলে চাষ করতে বাধা নেই। তবে বিপণনের ব্যবস্থা প্রশাসনকেই সুনিশ্চিত করতে হবে।” অরবিন্দবাবু জানান, ইতিমধ্যেই তাঁরা বড় মশলা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। আসানসোল, চেলিয়ামার ব্যবসায়ী সংস্থার কর্তারাও তাঁদের আশ্বাস দিয়েছেন। এই রাজ্যে হলুদ চাষ হলে তাঁরাই সব কিনে নেবেন। সুকুমারবাবুও বলেন, “চাষিরা যাতে সরাসরি তাঁদের হলুদ বাজারে বিক্রি করতে পারেন, তার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।” |