একটা নিম্নচাপের জের কাটছে না। তার মধ্যেই ফের নতুন নিম্নচাপ হাজির হচ্ছে ওড়িশা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে। দিন কুড়ির মধ্যে বঙ্গোপসাগর এবং দক্ষিণবঙ্গে সাত-সাতটি ঘূর্ণাবর্ত আর নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে। তাদের দাপটে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে টানা তিন সপ্তাহ ধরে অতিসক্রিয়তা চলছে বর্ষার। বৃষ্টি থামার কোনও লক্ষণই নেই। বরং আরও অন্তত ৪৮ ঘণ্টা ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস দিয়েছে হাওয়া অফিস।
অতিবৃষ্টিতে মেদিনীপুর-সহ বেশ কয়েকটি জেলায় জনজীবন বিপর্যস্ত। আবহবিদেরা জানান, উত্তর বঙ্গোপসাগরে রবিবার যে-নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়েছিল, সেটি শক্তি বাড়িয়ে সেটি সোমবার সুস্পষ্ট নিম্নচাপে পরিণত হয়। সরে আসে ওড়িশা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের দিকে। আরও শক্তি বাড়িয়ে সেটি স্থলভূমির কাছাকাছি অবস্থান করছে। আবহাওয়া দফতরের সতর্কতা, ঝাড়খণ্ডে আজ, মঙ্গলবার থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। এই অবস্থায় দামোদর উপত্যকায় বন্যা-পরিস্থিতির উপরে নজরদারি বাড়িয়েছে রাজ্যের সেচ দফতর। কারণ, জুলাইয়ে দক্ষিণবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলায় বৃষ্টির ঘাটতি চললেও টানা ২০ দিনের বর্ষণে সেই ঘাটতি মিটে উল্টো বিপত্তির ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। কৃষি দফতরের আশঙ্কা, আরও বৃষ্টি হলে উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে ফসলের ক্ষতি হবে। কৃষি দফতরের এক কর্তা বলেন, উপকূলবর্তী এলাকার নদী বাঁধগুলির উপরে নজর রাখা হচ্ছে। বাঁধ ভেঙে জমিতে নোনা জল ঢুকে পড়লে ওই সব এলাকায় চাষের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে।
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলেন, “নিম্নচাপটি ঝাড়খণ্ডের দিকে সরে যাচ্ছে। মঙ্গলবারেও দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় ভারী বৃষ্টি হতে পারে। বিশেষ করে পশ্চিমের জেলাগুলিতে বৃষ্টির তীব্রতা বাড়বে। বুধবার পর্যন্ত বৃষ্টি চলবে দক্ষিণবঙ্গে।” আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, এ বারের বৃষ্টি শুধু কয়েকটি এলাকাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। দক্ষিণবঙ্গের সব জেলাই বৃষ্টি পাবে। স্থলভূমিতে ঢোকার পরে নিম্নচাপটির গতিপ্রকৃতি কী দাঁড়ায়, সেই ব্যাপারে আবহাওয়া দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে কৃষি ও সেচ দফতর।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা কৃষি দফতর সূত্রের খবর, রবিবার দুপুর থেকে বৃষ্টির ফলে তমলুক, হলদিয়া, ভগবানপুর, পটাশপুরে চাষের জমিতে জল জমে গিয়েছে। আমন ধান, সব্জি, পান ও ফুল চাষের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষিরা। বিপন্ন হতে পারে বহু কাঁচা বাড়িও। জেলার উপ-কৃষি অধিকর্তা প্রণবেশ বেরা বলেন, “প্রায় ১৩টি ব্লকে ধানচারার ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।” টানা বৃষ্টি চলছে পশ্চিম মেদিনীপুরেও। বেশ কিছু মাটির বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জল জমেছে রাস্তাঘাটেও। রবিবার রাতে খড়্গপুরে দুর্যোগের মধ্যে মাটির দেওয়াল চাপা পড়ে মারা গিয়েছেন এক দম্পতি। রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, টানা বর্ষণে মুর্শিদাবাদের রঘুনাথপুর দু’নম্বর ব্লকের গড়শিমুল এলাকায় গঙ্গা-পদ্মার ভাঙন ভয়াবহ আকার নিয়েছে। কেন্দ্রীয় সেচমন্ত্রীকে চিঠিতে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
উল্টো ছবিও আছে। চলতি দফার বর্ষণও বীরভূমে বৃষ্টি-ঘাটতি মেটাতে পারেনি। এখনও পর্যন্ত যথেষ্ট পরিমাণে বৃষ্টি হয়নি ওই জেলায়। রবিবার রাতে বৃষ্টি হয়েছে ৪.৭ মিলিমিটার। সোমবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ১.৮ মিলিমিটার। এখনও বৃষ্টির প্রচুর ঘাটতি আছে বলে জানাচ্ছেন জেলা সেচ দফতরের নির্বাহী আধিকারিক সুজিত কোনার। তবে কৃষি দফতর সূত্রের খবর, এই দফার বর্ষণের কল্যাণে রাজ্যে ৮৭ শতাংশ জমিতে ধান রোয়া হয়ে গিয়েছে। বীরভূম, মালদহ ও নদিয়ায় আরও কিছুটা বৃষ্টি হলে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়ে যেতে পারে বলেও আশা করছেন আবহবিদেরা। গত তিন-চার দিনে নদিয়া জেলাতেও ভাল বৃষ্টি হয়েছে। তেহট্ট মহকুমা বাদে জেলার অন্যত্র বৃষ্টির ঘাটতি অনেকটাই পূরণ হয়েছে। |