সমুদ্রের বুকে দাঁড়িয়ে থাকা লাইটহাউসটাকে নিয়েই কল্পনার জগৎ ছিল ছোট্ট মেয়েটার। আর ছিল রং-পেনসিল-তুলি-কাগজের সঙ্গে খেলার নেশা। এক দিন বড় ডিজাইনার হওয়ার স্বপ্ন দেখত সে।
জাপানের শিয়াসাকি শহরে সমুদ্রের ধারের একটা ছোট্ট বাড়িতে রূপকথার গল্পের মতোই বেড়ে উঠছিল ছোট্ট মেয়ে হিমেকা সুজুকি। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় ঘরের জানলা দিয়ে দেখা যাওয়া লাইট হাউসটারই ছবি এঁকে পুরস্কারও জিতে নিয়েছিল একটি জাতীয় প্রতিযোগিতায়। কিন্তু হঠাৎই এক দিন সব এলোমেলো হয়ে গেল। ২০১১ সালের ১১ মার্চ। বছর দশেকের হিমেকা স্কুল থেকে ফেরার সময় রোজকার মতোই গিয়েছিল দাদু-ঠাকুমার বাড়ি। আর সে দিন বিকেলেই ভয়াবহ সুনামির তোড়ে তার ঠাকুমার সঙ্গে সমুদ্রে ভেসে গিয়েছিল ছোট্ট হিমেকা। দিন সাতেক পরে তার সেই প্রিয় লাইট হাউসের নীচ থেকেই মিলেছিল দেহ।
এর ক’দিন পরেই হিমেকার ঘর থেকে একটি চিঠি খুঁজে পান তার বাবা-মা, তাকাশি এবং মিকিকো। সেই সময় থেকে দশ বছর পরের বড় হয়ে যাওয়া হিমেকাকে উদ্দেশ করে চিঠিটা লিখেছিল হিমেকা নিজেই। “তুমি হয়তো এখন এক জন ডিজাইনার হিসেবে কাজ করছ, অথবা ডিজাইনিং নিয়েই পড়াশোনা করছ কাজ করবে বলে।” লেখা রয়েছে সেই চিঠিতে। |
আজও সেই চিঠিটি দেখলেই থমকে যায় হিমেকার বাবা-মা তাকাশি-মিকিকোর পৃথিবী। সন্তানকে বাঁচাতে না পারার যন্ত্রণা কুরে কুরে খায় তাঁদের। তবে সব দুঃখ কষ্ট সরিয়ে রেখে হিমেকার স্বপ্নকে সত্যি করার শপথ নিয়েছেন তাঁরা। হিমেকার জন্য পঁচিশ লক্ষ ইয়েন ক্ষতিপূরণ মিলেছিল জাপান সরকারের তরফে। সেই অর্থ কাজে লাগিয়েই একটি অভিনব উদ্যোগ নিয়েছেন।
হিমেকার আঁকা সেই লাইটহাউসের ছবিটি রুমালে ছাপিয়ে বিক্রি করার ব্যবস্থা করেছেন তাঁরা। বন্ধুদের সঙ্গে প্রিয় লাইটহাউসে আনন্দ করছে হিমেকা। উজ্জ্বল হলুদ আকাশে কমলা সূর্য, ডানা মেলে উড়ছে সি-গাল। আকাশের সঙ্গে নীল সমুদ্র আর সবুজ পৃথিবী মিশে গিয়েছে সেই ছবিতে। হিমেকার হাসিখুশি ছটফটে চরিত্রের মতোই রঙিন ছবিটি। ছবিটিকে রুমালে ছেপে ৮০০ ইয়েন দামে বিক্রি করতে শুরু করেছেন তাকাশি-মিকিকো। সংগৃহীত টাকার পুরোটাই দেওয়া হবে সুনামিতে ক্ষতিগ্রস্ত শিশুদের সাহায্য প্রকল্পে। সাহায্য করা হবে সুনামিতে সর্বহারা হয়ে যাওয়া পরিবারগুলিকে।
ছবিটি সম্পর্কে হিমেকার বাবা তাকাশি বলেছেন, “ও যে ভাবে লাইটহাউসের ছবিটা এঁকেছে, সে ভাবে আমরা কখনও দেখিইনি ওটাকে। ও যেন স্বর্গ থেকে বসে এঁকেছে লাইট হাউসটাকে।”
তিনি আরও বলেন, “খুব মিষ্টি মেয়ে ছিল হিমেকা। মাত্র দশ বছর বয়সেই ফুরিয়ে গেল ওর জীবন। কিন্তু এই রুমালের মাধ্যমে আরও বহু দিন বেঁচে থাকুক ও, ওর ডিজাইনার হওয়ার স্বপ্ন।” |