এ বছরই জানুয়ারিতে মিলেছে অনুদান। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে, সেপ্টেম্বরে ১২টি পুরসভার ভোটের ফল বেরনোর পরপর, অর্থাৎ পুজোর মুখেই ক্লাবগুলিকে ফের একদফা অনুদান দেবে রাজ্য সরকার। ক্রীড়া দফতর সূত্রের খবর, নতুন এবং পুরনো মিলিয়ে চার হাজারেরও বেশি ক্লাবকে অনুদান দিতে সরকারের অন্তত ৬০ কোটি টাকা খরচ হবে। আর এর ফলে তিন দফায় ক্লাবগুলির অনুদান-খাতে মোট খরচের পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ১১৫ কোটি টাকা।
ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র এ দিন বলেন, “সেপ্টেম্বর মাসেই নতুন করে আরও কিছু ক্লাবকে অনুদান দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।” কিন্তু কতগুলি ক্লাবকে ওই অনুদান দেওয়া হবে এবং কেনই বা গত দু’বারের মতো জানুয়ারি মাসে না দিয়ে তার অনেক আগে সেপ্টেম্বরে ওই টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, তার উত্তর মেলেনি সরকারের তরফে। তবে শাসক তৃণমূলের এক প্রথম সারির নেতার কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী মনে করছেন, এ বছরের শেষেই লোকসভা ভোট হবে। তার আগেই তিনি ক্লাবগুলিকে অনুদান দেওয়ার কাজ শেষ করে ফেলতে চান। পুরভোটের সময়ে নির্বাচনী বিধি থাকবে বলে
তার ফল বেরনোর পরপরই ওই অনুষ্ঠান সেরে ফেলতে চায় সরকার।” ওই নেতার ব্যাখ্যা, “ভোট ব্যাঙ্কে ক্লাবগুলির একটা প্রভাব তো আছেই। পুজোর ঠিক আগে অনুদান পেলে ক্লাবগুলিও খুশি হবে। ভোটে তার কিছুটা সুফল তো মিলবেই।” |
ক্লাবকে অনুদান দেওয়ার অনুষ্ঠান। এ বছর জানুয়ারিতে নেতাজি ইন্ডোরে।— ফাইল চিত্র। |
২০১১-য় ক্ষমতায় আসার পরপরই বিভিন্ন ক্লাবকে আর্থিক সাহায্য দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তৃণমূল সরকার। সেই মতো ২০১২-র জানুয়ারি মাসে প্রথম বার ৭৮১টি ক্লাবকে ২ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হয়। সে বার খরচ হয়েছিল সাড়ে পনেরো কোটিরও বেশি। এর পরের বছর, অর্থাৎ ২০১২-১৩ আর্থিক বছরে সেই খাতে অর্থের পরিমাণ বাড়িয়ে প্রায় ৪০ কোটি করার সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য। সেই মতো চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি আরও প্রায় ১৬০০ ক্লাবকে ২ লক্ষ টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়। সে সময় প্রথম বার অনুদান পাওয়া ক্লাবগুলিকেও ফের ১ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হয়।
এ বছরের জানুয়ারিতে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ক্লাবগুলিকে অনুদান দেওয়ার অনুষ্ঠানে এসে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, ক্লাবগুলি প্রথম বছরে ২ লক্ষ টাকা করে এবং পরের চার বছর ১ লক্ষ টাকা করে পাঁচ বছরে মোট ৬ লক্ষ টাকা অনুদান পাবে। ২০১১-১২ সালে অনুদান পাওয়া ৭৮১টি ক্লাব ইতিমধ্যেই ৩ লক্ষ টাকা পেয়ে গিয়েছে। ২০১২-১৩ সালে ১৬০০টি ক্লাব ২ লক্ষ টাকা করে পেয়েছে। গত দু’বছর মিলিয়ে অনুদান পাওয়া ২৩৮১টি ক্লাবকে সেপ্টেম্বরে ফের
১ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে। যে খাতে খরচ হবে প্রায় ২৪ কোটি টাকা। সেই সঙ্গে চলতি বছরে নতুন করে আরও অন্তত ১৬০০ ক্লাবকে ২ লক্ষ টাকা করে অনুদান দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে ক্রীড়া দফতর সূত্রের খবর। মহাকরণের এক কর্তা অবশ্য বলেন, “সংখ্যাটা ২০০০ পর্যন্ত যেতে পারে। সেটা নির্ভর করছে কত ক্লাব অনুদানের জন্য আবেদন জানাচ্ছে, তার উপরে।” সেই হিসেবে নতুন ক্লাবগুলিকে অনুদান দিতে অন্তত ৩২ কোটি টাকা খরচ হবে। যা বেড়ে ৪০ কোটি পর্যন্ত হতে পারে। সব মিলিয়ে এ বছরে এই খাতে খরচের পরিমাণ ৬০ কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে বলেই ধারণা সরকারি কর্তাদের।
চলতি আর্থিক বছরে ক্রীড়া দফতরের মোট বাজেট বরাদ্দের পরিমাণ ১১৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় অনুদান প্রায় ৩০ কোটি। রাজ্য সরকারের নিজস্ব বরাদ্দ ৮৩ কোটি। তার মধ্যে ৬০ কোটিরও বেশি অর্থ যদি ক্লাবগুলিকে অনুদান দেওয়ার কাজে খরচ হয়, তা হলে সারা বছরের বাকি খরচ হবে কী ভাবে? ক্রীড়া দফতরের এক কর্তা বলেন, “গত বছরেও ক্লাবগুলিকে অনুদান দেওয়ার জন্য দফতরের বর্ধিত (অগমেন্টেড) বাজেট করা হয়েছিল। এ বারেও প্রয়োজনে বর্ধিত বরাদ্দের জন্য অর্থ দফতরের কাছে আবেদন করা হবে।”
সাধারণ ভাবে কোনও ক্লাবকে অনুদান দেওয়ার আগে তার নথিভুক্ত হওয়ার শংসাপত্র, তিন বছরের অডিট রিপোর্ট এবং সাধারণ সভার বিবরণী, ক্লাবের নিজস্ব জমি এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের প্রমাণপত্র-সহ কিছু নথি দেখে নেওয়া হয়। কিন্তু ক্লাবগুলিকে টাকা দেওয়া শুরু হওয়ার পর থেকেই অভিযোগ উঠছে, শুধু মাত্র বিধায়কের সুপারিশের ভিত্তিতেই বেশ কিছু ক্লাবকে ওই অনুদান দেওয়া হয়েছিল।
এ বারে অবশ্য ক্লাব বাছাইয়ের ক্ষেত্রে পৃথক কমিটি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ক্রীড়া দফতর সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই যে সব ক্লাব অনুদান পেতে শুরু করেছে, তাদের তালিকায় আর কোনও অদলবদল হবে না। শুধু মাত্র গত আর্থিক বছরে পাওয়া অর্থ তারা কী ভাবে খরচ হয়েছে, তার শংসাপত্র জমা দিতে হবে। মহাকরণের এক কর্তার কথায়, “নতুন ক্লাবের তালিকা তৈরির কাজ শুরু হবে পৃথক কমিটি গঠন হওয়ার পরেই।” ক্রীড়া দফতর সূত্রের খবর, সেপ্টেম্বর মাসের গোড়া থেকে নতুন ক্লাবের তালিকা তৈরির কাজ শুরু হবে। |