প্রশাসনিক জটিলতার জেরে ছয় দশকের পুরনো হাসপাতাল রিষড়া সেবাসদনের কর্মী এবং চিকিৎসকেরা টানা চার মাস বেতন পাচ্ছেন না। তার উপরে রাজ্য সরকার অনিয়মের অভিযোগ তুলে অনুদান বন্ধ করে দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে হাসপাতালের শ’দেড়েক কর্মী-চিকিৎসক বিপাকে পড়লেও প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে পরিষেবা চালিয়ে যাচ্ছেন। সমস্যার জন্য কর্মীদের একাংশ পরিচালন সমিতির সম্পাদক, সিপিএম নেতা দিলীপ সরকারকেই দায়ী করেছেন। দিলীপবাবুর অবশ্য সে কথা মানতে চাননি।
মহকুমাশাসক (শ্রীরামপুর) জয়সি দাশগুপ্তের আশ্বাস, “ওই হাসপাতালে দীর্ঘদিনের সমস্যা রয়েছে। হাসপাতালটির পুনরুজ্জীবনের সব রকম চেষ্টা প্রশাসন করবে।” গত দু’দশক সেবাসদনের সর্বেসর্বা ছিলেন সেখানকার পরিচালন সমিতির সম্পাদক, সিপিএম নেতা দিলীপ সরকার। তার আগে অবশ্য দীর্ঘদিন ধরে পুরপ্রধানের সভাপতিত্বে গঠিত প্রশাসনিক কমিটিই সেবাসদন চালানোর দায়িত্বে ছিল। ২০১০ সালে হাসপাতালের পরিচালন সমিতি তৈরি হয়। কর্মীদের একাংশের দাবি, ওই বছর নির্বাচনে রিষড়া পুরসভা বামেদের হাতছাড়া হওয়ায় সেবাসদনের শীর্ষপদের দখল দিলীপবাবুর হাত থেকে চলে যেতে বসে। সেই কারণেই কৌশলে প্রশাসনিক কমিটি ভেঙে ফেলা হয়। পরিচালন সমিতির সম্পাদক হন দিলীপবাবু। |
বেশ কিছু দিন আগে থেকে অবশ্য সেবাসদনের ছবিটা বদলাতে থাকে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, রাজ্য সরকার প্রতি বছর ২৭ লক্ষ টাকা অনুদান দেয়। গত আর্থিক নভেম্বরে অনুদানের প্রথম খাতের ১৪ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়। তার পর থেকে রাজ্য হাত গুটিয়ে নেয়। মাস চারেক আগে বেতন আটকে যাওয়ায় কর্মীরা আন্দোলন শুরু করেন। হেনস্থার আশঙ্কায় হাসপাতালে আসা বন্ধ করে দেন দিলীপবাবু। দিন কয়েক আগে তিনি এবং পরিচালন সমিতির ১৬ জন সদস্যই মহকুমাশাসকের দফতরে ইস্তফাপত্র জমা দেন। তবে ইস্তফাপত্রে শর্ত আরোপ করায় জটিলতা বেড়েছে। দিলীপবাবু আর সেবাসদনে আসছেন না। তিনি চেকে সই না করায় লেনদেনও বন্ধ।
বর্তমান সমস্যার জন্য দিলীপবাবুকেই দায়ী করেছেন কর্মীদের একাংশ। তাঁদের অভিযোগ, অনিয়ম থাকায় অনেক হিসেব কম্পিউটার থেকে মুছে ফেলেছে দিলীপবাবুর নেতৃত্বাধীন পরিচালন সমিতি। অভিযোগ উড়িয়ে দিলীপবাবুর দাবি, “যাঁরা হইচই করছেন, তাঁরাই তো কম্পিউটার চালান। তাঁরাই এটা বলতে পারবেন। এক শ্রেণির কর্মীর জন্যই দুরবস্থা। রাজনৈতিক কারণে সরকার অনুদান বন্ধ করেছে। আমরাই সেবাসদনের পরিকাঠামো উন্নতি ঘটিয়েছি।”
কিন্তু সরকারি অনুদান বন্ধ হল কেন? স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, জেলা প্রশাসন ওই হাসপাতালের পরিকাঠামোয় সন্তুষ্ট না হওয়ায় নেতিবাচক রিপোর্ট পাঠায় রাজ্য সরকারের কাছে। শ্রীরামপুরের চিকিৎসক-বিধায়ক সুদীপ্ত রায়ের দাবি, “ওদের হিসেবপত্রই ঠিক নেই। অনিয়ম হলে তো রাজ্য সরকার টাকা দিতে পারে না।” এ প্রসঙ্গে এসিএমওএইচ (শ্রীরামপুর) সুস্মিতা দাশগুপ্ত অবশ্য বলেন, “ওদের বেশ কিছু কাগজপত্র ঠিক নেই। স্বাস্থ্য দফতরে সেই ভাবে যোগাযোগও করেনি। কাগজপত্র ঠিকঠাক করে ওরা স্বাস্থ্য দফতরে যোগাযোগ করুক। একটা চালু হাসপাতালে সমস্যা তৈরি হোক, এটা কেউই চায় না।”
হাসপাতাল সূত্রের খবর, আপাতত পরিষেবা চালু রাখতে চিকিৎসক এবং কর্মচারীরা একটি কমিটি তৈরি করেছেন। জেলাশাসক এবং মহকুমাশাসকের কাছে গণস্বাক্ষর সম্বলিত স্মারকলিপিতে আবেদন জানানো হয়েছে, পুরপ্রধানের নেতৃত্বে প্রশাসনিক কমিটি গড়ে হাসপাতাল চালানো হোক। কমিটির আহ্বায়ক চিকিৎসক নিতাই সেনাপতি বলেন, “জেলার বিভিন্ন প্রান্তের লোক এখানে আসেন স্বল্প খরচে চিকিৎসার জন্য। তবে প্রশাসনিক জটিলতা তাড়াতাড়ি না মিটলে সমস্যা বাড়বে।” হাসপাতালের বর্ষীয়ান কর্মী ভবেশ ঘোষ অবশ্য বলেন, “পরিচালন সমিতির হঠকারিতায় আমাদের অনেকগুলি পরিবার সমস্যায় পড়েছেন। তবু, আমরা পরিষেবার প্রশ্নে আপস করছি না।” |