ফিরে এল ক্ষোভের শুক্রবার। সেনার বিরুদ্ধে নিজেদের চরম অবস্থান বোঝাতে মুরসিপন্থীরা বেছে নিলেন শুক্রবারটাই।
ফিরে এল দশ লক্ষ মানুষের মিছিল। ঠিক যেমনটা মিশর দেখেছিল ২০১১-র গোড়ার দিকে। তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারককে গদিচ্যুত করার সময়ে।
ফিরে এল সেনা-জনতা সংঘর্ষের সেই রক্তাক্ত ছবি।
সেনার জরুরি অবস্থা অগ্রাহ্য করেই এ দিন ফের মিশরের পথে নেমে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন অসংখ্য মুরসিপন্থী। তাঁদের সঙ্গে সেনার দফায় দফায় সংঘর্ষও হয়। এ দিন শুধু কায়রোতেই মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৫০ জনের। দেশের অন্যান্য অংশেও বহু লোকের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সব মিলিয়ে শুধু চলতি সপ্তাহেই মৃতের সংখ্যাটা বাড়তে বাড়তে সাতশো ছাড়িয়েছে। সেনার সঙ্গে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুরসির সমর্থকদের সংঘর্ষ চরমে পৌঁছেছিল বুধবার। যার জেরে সে দিন নিহত হন অন্তত ৬৩৮ জন মানুষ। মুরসিপন্থী মুসলিম ব্রাদারহুডের অবশ্য দাবি, সরকার যা বলছে, তার চেয়ে নিহতের সংখ্যা আট-ন’গুণ বেশি! মুসলিম ব্রাদারহুড এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘সেনাবাহিনীর সাম্প্রতিক দমনপীড়নে আমাদের সঙ্গীরা শহিদ হয়েছে। দুঃখ আর বেদনা সত্ত্বেও এখন আমাদের মূল লক্ষ্য ওদের শেষ করা।’ |
বুধবারের ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার ফের পথে নেমেছিলেন বিক্ষোভকারীরা। মুসলিম ব্রাদারহুডের মুখপাত্র গেহাদ-আল-হাদাদ টুইটারে আগেই হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়েছিলেন: ‘শুক্রবার নমাজের পরে কায়রোর সব মসজিদ থেকে সেনা-বিরোধী মিছিল বার হবে। আসবে রামসেস স্কোয়ারের দিকে।’ সেই মতো শয়ে শয়ে বিক্ষোভকারী জরুরি অবস্থা অগ্রাহ্য করে জড়ো হতে থাকেন এ দিন। তাদের হটাতে আক্রমণাত্মক হয় সেনাও। রামসেস স্কোয়ার যেন রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়। মুহূর্মুহূ গুলির শব্দ, কালো ধোঁয়া গ্রাস করেছে আকাশ। তার মধ্যেই জুতো হাতে স্লোগান দিচ্ছেন মুরসিপন্থীরা ‘সেনা কম্যান্ডার জেনারেল আব্দেল ফতা আল সিসি নিপাত যাক’।
বিক্ষোভকারীদের হটাতে কায়রোর প্রধান সড়কগুলিতে নামানো হয়েছে ২২টি সশস্ত্র যান। মুবারক বিরোধী বিক্ষোভের মূল স্থান তাহরির স্কোয়ারে প্রবেশপথ বন্ধ তারের বেড়াজালে। সরকারি কোনও সম্পত্তি নষ্ট করার চেষ্টা করলেই সঙ্গে সঙ্গে গুলি করার নির্দেশ দিয়েছে দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। নতুন করে হিংসার খবর মিলেছে আলেকজান্দ্রিয়া এবং টানটা থেকেও। বিক্ষোভকারীরা টানটায় সরকারি ভবনে ঢোকার চেষ্টা করছিলেন। পাখি মারার গুলি এবং কাঁদানে গ্যাস দিয়ে পুলিশ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে তাঁদের। গিজা শহরে সরকারি ভবনে আগুন লাগিয়ে দেন মুরসি-সমর্থকরা। টিভি ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, বোমা মেরে বাড়িগুলো উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টাও করছেন তাঁরা। দেশ জুড়ে পোড়ানো হয়েছে ২৯টি গির্জা। |
শুক্রবার যাঁরা পথে নেমেছিলেন, তাঁদের মধ্যে ২৮ বছরের সারা আহমেদ বললেন, “এক দিন তো মরতেই হবে। ঘরে বসে মরার চেয়ে নিজের অধিকারের জন্য মরব। বন্দুককে আর ভয় করি না।” ব্রাদারহুড নেতা আল-হাদাদ তাঁদের বলেন, “একের পর এক ধাক্কা। কারাবাস আর এত প্রাণহানি। আমরা এতটাই তেতে রয়েছি, কে ঠেকাবে আমাদের?” মুবারক-বিরোধী বিক্ষোভের মতো এ বারও দেশের ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলিতে হামলা ও লুঠপাঠের ঘটনা ঘটছে। যার জেরে যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মিশরের জনপ্রিয় প্রদর্শশালা মালাউই ন্যাশনাল মিউজিয়াম। প্রতিবাদ জানাতে প্রথমে ওই প্রদশর্শালার বাগানে বসে পড়েন বেশ কিছু মুরসি-সমর্থক। তার পর ওই ভবনের ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেন তাঁরা। দেওয়াল ভেঙে দিয়ে সেখানকার প্রত্নসামগ্রী নষ্ট করা হয়। চুরিও গিয়েছে বেশ কিছু মূল্যবান জিনিস।
বিদ্রোহের চেহারা দেখে দেশের ভিতরেই অনেকে আশঙ্কা করছেন, যে পুলিশ-রাষ্ট্র ত্রিশ বছর ধরে হোসনি মুবারককে ক্ষমতাসীন রেখেছিল, মিশর আবার সেই পথেই হাঁটছে না তো? যে কারণে মুরসিপন্থীদের বিক্ষোভে অসন্তুষ্ট মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা জানিয়েছেন, কায়রোর সঙ্গে স্বাভাবিক সহযোগিতার সম্পর্ক বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না। মিশরকে আগামী মাস থেকে আমেরিকা আর কোনও সামরিক সাহায্যও করবে না।
|