অশান্তি মন্তেশ্বরে
নানা এলাকায় নানা অঙ্কেই খুলছে ত্রিশঙ্কু পঞ্চায়েতের জট
কোথাও বিজেপি-কে সঙ্গে নিয়ে বোর্ড গঠন করল তৃণমূল। কোথাও আবার বিজেপি-কে বোর্ড গঠনে সাহায্য করার অভিযোগে শাস্তির মুখে সিপিএমের সদস্যেরা। ত্রিশঙ্কু নানা পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন নিয়ে শনিবার জেলা জুড়ে এমনই নানা অঙ্ক চলল দিনভর। ঘটল ছোটখাট অশান্তির ঘটনাও। মন্তেশ্বরের জামনায় শনিবার বোর্ড গঠন করে সিপিএম। প্রধান নির্বাচিত হন রেখারানি ঘোষ। এর পরে এলাকায় মিছিল করে সিপিএম। তৃণমূলের অভিযোগ, সেই মিছিল থেকে সিপিএমের লোকজন তাদের কিছু কর্মীর উপরে চড়াও হয়। মারধরের পাশাপাশি তৃণমূলের একটি কার্যালয়ও ভাঙচুর করা হয় বলে অভিযোগ। সিপিএমের যদিও পাল্টা দাবি, শুক্রবার রাত থেকে এলাকায় অশান্তি পাকাচ্ছিল তৃণমূল। সিপিএম নেতা অশেষ কোনারের অভিযোগ, “রেখাদেবীর স্বামী লক্ষ্মণ ঘোষ শিক্ষাবন্ধু হিসেবে কাজ করেন। শুক্রবার তিনি কাজ সেরে ফেরার সময়ে তৃণমূলের লোকজন তাঁকে ধরে হুমকি দেয়। পুলিশ ও এলাকার মানুষ তাঁকে উদ্ধার করেন। শনিবারও তৃণমূল হামলা চালিয়েছে। অথচ, এখন আমাদের দিকে হিংসার আঙুল তোলা হচ্ছে।” পুলিশ জানায়, তৃণমূলের তরফে ১২ জন সিপিএম কর্মী-সমর্থকের নামে অভিযোগ করা হয়েছে। এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
পূর্বস্থলী ১ ব্লকের শ্রীরামপুর পঞ্চায়েতে প্রধান-উপপ্রধান নির্বাচন উপলক্ষে শনিবার স্থানীয় হেমায়তপুর মোড়ে জমায়েত হয়েছিলেন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। এ বার ওই পঞ্চায়েতে ২৪টি আসনের মধ্যে ২০টি দখল করেছে তৃণমূল। দুপুর ২টো নাগাদ তাঁরা জানতে পারেন, প্রধান পদে তাজউন্নেসা খাতুন, উপপ্রধান পদে গত বারের প্রধান যশোদা মণ্ডল শপথ নিয়েছেন। বিকেলে তৃণমূলের কিছু লোকজন পঞ্চায়েত ভবনের কিছু দূরে পথ অবরোধ করেন। তাঁদের দাবি, প্রধান নির্বাচন যথাযথ হয়নি। পরে দলের নেতাদের হস্তক্ষেপে অবরোধ ওঠে।
পূর্বস্থলীর নসরতপুর পঞ্চায়েতে ৩০টি আসনের মধ্যে তৃণমূল এবং বিজেপি ১২টি করে আসন পেয়েছিল। সিপিএম পায় ছ’টি। বোর্ড গঠন পর্বে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে প্রধান ও উপপ্রধান নির্বাচনের দাবি জানান সদস্যেরা। এক সিপিএম সদস্য এ দিন হাজির ছিলেন না। ভোট প্রক্রিয়ার পরে দেখা যায়, প্রধান পদে বিজেপি-র প্রার্থী ১৬-১৩ ভোটে ও উপপ্রধান পদে বিজেপি প্রার্থী ১৭-১২ ভোটে জিতেছেন।
দলীয় সদসেরা বিজেপি-র সঙ্গে জোট করে এই পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন করেছে বলে মনে করছেন সিপিএম নেতৃত্ব। দলের রাজ্য কমিটির সদস্য অঞ্জু করের বক্তব্য, “এটা পুরোপুরি দলবিরোধী কাজ। বিজেপি-র সঙ্গে স্থানীয় স্তরে হাত মেলালে দলের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। দোষীদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে কড়া ব্যবস্থা নেবে দল।” যদিও বিজেপির বর্ধমান (গ্রামীণ) সভাপতি রাজীব ভৌমিকের দাবি, “সিপিএমের সঙ্গে তৃণমূলেরও কয়েক জন সদস্য বোর্ড গঠনের জন্য আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। প্রধান ও উপপ্রধানের ভোট হয়েছে গোপন ব্যালটে। তৃণমূলের ভোটও আমরা পেয়ে থাকতে পারি।” তৃণমূলের বর্ধমান (গ্রামীণ) সভাপতি ও রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের যদিও দাবি, বিজেপি প্রার্থীকে তাঁদের কোনও সদস্য ভোট দেননি।
বিজেপি-কে সঙ্গে নিয়ে কেতুগ্রাম পঞ্চায়েত গঠন করল তৃণমূল। শনিবার সেখানে ১১ জন পঞ্চায়েত সদস্যর মধ্যে সিপিএমের ৩ জন উপস্থিত ছিলেন না। তৃণমূলের দু’জন এবং বিজেপি ও কংগ্রেসের তিন জন করে শপথ নেন। বিজেপি তাদের প্রার্থী হিসেবে জ্যোৎস্না সিংহের নাম প্রস্তাব করলে বাকি সদস্যেরা বিরোধিতা করেননি। এর পরে উপপ্রধান পদে তৃণমূল ধানু মাঝির নাম প্রস্তাব করলে বিজেপি-র তিন জন সদস্য সমর্থন করেন। কংগ্রেস ভোটে যোগ দেয়নি। তৃণমূলের কেতুগ্রাম ২ ব্লক সভাপতি দেবাশিস মণ্ডলের অবশ্য দাবি, “আমরা দলীয় নির্দেশ মত বিজেপিকে সমর্থন করিনি। বিজেপি আমাদের সমর্থন করলে আমরা কী করতে পারি?” বিজেপি-র যদিও দাবি, স্থানীয় স্তরে দু’দলের মধ্যে আলোচনার করেই এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।
মঙ্গলকোটের ভাল্যগ্রাম পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন করেছে কংগ্রেস। ১৯টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস জয়ী হয়েছিল ৭টি আসনে। প্রধান ও উপপ্রধান পদে কংগ্রেস প্রার্থী দেয়। তৃণমূলের ৫ জন সদস্য ও এক নির্দল সদস্য কংগ্রেসের প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোট দেন। তৃণমূলের একটি ভোট বাতিল হয়। ৭-৫ ভোটে জেতে কংগ্রেস প্রার্থীরা। সিপিএমের ৬ সদস্য ভোটে যোগ দেননি। এই পঞ্চায়েতের কংগ্রেসের জয়ী ৭ জন সদস্যই মহিলা। কেতুগ্রাম ২ ব্লকের নিরোল পঞ্চায়েতে এক নির্দল সদস্যকে নিয়ে পঞ্চায়েত গঠন করেছে সিপিএম। সেখানে ১০টি আসনের মধ্যে সিপিএম ৫টি, তৃণমূল ৩টি এবং কংগ্রেস ও নির্দল একটি করে আসন পেয়েছিল। তৃণমূলে টিকিট না পেয়ে নির্দল হিসেবে দাঁড়িয়ে জয়ী ওই সদস্য সিপিএমকে সমর্থন করেন।
পূর্বস্থলীর দোগাছিয়া, সমুদ্রগড়, বনপুর ও নাদনঘাটে বোর্ড গঠন করেছে তৃণমূল। কালনা ১ ব্লকের বাঘনাপাড়া, কাঁকুরিয়া, ধাত্রীগ্রাম ও নান্দাইয়েও বোর্ড গঠন হয়েছে নির্বিঘ্নে। এই চারটির মধ্যে একমাত্র নান্দাইয়ে প্রধান ও উপপ্রধান নির্বাচিত হয়েছেন সিপিএম থেকে। মন্তেশ্বরে জামনা ছাড়াও বাঘাসনে বোর্ড গঠন করেছে সিপিএম। তা ছাড়া সেখানকার শুশুনিয়া, কুসুমগ্রাম, ভাগরা-মূলগ্রাম, পিপলন ও মাঝেরগ্রামে বোর্ড গঠন করেছে তৃণমূল। পিপলনে দুই কংগ্রেস সদস্য তৃণমূলকে সমর্থন করায় তারা বোর্ড পেয়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.