পূর্ব মেদিনীপুর
অশান্তির আবহেই বোর্ড গঠন, পঞ্চায়েতে আধিপত্য তৃণমূলের
নোনয়ন প্রক্রিয়া থেকে শুরু হয়েছিল অশান্তি। ভোটের দিন থেকে বিজয় মিছিল পর্ব পেরিয়ে তা চলল বোর্ড গঠন পর্বেও। পঞ্চায়েতের প্রধান ও উপ-প্রধান নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পূর্ব মেদিনীপুরের নানা জায়গায় অশান্তি অব্যাহত রইল। তবে, দিনের শেষে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় এ বারও আধিপত্য বজায় রেখেছে তৃণমূলই। দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক মামুদ হোসেন দাবি করেন, “১৭৮টি গ্রাম পঞ্চায়েতে আমাদের সদস্যদের নিয়ে বোর্ড গড়া হয়েছে।” বামেরা দাবি করেছে, ৪৪টি পঞ্চায়েতে বোর্ড দখল করেছে তারা। কংগ্রেস একটিতে। যদিও এই সংখ্যার বাস্তবতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এখনও প্রশাসনিক হিসাব পাওয়া যায়নি। পূর্ব মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) অজয় পাল জানান, “শনিবার জেলায় ২২৩টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্য ২২১টিতে প্রধান, উপ-প্রধান পদের নির্বাচন হয়েছে। পটাশপুর ২ ব্লকের খাড় এবং রামনগর ১ ব্লকের তালগাছাড়ি ২ পঞ্চায়েতে গোলমালের জন্য প্রধান নির্বাচন স্থগিত রাখা হয়েছে।”
এ দিকে, বোর্ড গঠন ঘিরে নন্দীগ্রামে ফের প্রকাশ্যে এল তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল। নন্দীগ্রাম ১ ব্লকের মহম্মদপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে ১৩টি আসনের ৭টি তৃণমূল এবং ৬টি আসন কংগ্রেস পায়। দলীয় ভাবে হাবিবুল রহমানকে প্রধান পদের জন্য মনোনয়ন দেয় তৃণমূল। কিন্তু শনিবার তাঁর বিরুদ্ধে প্রধান পদে লড়াইয়ে নামেন বিদায়ী প্রধান আতিউর রহমান। অবশ্য ভোটাভুটিতে জয়ী হন হাবিবুল রহমানই। নন্দীগ্রাম ১ ব্লকের সামসাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূলের কোন্দল প্রকাশ্যে এসেছিল পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগেই। ১৩ আসনের ওই পঞ্চায়েতে নির্দল ৭টি, তৃণমূল ৪টি ও কংগ্রেস ২টি আসন পেয়েছিল। কিন্তু ভোটের পর নির্দল ও কংগ্রেস সদস্যরা তৃণমূলে যোগ দিতে চেয়ে শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে দেখা করেন। এ বিষয়ে দলের একাংশের আপত্তি ছিলই। শনিবার প্রধান নির্বাচন ঘিরে ফের দু’পক্ষের কোন্দল প্রকাশ্যে আসে। এ দিন নির্দলদের ৭ জন সদস্যদের মধ্যে রহিমুল ইসলাম তৃণমূলের সমর্থনে প্রধান পদে লড়াই করেন। তাঁর বিরুদ্ধে নির্দলদের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন অতনু জানা। শেষ পর্যন্ত ৮-৫ ব্যবধানে জিতে প্রধান হন অতনু জানা। তপশিলি মহিলা সংরক্ষিত উপ-প্রধান পদে জয়ী হন সবিতা মণ্ডল। নন্দীগ্রামে ২ ব্লকে ত্রি-শঙ্কু অবস্থায় থাকা বয়াল ১ ও খোদামবাড়ি ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের দখল নিয়েছে তৃণমূল। বয়াল ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের ১০টি আসনের মধ্যে মাত্র ৪টি জিতে ছিল তৃণমূল, ৬টি আসনে জিতেছিল নির্দল প্রার্থীরা। কিন্তু ভোটের ফল প্রকাশের পর উত্তর বয়াল বুথের পরাজিত তৃণমূল প্রার্থী শেখ মইনুদ্দিনের উপর হামলার ঘটনায় ওই বুথের নির্দল সদস্য শেখ ওসমান আলি-সহ পাঁচ নির্দল সদস্যের বিরুদ্ধে থানায় খুনের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের হয়। এর মধ্যে মানস মাইতি নামে এক নির্দল সদস্যকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তিনি এখন জেল হেফাজতে। তা ছাড়াও বাকি চার নির্দল সদস্য ফেরার রয়েছেন। শনিবার ওই পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনের