অব্যাহত টাকার পতন। প্রতিদিনই তা নজির ভেঙে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করছে। সোমবার তা ভেঙে দিল এক দশকের ইতিহাস। টাকা ১৪৮ পয়সা পড়ায় দিনের শেষে প্রতি ডলারের দাম দাঁড়াল ৬৩.১৩ টাকা। এ দিন, এক সময়ে অবশ্য তা নেমে গিয়েছিল ৬৩.৩০-য়। এটাই ডলারে টাকার সর্বনিম্ন দর। আর টালমাটাল টাকাই ফের প্রভাব ফেলল শেয়ার বাজারে। শুক্রবার ৭৬৯ পয়েন্ট পড়ার পর সোমবারও সেনসেক্স পড়ল ২৯০.৬৬ অঙ্ক। বাজার বন্ধের সময়ে সূচক এসে দাঁড়াল ১৮,৩০৭.৫২ অঙ্কে।
তবে সূচকের পতন কোথায় গিয়ে থামবে, তা নিয়ে কিছুটা মতভেদ রয়েছে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে। অনেকের আশঙ্কা, সেনসেক্স ১৬ হাজারে নামতে পারে। আবার কারও কারও আশা, ভাল বর্ষা সূচকের পতন রুখে দেবে।
এ দিন অবশ্য সোনার দাম কিছুটা পড়েছে। কলকাতায় প্রতি ১০ গ্রাম গয়নার সোনার দাম ৮৫ টাকা পড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০,১৪০ টাকায়। দিল্লিতে পতনের পরিমাণ ১৬৫ টাকা।
|
তবে শেয়ার বাজার নিয়ে হতাশা প্রকট হয়েছে লগ্নিকারীদের মনে। সিংহভাগ বাজার বিশেষজ্ঞই সূচক চাঙ্গা হওয়ার কারণ দেখতে পাচ্ছেন না। বিএনকে ক্যাপিটাল মার্কেটসের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অজিত খান্ডেলওয়াল বলেন, “এই মুহূর্তে বাজারের প্রায় সমস্ত মৌলিক উপাদানেরই হাল খারাপ। টাকার দামের পতন, বিদেশি লগ্নির আকাল, বিভিন্ন কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত কেন্দ্র। এই সবের নিট ফল লগ্নিকারীদের মনে হতাশার সৃষ্টি। তবে সব থেকে বেশি চিন্তায় ফেলেছে টাকার দামের পতন। সমস্ত উপাদানের হালই যেখানে খারাপ, সেখানে বাজার চাঙ্গা হওয়ার সম্ভাবনা কী করে সৃষ্টি হবে?”
তবে বাজার সম্পর্কে নিরাশ নন অ্যাসোসিয়েশন অফ ন্যাশনাল এক্সচেঞ্জ মেম্বার্স অফ ইন্ডিয়ার প্রাক্তন সভাপতি ও সুমেধা ফিসকালের ডিরেক্টর বিজয় মুর্মুরিয়া। তিনি বলেন, “বাজারে আর বড় মাপের পতন আসবে বলে মনে হয় না।” তবে চাকা ঘোরার সম্ভাবনা অবশ্য এখনই দেখতে পাচ্ছেন না বিজয়বাবু। তিনি বলেন, “বাজারে এই মন্দা আরও কিছু দিন চলবে।”
ভাল বর্ষা কি বাজারের হাল ফেরাতে পারবে? সে নিয়েও সংশয়ে বিশেষজ্ঞরা। ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রাক্তন ডিরেক্টর এস কে কৌশিক বলেন, “ভাল বর্র্ষা বাজার ভাল হওয়ার অতিরিক্ত কারণ হিসাবে দেখা দিতে পারত। কিন্তু তা প্রধান কারণ হতে পারে না। আসলে মৌলিক উপাদানগুলির হাল ভাল থাকলে বর্ষা সূচককে অনেকটা উপরের দিকে তুলতে পারত। কিন্তু এখন বাজারের হাল ফেরার কোনও সম্ভাবনা দেখছি না।”
ভারতের বাজার খারাপ হওয়ার প্রধান কারণ, বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলির শেয়ার বিক্রি। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ও কেন্দ্রের সাম্প্রতিক ঘোষণাগুলির পর বিদেশি সংস্থাগুলি ভারতের বাজারে টানা শেয়ার বিক্রি করে চলেছে। শুক্রবার এক দিনেই তারা বিক্রি করেছে ৫০০ কোটি টাকার বেশি শেয়ার। বর্তমান পরিস্থিতিতে ওই সব সংস্থা আরও শেয়ার বিক্রি করবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। |