মিশরে জরুরি অবস্থা, সংঘর্ষে নিহত ১২৪
ক মাসের জন্য জরুরি অবস্থা জারি হয়ে গেল মিশরে। সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করার পরে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুরসির সমর্থকদের সঙ্গে রোজই সংঘর্ষ চলছিল। বুধবার সেটা প্রায় যুদ্ধের চেহারা নেয়। অন্তত ১২৪ জনের মৃত্যুর পরে এ দিন আন্তর্জাতিক সময় দুপুর দু’টোর সময় অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আদলি মনসুর জাতীয় টেলিভিশনে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে দেন!
এ রকম যে ঘটতে পারে, সেটা অবশ্য সকাল থেকেই আশঙ্কা করা হচ্ছিল। বুধবার সাতসকালেই মিশর হয়ে উঠেছিল যুদ্ধক্ষেত্র। ধোঁয়ায় ছেয়ে গিয়েছে আকাশ। মাথার উপরে পাক খাচ্ছে সেনা বিমান। ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে ভাঙা তাঁবুগুলো। গোলাগুলির শব্দে কান পাতা দায়।
প্রাক্তন প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতায় ফেরানোর দাবিতে কায়রোয় দু’টি বড় জমায়েতে বসেছিলেন মুরসি সমর্থকরা। এ দিন ভোরেই এই দুই শিবির গুঁড়িয়ে দিতে আসরে নামে সেনাবাহিনী। সংঘর্ষে অন্তত ১২৪ জনের মৃত্যু হয়। যদিও মুরসি সমর্থক মুসলিম ব্রাদারহুডের দাবি, নিহতের সংখ্যা ২০০০-এর কম নয়। আহত দশ হাজার। এই পরিস্থিতিতে মিশরে জরুরি অবস্থা জারি করে সামরিক সরকার। তার পরেই ভাইস প্রেসিডেন্ট মহম্মদ এল বারাদেই ইস্তফা ঘোষণা করেছেন। বারাদেই মার্কিন-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। প্রতিবাদীদের উপরে সেনা-আক্রমণ এবং জরুরি অবস্থা জারির পদক্ষেপ মার্কিন প্রশাসন মোটেই ভাল চোখে দেখছে না। তবে তারা যে মুরসিকে ফিরিয়ে আনারও পক্ষে নয়, সেটাও জানিয়েছে হোয়াইট হাউস।
কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের নাহদা ক্যাম্পে হত মুরসি সমর্থক। ছবি: রয়টার্স
এ দিন মুরসিপন্থীদের দু’টি জমায়েতের একটি বসেছিল কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে নাহদা ক্যাম্পে। অপেক্ষাকৃত বড় শিবিরটি ছিল কায়রোর পূর্বদিকে রাবা অল-আদাওইয়া মসজিদের কাছে। গত ছ’সপ্তাহ ধরে ছোট ছোট তাঁবু খাটিয়ে ছেলে-মেয়ে-পরিবার নিয়ে এখানেই উঠে এসেছিলেন হাজার খানেক মুরসি সমর্থক। শহরের মধ্যে এমন মুক্তাঞ্চল বরদাস্ত করা হবে না, আগেই হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছিল। ফলে রমজান শেষের পর যে কোনও মুহূর্তে আক্রমণ নেমে আসতে পারে, সেই আশঙ্কা ছিলই।
সকাল সাড়ে আটটার মধ্যেই সেনাবাহিনী নাহদা চত্বরখালি করে দেয়। তবে রাবা-য় সেনাবাহিনী আসছে খবর পেয়ে, বালির বস্তা, গাছের গুঁড়ি রাস্তায় ফেলে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন ব্রাদারহুড সমর্থকরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র খালেদ আহমেদ জানাচ্ছিলেন, “কাঁদানে গ্যাসের বৃষ্টি হচ্ছে। ভিতরে কোনও অ্যাম্বুল্যান্স নেই। এখানে ঢোকার সমস্ত পথ বন্ধ করে দিয়েছে সেনা। ভিতরে অনেক মা বাচ্চাদের নিয়ে আটকে।” শিক্ষক সালেহ আবদুল্লা আজিজ বলেন, “সকাল সাতটা নাগাদ ওরা এল। উপরে হেলিকপ্টার আর নীচে বুলডোজার। শিশুদের দেখেও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ার আগে দু’বার ভাবেনি।” সংঘর্ষের খবর আনতে গিয়ে প্রাণ যায় দুই সাংবাদিকেরও। তার মধ্যে ব্রিটিশ সংবামাধ্যমের ক্যামেরাম্যানও রয়েছেন। ২০১১ থেকেই টালমাটাল দশা মিশরের। তিন দশক একনায়কতন্ত্র চালিয়ে ক্ষমতাচ্যুত হন প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারক। প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্বভার নেন মহম্মদ মুরসি। দেশ জুড়ে দুর্নীতি ও আর্থিক বেহাল দশার জন্য অশান্তি দানা বাধে মিশরে। মুরসির দল মুসলিম ব্রাদারহুড শরিয়তি আইন জোর করে দেশের উপর চাপিয়ে দিতে চাইছে, এই অভিযোগও ওঠে। তিন জুলাই সেনা অভ্যুত্থানে গদিচ্যুত হন মুরসি। সামরিক সরকার দায়িত্ব নেয়। মুরসি সমর্থক ও বিরোধীদের সংঘর্ষ চলছেই।
মুরসি-সমর্থকদের বিরুদ্ধেও বিরোধীদের অভিযোগ আছে। ‘ন্যাশনাল স্যালভেশন ফ্রন্ট’-এর মুখপাত্র জানান, “ব্রাদারহুড সমর্থকরা ৪৮ দিন শহরের দু’টি জায়গা জমায়েতের নামে আটকে রেখেছেন। অতর্কিতে সেনা বাহিনীর নানা ভবনও তাঁরা আক্রমণ করছেন। শান্তিপূর্ণ জমায়েতের দাবি করলেও তা শান্তিপূর্ণ নয়।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.