সময় উপস্থিত চার তৃণমূল সদস্যের সঙ্গে ছিলেন পবিত্র কর নামে এক নির্দল সদস্য। ফলে শেষ পর্যন্ত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে প্রধান হন তৃণমূলের ঝুমা মান্না, উপ-প্রধান হন তৃণমূলেরই দেবব্রত দাস। নন্দীগ্রাম ২ ব্লকেরই খোদামবাড়ি ১ গ্রাম পঞ্চায়েতে ১২ আসনের মধ্যে তৃণমূল ৫টি, নির্দল ৫টি, সিপিএম ও আরএসপি একটি করে আসনে জেতে। শনিবার বোর্ড গঠনের সময় সব তৃণমূল সদস্য ও তিন নির্দল সদস্য উপস্থিত থাকলেও বাকি চার জন ছিলেন না। সিপিএমের অভিযোগ, তাঁদের দুই সদস্য ছাড়াও দুই নির্দল সদস্যকে ঢুকতে বাধা দিয়েছে তৃণমূল। ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেয়েও পঞ্চায়েত দখল নিয়েছে তৃণমূল। তৃণমূলে নেতা বাদল মাইতির অবশ্য দাবি, নির্দলরা তাঁদের সমর্থন করেছেন।
অন্য দিকে, সিপিএম-বিজেপি জোট করে পঞ্চায়েত দখল করল চণ্ডীপুর ব্লকের ব্রজলালচক গ্রাম পঞ্চায়েতে। প্রধান হন সিপিএমের সুলেখা জানা, উপ-প্রধান হন বিজেপির আশিস মাইতি। গত পাঁচ বছর তৃণমূল-বিজেপি ক্ষমতায় ছিল। সিপিএমের সঙ্গে জোট বেঁধে বোর্ড গঠনের কথা স্বীকার করেছেন বিজেপির জেলা সম্পাদক সুকুমার দাস। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নিরঞ্জন সিহি বলেন, “এমনটা হয়ে থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বোর্ড গঠন ঘিরে রামনগর ১ ব্লকের তালগাছাড়ি ২ পঞ্চায়েতে বিডিও ও পুলিশের গাড়ি-সহ একাধিক বাড়ি ভাঙচুর ও বোমাবাজির ঘটনা ঘটে। ঘটনায় আহত হন ২৩ জন কর্মী-সমর্থক। আক্রান্তরা তাঁদের সমর্থক দাবি করে ক্ষুব্ধ তৃণমূল সমর্থকরা বালিসাইতে পথ অবরোধ করে। ওই সময় ছবি তুলতে গিয়ে টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক নিগৃহীত হন। তিনি রামনগর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হলে এসডিপিও ঘটনাস্থলে যান। পুলিশ তিন জনকে ধরেছে। অন্য দিকে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে তালগাছাড়ি ১ গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূলের একগোষ্ঠীর সদস্যদের বাড়ি অন্য গোষ্ঠীর লোকেরা ভাঙচুর করে। টাই হয়ে থাকা গোবরা পঞ্চায়েতের নির্বাচিত এক সিপিএম সদস্যকে শনিবার সকালে পুলিশ গ্রেফতার করলে বোর্ডে সংখ্যালঘু হয়ে পড়ায় ক্ষুব্ধ সিপিএম নির্বাচন বয়কট করে। তৃণমূল ওই গোবরা গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করেছে।
তালগাছাড়ি ২ গ্রাম পঞ্চায়েতে ১২ আসনের ওই পঞ্চায়েতে তৃণমূল ও সিপিএম উভয় দলই ৬টি করে আসন জেতায় টাই হয়েছিল। ওই পঞ্চায়েতের প্রধান পদটি ওবিসি মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত। নির্বাচিত সদস্যদের মধ্যে একমাত্র মহিলা ওবিসি সংরক্ষিত আসনটি জেতেন সিপিএমের মহিলা প্রার্থী সোনালী দে। কিন্তু, তৃণমূল সাধারণ আসন থেকে জেতা এক ওবিসি মহিলা সদস্যকে প্রধান করার চেষ্টা করছে এই অভিযোগ তুলে সিপিএম হাইকোর্টে মামলা দায়ের করে। সোনালীদেবীকেই প্রধান করতে হবে এই দাবিতে জয়েন্ট বিডিও গণেশ কর্মকারকে ঘিরে সিপিএমের কর্মী-সমর্থকরা বিক্ষোভ দেখায়। ঘটনাস্থলে আসেন বিডিও তমোজিত্‌ চক্রবর্তী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠী। সেই সময় কয়েক’শো মহিলা-সহ বিক্ষোভকারীরা বিডিওর গাড়ি ঘিরে ধরে অশ্লীল গালিগালাজ করা ছাড়াও গাড়ি ভাঙচুরের চেষ্টা চালায় বলে অভিযোগ। বিডিও ও অন্যরা চলে যাওয়ার পর সিপিএম-তৃণমূলের মধ্যে ব্যাপক বোমাবাজি হয়। তৃণমূলের নিতাই সার অভিযোগ করেন, ‘‘সিপিএমের বোমাবাজিতে দলের ২৩ জন কর্মী-সমর্থক আহত হয়েছেন।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.