|
|
|
|
চোখের সামনে শুধু ম্যাকগ্রার বোলিং ভাসছিল, বলছেন ঈশ্বর
রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায় • কলকাতা |
খুব বেশি দিন পিছোতে হবে না। গত জানুয়ারি মাসের কথা। সওয়া ছ’ফুট লম্বা, ছিপছিপে ছেলেটার বোলিং দেখে এমআরএফ পেস ফাউন্ডেশনের ডিরেক্টর গ্লেন ম্যাকগ্রা এতটাই মুগ্ধ হয়ে যান যে, চেনা ভারতীয় মুখদের বলে ফেলেছিলেন, “ছেলেটাকে দেখে রাখুন। আশ্চর্য ওর সুইং করানোর ক্ষমতা। ভবিষ্যতে এ ছেলে কিন্তু ইন্ডিয়া খেলবে!”
ভারতের জার্সি এখনও পরা হয়নি। কিন্তু ভারত ‘এ’-র জার্সি পরে ফেলেছেন। এবং শুধু জার্সি-ই পরেননি, ‘গুরু’ ম্যাকগ্রার টিপস মেনে দক্ষিণ আফ্রিকার মাঠে নিজের সদম্ভ আবির্ভাবও ঘটিয়ে রাখলেন।
ইনিঈশ্বর পাণ্ডে। ভারতীয় ক্রিকেটের আরও এক ‘স্মল টাউন বয়’-এর নবতম নিদর্শন।
প্রোটিয়া ব্যাটিং লাইন আপকে দুমড়ে চার-চারটে উইকেট (১৬-৫-৪০-৪)। প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ অনুযায়ী, তাঁর সুইংয়ের উত্তর খুঁজতে হিমসিম খেতে হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা ‘এ’ ব্যাটসম্যানদের। কিন্তু ‘ম্যাকগ্রার বাজি’ তার পরেও অদ্ভুত নিরুত্তাপ। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফোনে খুব শান্ত গলায় বলে যাচ্ছিলেন, “ঘরোয়া ক্রিকেটে আগে ছ’উইকেট পেয়েছি। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে এই চার উইকেটের সম্মানই আলাদা। উইকেট থেকে খুব বেশ বাউন্স পাওয়া যাচ্ছিল না। ঠিক করেছিলাম, কত জোরে বল করতে পারি, সেটা দেখাব না। বরং চেষ্টা করব উইকেট টু উইকেট রেখে অল্প অল্প বলটা মুভ করাতে। ম্যাকগ্রা ঠিক যেটা করতেন। আজ বল করার সময় ওঁর বোলিংটাই চোখের সামনে ভাসছিল।” |
|
ঈশ্বর-নামা |
• মধ্যপ্রদেশের ২৪ বছরের মিডিয়াম পেসার।
• প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক ২০১০ সালে,
মধ্যপ্রদেশ বনাম গোয়া ম্যাচে।
• প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সেরা বোলিং ৬-৩১।
• টি-টোয়েন্টি অভিষেক বিদর্ভের বিরুদ্ধে নাগপুরে।
• আইপিএল সিক্সে পুণে ওয়ারিয়র্সে ২ ম্যাচে ১ উইকেট। |
|
ক্লাস টুয়েলভ পাশ করার সময়ও যিনি বুঝতে পারেননি তাঁর জীবন এক অদ্ভুত দিকে মোড় নিতে চলেছে। মধ্যপ্রদেশের রেভা গ্রাম থেকে উঠে আসা। টুয়েলভের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর নিছক ঘুরতে ঘুরতে মধ্যপ্রদেশের অনূর্ধ্ব-১৯-এর ট্রায়াল। তার পর রাজ্য টিম, আইপিএল ঘুরে সোজা ভারত ‘এ’! জানেন, ভারতীয় পেস ব্যাটারির সাপ্লাই লাইন হিসেবে তাঁকে ভাবা হচ্ছে। আলোচনা হচ্ছে তাঁর দীর্ঘ হাইট, পেস আর সুইং করানোর ক্ষমতা নিয়ে। আইপিএলে যে টিমে খেলেছেন, সেই সহারা পুণে ওয়ারিয়র্স টিম ডিরেক্টর দীপ দাশগুপ্ত বলছিলেন, “ভুবির চেয়ে ও কিছুটা আলাদা। সাদা বলের চেয়ে লাল বলে ভাল। তবে ওর একটা গুণ আছে। ব্যাটসম্যানের সামনে বল করে যাবে। মার খেয়ে ভয় পায় না।” আর ঈশ্বর নিজে কী বলছেন? “রোজ কাঁধের ট্রেনিং নিয়ম করে করি যাতে পেসটা বাড়ে। এখন ঘণ্টায় একশো পঁয়ত্রিশ-আটত্রিশ টেনে দিই। কিন্তু সেটা আরও বাড়াতে হবে।” সঙ্গে সংযোজন, “এই সাফল্য টিমকে উৎসর্গ করলাম। দেখি, ফোনে পাওয়া গেলে ম্যাকগ্রা স্যরকেও পারফরম্যান্সটা জানাব। ওঁকে দেখেই আমার বোলার হওয়ার ইচ্ছে হয়। আর একটা কথা। আমাদের টিমটাও অসম্ভব ভাল। আমি কেন, বাকিরাও আজ ভাল বল করেছে।”
টিমটা শুধু ভাল নয়, ভারতীয় ‘এ’ দলের সঙ্গে জড়িত কারও কারও মনে হচ্ছে টিমটা ভাল মেজাজেও আছে। ভারত ‘এ’-র ৫৮২-৯-এর জবাবে দক্ষিণ আফ্রিকা ‘এ’ আপাতত ৩১২-৯। এখনও ২৭০ রানে পিছিয়ে। ঈশ্বরের দুর্দান্ত বোলিংয়ের মাঝে ঋদ্ধিমান চারটে ক্যাচ ধরলেন এ দিন। একটা আবার নাকি অবিশ্বাস্য। শোনা গেল, টিমের অন্দরমহলেও নানা রং ধরা পড়ছে সময় সময়। কখনও জাতীয় নির্বাচক বিক্রম রাঠৌর বাংলার সামি আহমেদকে নিয়ে বসে পড়ছেন। বোঝাচ্ছেন, “একদম ঢিলে দেবে না প্র্যাক্টিসে। এটাই তোমার ওঠার সময়।” কখনও আবার ম্যাচ শেষের পর পরই পুরো টিম নেমে পড়ছে মাঠে, ফুটবল নিয়ে। সঙ্গে ড্রেসিংরুমে গানবাজনা থেকে হইহুল্লোড় কোনও কিছুর বাকি নেই। ফোনে টিম ম্যানেজার সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় তো বলেই ফেললেন, “ম্যাচে নামছি আর কোথায় মনে হচ্ছে? সব সময়ই তো মনে হচ্ছে পার্টি চলছে!”
|
পুরনো খবর: রায়নাকে আলাদা করে টিপস ফ্লেচারের |
|
|
|
|
|