আবার ৩১ হাজার ছাড়িয়ে গেল সোনা
লগ্নিতে রাশ টানতেই ধস শেয়ারে, তলানিতে টাকা
কাকতালীয়। আর স্বাধীন ভাবে লগ্নি করা যাবে না, এই আশঙ্কায় স্বাধীনতা দিবসের পরের দিনই তলিয়ে গেল শেয়ার বাজার। ৭৬৯ পয়েন্ট পড়ল বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক সেনসেক্স। গত চার বছরে যা সব থেকে বেশি।
একই সঙ্গে আরও দু’টি ধাক্কা খেল ভারতীয় অর্থনীতি। শুক্রবার একটা সময় ডলারের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৬২ টাকা। দিনের শেষে কমে হয়েছে ৬১ টাকা ৬৫ পয়সা। মুখ থুবড়ে পড়া শেয়ার বাজার আর টলোমলো ডলারে লগ্নিকারীরা আস্থা হারানোয় বিনিয়োগের গন্তব্যে পরিণত হয়েছে সোনা। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই বেড়েছে তার দাম। কলকাতায় ১০ গ্রাম পাকা সোনার দাম শুক্রবার ৩১ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে।
এ দিন শেয়ার বাজারে পতনের মূলে বুধবার কেন্দ্রীয় সরকারের একগুচ্ছ ঘোষণাই দায়ী বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। দেশে এখন যে পরিমাণে ডলার আসছে, তার থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে বেশি। চলতি খাতে এই ঘাটতি (কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ডেফিসিট) ঠেকানোর উপায় হিসেবে কেন্দ্র সে দিন জানিয়ে দেয়, এখন থেকে কোনও ভারতীয় সংস্থা তার নিট সম্পদের ১০০ শতাংশের বেশি বিদেশে লগ্নি করতে পারবে না। এত দিন পর্যন্ত যে পরিমাণ ছিল ৪০০ শতাংশ। পাশাপাশি, একটি নির্দিষ্ট প্রকল্পের অধীনে এক বছরে ৭৫ হাজার ডলারের বেশি বিদেশে পাঠাতেও পারবেন না কোনও ভারতীয়। এত দিন যা ছিল দু’লক্ষ ডলার। এই দুই ঘোষণাই আতঙ্ক ডেকে আনে বাজারে। লগ্নিকারীরা মনে করতে শুরু করেন, বেহাল কোষাগারের জেরে অর্থনীতিকে ফের আশির দশকে নিয়ে যেতে চাইছে কেন্দ্র। যখন লগ্নির উপরে বহাল ছিল কড়া নিয়ন্ত্রণ।
অনেকে আবার ভেবেছেন আরও এক কদম এগিয়ে। তাঁদের আশঙ্কা, যদি বিদেশের মাটিতে ডলার লগ্নিতে বিধিনিষেধ বসতে পারে, তবে দেশ থেকে ওই মুদ্রা নিয়ে যাওয়ার নিষেধাজ্ঞাও আর অসম্ভব নয়। এই আশঙ্কাতেই এ দিন ভারতের বাজার থেকে লগ্নি সরিয়ে নিয়েছেন তাঁরা। মহীন্দ্রা অ্যান্ড মহীন্দ্রা গোষ্ঠীর কর্ণধার আনন্দ মহীন্দ্রা পর্যন্ত ট্যুইট করছেন, “কী পরিহাস! স্বাধীনতা দিবসের দিনই পুঁজি পরাধীন। মনে হচ্ছে যেন আশির দশক ফিরে আসছে।”
উদার অর্থনীতির উল্টোপথের হাঁটার আশঙ্কার জেরেই শেয়ার বাজারের এই পতন বলে অবশ্য সরকার স্বীকার করছে না। তারা দায়ী করছে মার্কিন অর্থনীতির শ্রীবৃদ্ধিকে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম বলেন, “দেশের অর্থনীতির ভিত যথেষ্ট মজবুত। বাজার বা টাকার দর পড়েছে আমেরিকার দিকে তাকিয়ে।”
এই যুক্তির কারণ হল, সম্প্রতি ওবামার দেশে বেকারত্বের হার নেমে এসেছে গত ছ’বছরের মধ্যে সব থেকে নীচে। ফলে অনেকের ধারণা, অর্থনীতির হাল ফেরায় এ বার ধাপে ধাপে আর্থিক ত্রাণ প্রকল্প গুটিয়ে নেবে আমেরিকার শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারেল রিজার্ভ। এখন অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে ডলারের সরবরাহ বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রতি মাসে বাজার থেকে বিপুল অঙ্কের বন্ড (ঋণপত্র) কেনে তারা। আগামী দিনে তা বন্ধ হলে ডলারের জোগান কমবে বাজারে। ফলে এ দেশের বাজারে আরও কমবে বিদেশি আর্থিক সংস্থাগুলির লগ্নি। চিদম্বরমের মতে, মূলত এই আশঙ্কাই এ দিন টেনে নামিয়েছে শেয়ার বাজারকে।
