পাহাড়ে আন্দোলনের জেরে ফের সঙ্কটে দার্জিলিঙের চা শিল্প। পরিবহণ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত। বাজারে দার্জিলিং চায়ের জোগান কমছে দ্রুত হারে।
গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার আশ্বাস ছিল, বন্ধ থেকে ছাড় পাবে দার্জিলিং চা। কিন্তু বাগান চালু থাকলেও পরিবহণের অভাবে ব্যাহত চা সরবরাহ। গত বছর অগস্টের চেয়ে এ বার কলকাতার নিলাম কেন্দ্রে জোগান প্রায় অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতি চললে বাগান চালানোর নগদে টান পড়ার আশঙ্কায় ভুগছে দার্জিলিঙের চা শিল্পমহল। সে ক্ষেত্রে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি মালিক-কর্মী ইউনিয়নের মধ্যে পুজো বোনাসের বৈঠক নিয়েও অনিশ্চয়তার সিঁদুরে মেঘ দেখছেন অনেকে। এ দিকে এই সঙ্কটে কান দিতে নারাজ মোর্চার কর্মী ইউনিয়ন। তারা স্পষ্ট জানিয়েছে, আন্দোলন কর্মসূচি চলবে।
সাধারণত নিলামের দিন কুড়ি আগে বাগান থেকে চা পৌঁছয় নিলাম কেন্দ্রে। কলকাতায় নিলামের দায়িত্বে থাকা ক্যালকাটা টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে খবর, আজ, মঙ্গলবার যে-দার্জিলিং চায়ের নিলাম (সেল-৩৪) হবে, তা এসেছে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে। এর পরেই পড়তে শুরু করে জোগান। ২৭ অগস্ট যে-নিলাম (সেল-৩৫) হবে, সে জন্য গত ৭ অগস্ট পর্যন্ত প্রায় ৯৫ হাজার কেজি চা পাঠিয়েছে বাগানগুলি। গত বার যা ছিল প্রায় ১.৬০ লক্ষ কেজি।
৩ সেপ্টেম্বরের নিলামের (সেল-৩৬) জন্য বাগানগুলির ৮-১৪ অগস্টের মধ্যে চা পাঠানোর কথা ছিল। পাহাড়ের পরিস্থিতির জন্য সময়সীমা ১৭ অগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়। কিন্তু পরিবহণ ব্যবস্থা চালু না-থাকায় সময় বাড়িয়েও কাজের কাজ হয়নি। ওই নিলামের জন্য চা এসেছে ৭০ হাজার কেজি। গত বছর যা ছিল প্রায় ১.৩৫ লক্ষ কেজি।
দার্জিলিং টি অ্যাসোসিয়েশনের (ডি টি এ) মুখ্য উপদেষ্টা সন্দীপ মুখোপাধ্যায় সোমবার জানিয়েছেন, এ দিন থেকে ফের পরিবহণ ব্যবস্থা বন্ধ। বাজারে চা পাঠানো যাচ্ছে না। ডিটিএ-র প্রেসিডেন্ট এস এস বাগারিয়া বলেন, “এ রকম চললে সমস্যা বাড়বে। নগদ জোগানেও টান পড়তে পারে।” সন্দীপবাবু জানান, চা শিল্পকে পুরোপুরি বন্ধের আওতা থেকে ছাড় দেওয়ার আর্জি জানিয়ে মোর্চা নেতৃত্বকে চিঠি দিয়েছেন।
ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশনের এক মুখপাত্র বলেন, “দার্জিলিঙের আর্দ্রতা বেশি বলে বাগানে অনেক দিন চা রাখা যায় না। তাতে গুণমান কমতে পারে। তা ছাড়া এই সময়ে মোট চায়ের অনেকটাই তৈরি হয়। ফলে বর্ষার চায়ের দাম কম হলেও সার্বিক উত্পাদন বেশি হওয়ায় আয়ের বড় অংশ আসে এই সময়েই।”
শিল্পের হিসেবে গোটা বছরের প্রায় ৪৭% চা-ই তৈরি হয় জুলাই-সেপ্টেম্বরের মধ্যে। এর আগেও পাহাড়ের আন্দোলনের জন্য বার কয়েক ফার্স্ট ও সেকেন্ড ফ্লাশ চায়ের ব্যবসায় ক্ষতির মুখে পড়েছিল বাগানগুলি। এপ্রিল-জুন পর্যন্ত তৈরি হয় ওই চা। দাম অন্য চায়ের তুলনায় বহুগুণ বেশি। রফতানি বাজারই ওই চায়ের গন্তব্য। এ বার সমস্যার সূত্রপাত হল চলতি মাসে।
বাগানে মোর্চার সংগঠন দার্জিলিং-তরাই-ডুয়ার্স টি প্লান্টেশন লেবার ইউনিয়নের সম্পাদক সুরজ সুব্বা অবশ্য স্পষ্ট জানিয়েছেন, বাগান চালু থাকলেও আপাতত ২৩ অগস্ট পর্যন্ত পরিবহণ ব্যবস্থা বন্ধই থাকবে। গত কয়েক দিনে বাগান থেকে সব চা বেরিয়ে গিয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, “গোর্খাল্যান্ডের চেয়ে কোনও কিছুই বড় নয়। গোর্খাল্যান্ড জনতার দাবি। জনতাই বন্ধ করছে। সে জন্য যে-কোনও কষ্ট সহ্য করতে রাজি সবাই। প্রয়োজনে পুজোর উত্সবেও সামিল হব না আমরা।”
|