রাস্তায় টহল দিচ্ছে ট্যাঙ্ক আর সাঁজোয়া গাড়ি। শুক্রবার, মিশরের ইসলামিয়া শহর। কয়েক জন প্রতিবাদীর একটা দল এগোচ্ছিল সেগুলোর দিকে। নিরস্ত্র। হাতে প্ল্যাকার্ড, মুখে স্লোগান। হঠাৎ ছুটে এল ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি। ট্যাঙ্কগুলো থেকেই বোধ হয়। গুলিবৃষ্টির মুখে গোটা দলটা যখন ছত্রভঙ্গ, এক জনকেই দেখা গেল একটা ট্যাঙ্কের দিকে এগিয়ে যেতে। হাত মাথার ওপর তোলা। পরনে জিন্স আর টি-শার্ট, মাথায় সাদা টুপি। মাঝে কয়েক মুহূর্ত। তার পরেই গুলি লাগল পায়ে। লুটিয়ে পড়লেন বিদ্রোহী।
মোবাইল ক্যামেরায় তোলা মেরেকেটে এক মিনিটের এই ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে ইউটিউবে। এক লহমায় উঠে এসেছে চিনের তিয়েনআনমেন স্কোয়ারের সেই ‘ট্যাঙ্ক-ম্যান’-এর তুলনা। ১৯৮৯-এর ৫ জুন। ছাত্র বিক্ষোভ গুঁড়িয়ে দিতে নামা লাল ফৌজের চারটে ট্যাঙ্কের কলামের সামনে দাঁড়িয়ে সাদা শার্ট পরা একটি মানুষ। পাশ কাটিয়ে যেতে চাইছে ট্যাঙ্ক, লোকটি আবার রাস্তা আটকে দাঁড়াচ্ছেন। তাঁর নাম জানা যায়নি। দুনিয়াই তাঁর নাম দিয়েছিল ‘ট্যাঙ্ক-ম্যান’। শেষ পর্যন্ত তাঁর কী হয়েছিল, কেউ জানে না। ঠিক যেমন অসম্পূর্ণ ফুটেজ থেকে জানা যায়নি, পায়ে গুলি লাগা প্রতিবাদীর শেষ পর্যন্ত কী হল।
মুসলিম ব্রাদারহুডের বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে মিশরীয় সেনা যে খুব বেশি বোঝাপড়ায় যেতে রাজি নয়, তার প্রমাণ মিলেছে আজও। শুধু বুধবার থেকে আজ পর্যন্ত আটশোরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে পিরামিডের দেশে। কাল সেনা বনাম বিক্ষোভকারী সংঘর্ষে প্রাণ গিয়েছিল অন্তত ১৮০ জনের। অনেকগুলি মৃতদেহ এবং আহতদের নিয়ে আজ রামসেস স্কোয়ারের অদূরে আল ফতে মসজিদে ঘাঁটি গাড়েন কয়েকশো বিক্ষোভকারী। আজ সেনা-পুলিশ মিলে সেই মসজিদও ফাঁকা করে দিয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক শনিবার জানানিছে, মুরসির দলের হাজারেরও বেশি সমর্থককে আজ আটক করেছে পুলিশ। |
প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, গত কালের সংঘর্ষের পর ওই মসজিদের ভেতরটা কার্যত মর্গের চেহারা নিয়েছিল। চলছিল আহতদের চিকিৎসাও। বিক্ষোভকারীদের পাশাপাশি শিশুদের নিয়ে মহিলারাও ছিলেন ভেতরে। আর বাইরে রাতভর পাহারায় ছিল সেনা। সকাল হতে না হতেই ফের গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যায়। একটি ফুটেজে নাকি মসজিদের মিনার থেকে এক বন্দুকধারীকে গুলি চালাতেও দেখা গিয়েছে। যদিও বিক্ষোভকারীদের দাবি উল্টোটাই সেনাই গুলি চালিয়েছে। সরকারের বক্তব্য, গত রাতে আলোচনার চেষ্টা চালিয়েছিল সেনাবাহিনী। বলা হয়েছিল, মহিলা ও শিশুদের বিনা শর্তে ছেড়ে দেওয়া হবে। তবে পুরুষদের জন্য অন্য ব্যবস্থা। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হবে তাঁদের। কিন্তু এই শর্তে মন ভেজেনি বিক্ষোভকারীদের।
ফলে যা হওয়ার তা-ই হয়েছে। প্রতিবাদ-বিক্ষোভের সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে চলছে ধরপাকড় (এমনকী সরকারি সূত্রের দাবি, গিজায় আটক হয়েছেন আল কায়দা প্রধান আয়মান আল-জাওয়াহিরির ভাই মহম্মদ)।
শুধু লড়াইয়ের কেন্দ্রস্থল বদলে
যাচ্ছে। কখনও রাবা আল-আদাওইয়া, কখনও রামসেস স্কোয়ার, কখনও আল ফতে মসজিদ।
মুসলিম ব্রাদারহুডের ফেসবুক পেজে জানানো হয়েছে, ধর্মগুরু মহম্মদ বাদীর ছেলে অম্মর বাদীর মৃত্যু হয়েছে গত কালের সংঘর্ষে। নিহত হয়েছেন ব্রাদারহুডের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হাসান অল বান্নার নাতিও। তবে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হাসেম এল-বেবলাউই আইনি পথে মুসলিম ব্রাদারহুডকে ভেঙে দেওয়ার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছেন। |