কিন্তু ঘটনা হল, ডলার আটকাতে তাদের ব্যবস্থা যে আশঙ্কা ছড়াতে পারে, সেটা গোড়াতেই কিছুটা আঁচ করেছিল কেন্দ্র। যে কারণে বুধবার চিদম্বরম বলেছিলেন, “এই ব্যবস্থা নেহাতই সাময়িক।” এ দিনও এ নিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন কেন্দ্রীয় আর্থিক বিষয়ক সচিব অরবিন্দ মায়ারাম। জানিয়েছেন, পুঁজির স্বাধীনতা খোওয়া যাওয়ার প্রশ্নই নেই। আশ্বাস দিতে কসুর করেনি শীর্ষ ব্যাঙ্কও। তারা বলেছে, বিদেশের মাটিতে নিট সম্পদের ৪০০ শতাংশই বিনিয়োগ করা যাবে। তবে তার মধ্যে ১০০% করা যাবে আগাম অনুমতি ছাড়া। বাকিটুকুর জন্য অনুমোদন নিতে হবে।
কিন্তু এই আশ্বাসে চিঁড়ে ভেজেনি। কারণ অনেক অর্থনীতিবিদের মতেই ভারতীয় অর্থনীতির অসুখ আসলে আরও অনেক গভীর।
তাঁরা বলছেন, চলতি খাতে বাণিজ্যিক ঘাটতি চড়া হওয়ার কারণেই ডলারের সাপেক্ষে টাকার দাম পড়ছে প্রায় প্রতিদিন। আবার টাকার দর যত কমছে, তত বাড়ছে তেল, গ্যাস, যন্ত্রাংশ, বৈদ্যুতিন পণ্য ইত্যাদি আমদানির খরচ। এই সবের দাম বাড়লে মূল্যবৃদ্ধি ফের মাথাচাড়া দিতে পারে, এই আশঙ্কায় সুদ কমাতে পারছে না রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। সুদ না-কমায় চাহিদা বাড়ছে না বাড়ি-গাড়ি ইত্যাদির। ফলে টান পড়ছে সংস্থার মুনাফায়। যার প্রভাব পড়ছে শেয়ার বাজারে।
উল্টো দিকে, চাহিদা না-বাড়ায় থমকে গিয়েছে বৃদ্ধির চাকাও। ফলে বিমান, বিমা ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিদেশি লগ্নির জন্য দরজা খুলেও ডলার তেমন আসছে না। শেয়ার বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে বিদেশি আর্থিক সংস্থাগুলিও। ফলে সব দিক থেকে ডলার আসার স্রোত যত ক্ষীণ হচ্ছে, তত বাড়ছে চলতি খাতে ঘাটতি। দাম পড়ছে টাকারও।
অদ্ভুত হল, টাকার পতনের আশঙ্কায় প্রায়ই পড়ছে শেয়ার সূচক।
আবার তা পড়ার কারণে আরও বেশি করে এ দেশ থেকে পাততাড়ি গোটাচ্ছে বিদেশি আর্থিক সংস্থাগুলি। আরও কমছে ডলার আসা। যা ফের কারণ হচ্ছে টাকার পতনের। সব মিলিয়ে যেন এক দুষ্টচক্র ঘিরে ধরেছে ভারতের অর্থনীতিকে।
কেউ কেউ অবশ্য মনে করছেন, দেশের অর্থনীতি কোণঠাসা ঠিকই। কিন্তু তা বলে টাকার দর যেখানে দাঁড়িয়েছে, সেটিও অযৌক্তিক। অযথা আতঙ্কের প্রতিফলন। তাই আজ না হোক কাল তা ঘুরে দাঁড়াবেই। তা ছাড়া, এ বার বর্ষা কৃপণ হয়নি। তাই গ্রামেগঞ্জে বাড়তি চাহিদার হাত ধরে অর্থনীতির চাকায় গতি ফেরা সময়ের অপেক্ষা বলে আশাবাদী তাঁরা। শুক্রবার ডলারের সাপেক্ষে রেকর্ড তলানিতে নামল টাকার দরও। লেনদেন চলাকালীন মাঝে এক সময় ৬২ টাকা ছাড়িয়ে গেল মার্কিন মুদ্রার দাম। দিনের শেষে তা দাঁড়াল ৬১.৬৫ টাকাতে। উস্কে দিয়ে গেল এক গোছা আশঙ্কাকে। খুব শীঘ্রই পেট্রোল-ডিজেলের দাম বাড়া যেমন তার মধ্যে রয়েছে, তেমনই আছে ঋণে সুদ না-কমার সম্ভাবনাও।

বাজারে বিপর্যয়


আপনার সমস্যা
• আরও বাড়বে পেট্রোল, ডিজেলের দাম
• ফলে মহার্ঘ হবে অন্যান্য জিনিসও
• ঋণে সুদ কমার সম্ভাবনা আরও ক্ষীণ
• বাড়বে বিদেশে পড়ার খরচ

দেশের অর্থনীতির ভিত যথেষ্ট মজবুত। বাজার বা টাকার দর পড়েছে আমেরিকার দিকে তাকিয়ে।


কী পরিহাস! স্বাধীনতা দিবসের দিনই পুঁজি পরাধীন। মনে হচ্ছে যেন আশির দশক ফিরে আসছে।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.