টানা ২৪ ঘণ্টা উদ্ধারকার্য চালানোর পর ফিলিপিন্সের জাহাজ দুর্ঘটনায় ৬২৯ জন যাত্রীকে উদ্ধার করা গিয়েছে। এখনও নিখোঁজ ১৭০ জন। দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ইতিমধ্যেই বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২।
শুক্রবার সন্ধ্যায় ফিলিপিন্সের দ্বিতীয় বৃহত্তম বন্দর সেবু থেকে দুই কিলোমিটার দূরে ৮৩১ জন যাত্রীবোঝাই জাহাজ ‘এম ভি টমাস অ্যাকুইনাস’-এর সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় একটি মালবাহী জাহাজের। সংঘর্ষের পরেই ডুবতে শুরু করে যাত্রিবাহী জাহাজটি। মালবাহী জাহাজটি অবশ্য ৩৬ জন জাহাজকর্মী-সহ নিরাপদেই তীরে ফিরে আসে।
ঘটনার পরেই উদ্ধারকার্যের জন্য উপকূলরক্ষী বাহিনীর দু’টি জাহাজ পাঠানো হয়েছিল ঘটনাস্থলে। শুক্রবার সারা রাত ধরে চলে তল্লাশি। উদ্ধারকার্যে যোগ দেয় নৌবাহিনীর জাহাজও। স্থানীয় মৎস্যজীবীরাও তাঁদের নৌকা নিয়ে জলে নামেন। শনিবার দুপুর পর্যন্ত ৬২৯ জনকে উদ্ধার করেছেন তাঁরা। যদিও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শনিবার বারবারই বাধা পেয়েছে উদ্ধারের কাজ। |
নৌবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কম্যান্ডার গ্রেগরি ফ্যাবিক সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, “খারাপ আবহাওয়ায় বেশ মুশকিলে পড়েছেন উদ্ধারকারীরা। প্রচণ্ড বৃষ্টি আর ঝোড়ো হাওয়া চলেছে সারা দিন ধরে। ...সমুদ্র উত্তাল হয়ে রয়েছে।” তবে উদ্ধারকারী দলগুলি এখনও আশা ছাড়েনি বলেই জানান তিনি।
উপকূলরক্ষী বাহিনীর ভাইস কম্যান্ডার লুই তুয়াসো বলেন, “মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা। প্রচণ্ড গতিতে জলের তলায় গিয়েছে জাহাজটি। ভিতরে অনেক মানুষই আটকে আছেন বলে মনে হচ্ছে।” আরও গভীর জলে সন্ধান চালানোর জন্য অত্যাধুনিক সরঞ্জাম কাজে লাগানো হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
দুর্ঘটনার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি জানান, দু’টির মধ্যে কোনও একটি জাহাজ নিশ্চয় গতিপথ বদলেছিল। যে পথ দিয়ে যাওয়ার নিয়ম, তা অমান্য করার কারণেই এই সংঘর্ষ ঘটেছে বলে তাঁর মত।
ফিলিপিন্স সরকারের মেরিটাইম ইন্ডাস্ট্রি অথরিটির এনফোর্সমেন্ট দফতরের প্রধান আরনি সান্তিয়াগো জানিয়েছেন, সেবু বন্দরের মুখে ওই জায়গাটি বরাবরই দুর্ঘটনাপ্রবণ।
তিনি বলেছেন, “ওই সরু জলপথটিতে এর আগেও অনেক বার ছোট দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এত বড় দুর্ঘটনা এই প্রথম।”
যাঁরা বেঁচে গিয়েছেন, তাঁদের কয়েক জনের জবানবন্দি পাওয়া গিয়েছে শনিবার। জানা গিয়েছে, জাহাজটি ডুবতে শুরু করতেই জাহাজকর্মীরা লাইফ-জ্যাকেট দিতে শুরু করেন এবং শ’য়ে শ’য়ে যাত্রী সমুদ্রে ঝাঁপ দিতে থাকেন। অনেক যাত্রীই ঘুমন্ত অবস্থাতেই তলিয়ে গিয়েছেন জাহাজবন্দি হয়ে।
মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা যাত্রী জেরউইন আগুডং বললেন, “এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, যে কিছু মানুষের পক্ষে বেরোনো সম্ভব ছিল না। বাচ্চাগুলোর জন্য অসহায় লাগছিল।”
প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জানিয়েছে, ৪০ বছরের পুরনো জাহাজটিকে টু-জিও নামের একটি জল পরিবহণ সংস্থা নিয়ন্ত্রণ করত। ওই চিনা সংস্থাটি গত তিন বছর ধরে ফিলিপিন্সের বৃহত্তম জল পরিবহণ সংস্থা হিসেবে কাজ করছে।
তবুও জাহাজটির নিরাপত্তায় কিছু খামতি থেকে গিয়েছিল বলেই অনুমান করা হচ্ছে। চালকদের তরফে কিছু ত্রুটি থেকে যাওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। দু’টি জাহাজই এর আগে ওই পথ দিয়ে অনেক বার যাতায়াত করেছে। তার পরেও কী ভাবে এই দুর্ঘটনা ঘটল, তা নিয়ে ধন্দে তদন্তকারী দল। |