|
|
|
|
ময়না-তদন্ত সেরে হাত সংগঠনে, চান কারাটরা |
প্রেমাংশু চৌধুরী • নয়াদিল্লি |
পশ্চিমবঙ্গে দলের ‘জমিনি হকিকত’ জানতে পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফলের ময়না তদন্ত করে দেখতে চাইছেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। জনতার সঙ্গে হারানো সংযোগ ফিরে পাওয়ার চেষ্টায় বাংলায় সংগঠনকে নতুন করে সাজানোর কথা বলেছে কেন্দ্রীয় কমিটি। সেই কাজে হাত দেওয়ার আগে পঞ্চায়েতের সবিস্তার ময়না তদন্ত সেরে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রকাশ কারাটেরা।
তৃণমূলের সন্ত্রাস এবং ভোটগণনায় কারচুপির জন্য পঞ্চায়েত ভোটের ফল জনমতের যথার্থ প্রতিফলন নয় বলেই দাবি করছে আলিমুদ্দিন। কারাট তথা এ কে জি ভবনও এই দাবির সঙ্গে একমত। কিন্তু সন্ত্রাস-কারচুপির বাইরে যে নিজেদের দুর্বলতা রয়েছে, তা-ও অস্বীকার করা সম্ভব হচ্ছে না। সেই কারণেই বাস্তব রাজনৈতিক পরিস্থিতি বুঝতে পঞ্চায়েতের ফলাফলের চুলচেরা বিচারের নির্দেশ হয়েছে।
এ কে জি ভবনের নির্দেশ, জেলা পরিষদের আসনগুলিকে তিনটি ভাগে ভাগ করে ময়না তদন্ত চালানো হোক। এক, যে সব আসনে সুষ্ঠু ভোট হয়েছে। দুই, যে সব আসনে শাসক দল আংশিক ভাবে বুথ দখল-কারচুপি করতে সফল হয়েছে। তিন, যে সব আসনে তৃণমূল পুরোপুরি সন্ত্রাস চালিয়ে ভোট লুঠ করেছে। এই তিন ধরনের আসনে সিপিএম তথা বামেরা কত শতাংশ ভোট পেয়েছে, প্রতিটি জেলা ধরে ধরে তার অঙ্ক তৈরি করতে বলা হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মনে করছেন, এই ভাবে বাস্তব রাজনৈতিক চিত্রটা মিলবে। এবং সেখান থেকেই আগামী লোকসভা নির্বাচনে বামেদের জন্য কী অপেক্ষা করছে, তার প্রাথমিক ধারণা মিলবে। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কমিটি ইতিমধ্যেই এই হিসাব সেরে ফেলেছে। বাকি জেলাগুলিকেও সেই কাজ শেষ করতে হবে।
এই হিসেব তৈরির পরেই কেন্দ্রীয় কমিটির পরামর্শ মেনে আগামী দিনে পশ্চিমবঙ্গে দলীয় সংগঠনকে নতুন করে সাজানোর কাজ শুরু হবে। কলকাতায় রাজ্য কমিটির বৈঠক ২২ অগস্ট। সেখানে প্রাথমিক আলোচনার পরে বসবে বর্ধিত রাজ্য কমিটির বৈঠক (সম্ভবত সেপ্টেম্বরে)। বিমান বসু-বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য কেন্দ্রীয় নেতাদের জানিয়ে দিয়েছেন, দলের পুনরুত্থানের জন্য কোনও ‘শর্ট-কাট’ পথ ধরে লাভ নেই। সাধারণ সম্পাদক কারাটেরও বক্তব্য, “সংগঠন নতুন করে সাজানোর কাজ কবে সম্পূর্ণ হবে, তা নির্দিষ্ট বলতে পারব না। তা কী ভাবে হবে, তা নিয়ে রাজ্য কমিটি ও বর্ধিত রাজ্য কমিটিতেই আলোচনা হবে।”
দু’দিনের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনার পর দলীয় বিবৃতিতেও বলা হয়েছে, ‘পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি মানুষকে সংগঠিত করবে। বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলন তৈরি করবে। মানুষের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ গড়ে তুলতে সংগঠনকে নতুন করে সাজানো হবে’। কেন্দ্রীয় কমিটির ফাঁকেই দলের কৃষক সভার বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জমানায় ৮৭ জন কৃষকের আত্মহত্যা এবং তৃণমূলের হামলায় কৃষক সভার ১২৫ জন সদস্যের মৃত্যুর প্রতিবাদে গোটা দেশ জুড়ে আন্দোলন হবে। কৃষক সভার নতুন সাধারণ সম্পাদক হান্নান মোল্লার কথায়, “রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তো কৃষক আত্মহত্যার কথা স্বীকারই করছেন না! তাই রাজ্যের কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে সেপ্টেম্বরের শেষে সপ্তাহব্যাপী আন্দোলন হবে।” মদন ঘোষ, রেজ্জাক মোল্লা, নৃপেন চৌধুরীদের দাবিতেই এই সিদ্ধান্ত। দলের একাংশ মনে করছে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে মমতার সরকার ব্যর্থ হলেও তাকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে কাজে লাগাতে সিপিএম ব্যর্থ। কারাটের যুক্তি, “রাজ্যে সরকারের ব্যর্থতা, বিরোধী হিসেবে আমাদের ভূমিকাএই সব বিচার করার আগে মনে রাখতে হবে, পশ্চিমবঙ্গে পরিস্থিতি একেবারেই স্বাভাবিক নয়। বিরোধীদের উপরে সব রকম আক্রমণ চলছে।”
|
পুরনো খবর: বাংলার সংগঠনে নবসাজ চাই, বলল কেন্দ্রীয় কমিটি |
|
|
|
|
|