ভিতে ক্ষয় ধরেছিল অনেক আগে থেকেই। শুক্রবার নামল ধস। সপ্তাহ শেষে শেয়ার বাজারের পতন নিয়ে এই রকম মন্তব্যই করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের সিংহভাগেরই আশঙ্কা, বাজার আরও পড়বে। তবে কেউ কেউ আবার এরই মধ্যে আশার আলো দেখার চেষ্টা করছেন। তাঁদের আশা, বর্ষা ভাল হওয়ার সুফল অবশ্যই পড়বে শেয়ার বাজারের উপর।
শেয়ার বাজারের হাল খারাপ হওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্ককেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে টাকার দামের পতনে লাগাম পরাতে বাজারে নগদের জোগান কমানোর উদ্দেশ্যে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নেওয়া সাম্প্রতিক পদক্ষেপই শেয়ার বাজারে ধস ডেকে এনেছে বলে মনে করছেন লগ্নিকারী থেকে বিশেষজ্ঞ সকলেই।
পিয়ারলেস মিউচুয়াল ফান্ডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অক্ষয় গুপ্ত বলেন, “রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ওই সব পদক্ষেপ আতঙ্কিত করে তুলেছে বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলিকে। তারা মনে করছে, ভারতে ‘ক্যাপিটাল কনট্রোল রেজিম’ বা মূলধন নিয়ন্ত্রণের জমানা ফের শুরু হতে চলেছে। এর ফলে বিশেষ করে মার খাবে উৎপাদন শিল্প-সহ ব্যবসার বিভিন্ন ক্ষেত্র। যা শেয়ার বাজারের পক্ষে প্রতিকূল অবস্থার সৃষ্টি করবে। তাই ওই সব সংস্থার মধ্যে শেয়ার বিক্রির হিড়িক পড়ে গিয়েছে।”
তবে শুধু রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পদক্ষেপই নয়, কেন্দ্রীয় সরকারের বেশ কিছু সিদ্ধান্ত শেয়ার বাজারের ক্ষতি করেছে বলে মনে করেন প্রবীণ বাজার বিশেষজ্ঞ অজিত দে। তিনি বলেন, “গত কয়েক বছর ধরে কেন্দ্রীয় সরকার দেশের আর্থিক অবস্থার উন্নতির জন্য তেমন কোনও ব্যবস্থাই নিতে পারেনি। উল্টে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যে-সব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তাতে মূলধন সংগ্রহের খরচ দ্রুত বেড়ে গিয়েছে। যার বিরূপ প্রভাব দেখা গিয়েছে উৎপাদন শিল্পের সূচকের পতনে।” পাশাপাশি কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল বা ক্যাগের সাম্প্রতিক বেশ কিছু রিপোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারের নানা দুর্নীতির দিকে আঙুল তুলেছে। যা শেয়ার বাজারের প্রতি লগ্নিকারীদের আস্থায় ভাঙন ধরিয়েছে বলেও ধারণা বিশেষজ্ঞদের।
এ দিন শেয়ার বাজারে যে-ধস নেমেছে, তার প্রধান কারণ ব্যাঙ্ক শেয়ারের দামের পতন বলেই বাজার সূত্রের ইঙ্গিত। শুক্রবার আক্সিস ব্যাঙ্ক, আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক, স্টেট ব্যাঙ্ক, এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক-সহ প্রায় সবক’টি ব্যাঙ্কের শেয়ারের দামেই ভাল রকম পতন হয়েছে। বিশেষ করে পড়েছে অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের শেয়ার দর।
সারা দেশে বিদ্যুৎ কেন্দ্র সহ বেশ কিছু প্রকল্প মাঝ রাস্তায় এসে আটকে রয়েছে। ওই সব প্রকল্পে ব্যাঙ্কগুলি যে-ঋণ দিয়েছে, তার সিংহভাগই অনুৎপাদক সম্পদে পরিণত হয়েছে। যার ফলে চলতি আর্থিক বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে স্টেট ব্যাঙ্ক-সহ প্রায় প্রতিটি ব্যাঙ্কেরই অনুৎপাদক সম্পদ বেড়ে গিয়েছে। সেই খাতে আর্থিক সংস্থান করতে গিয়ে টান পড়েছে ব্যাঙ্কের মুনাফায়। অজিতবাবু বলেন, “ব্যাঙ্কগুলির ওই হাল হওয়ার ফলে তাদের শেয়ার দর বেশ কিছু দিন থেকেই পড়ছে। আমার আশঙ্কা সার্বিক ভাবে বাজার আরও পড়বে।”
বাজার যে ফের পড়বে, সে ব্যাপারে অধিকাংশ বিশেষজ্ঞই একমত। অক্ষয়বাবু বলেন, “শেয়ার বাজারের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি এই মুহূর্তে কোনও আশার আলো দেখছি না। শুধুমাত্র তথ্যপ্রযুক্তি, ওষুধ শিল্প এবং ভোগ্যপণ্য বা এফএমসিজি সংস্থা ছাড়া বাকি সব শেয়ারের দর তলানিতে এসে গিয়েছে।” একই সুরে অজিতবাবু জানান, “সকলে শুধু সূচকের আওতায় থাকা শেয়ারগুলি নিয়ে আলোচনা করছেন। কিন্তু তার বাইরে থাকা শেয়ারের দিকে তাকালে দেখা যাবে, অধিকাংশের দরই ২০০৬-’০৭ সালের জায়গায় ফিরে গিয়েছে।”
তবে এরই মধ্যে কিছুটা আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রাক্তন সভাপতি এবং স্টুয়ার্ট সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান কমল পারেখ। তিনি বলেন, “আমি মনে করি বাজার প্রয়োজনের তুলনায় বেশি আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। এখন সব থেকে যে-বিষয়টি বাজারের পক্ষে মঙ্গলজনক হবে, তা হল ভাল বর্ষা। আমার আশা, অক্টোবর মাসেই এর সুফল দেখা যাবে শেয়ার বাজারে।”
|
ধস |
তারিখ |
সূচক* |
পতন |
১৬ অগস্ট ’১৩ |
১৮,৫৯৮.১৮ |
৭৬৯.৪১ |
২০ জুন ’১৩ |
১৮,৭১৯ |
৫২৬ |
২২ সেপ্টেম্বর ’১১ |
১৬,৩৬১ |
৭০৪ |
২৪ অক্টোবর ’০৮ |
৮,৭০১ |
১,০৭১ |
১৭ মার্চ ’০৮ |
১৪,৮০৯ |
৯৫১ |
২১ জানুয়ারি ’০৮ |
১৭,৬০৫ |
১,৪০৮ |
তথ্যসূত্র: বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ| |
* (বাজার বন্ধকালীন) |
|