চিনে নজরদারি, মার্কিন বিমানকে ওড়িশায় ঘাঁটি গড়তে দেন নেহরু
চিনের উপরে নজরদারি চালানোর জন্য জওহরলাল নেহরু মার্কিন গুপ্তচর বিমানকে ভারতের বিমানঘাঁটি ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিলেন বলে দাবি করল একটি মার্কিন রিপোর্ট। সেই রিপোর্ট বলছে, ১৯৬২-র যুদ্ধে চিনের কাছে পর্যুদস্ত হওয়ার পরে ১৯৬৩ সালে নেহরু এই অনুমতি দিয়েছিলেন। আর তার পর ১৯৬৪ সালে ওড়িশার চারবাটিয়ায় একটি বিমানঘাঁটিতে জ্বালানি ভরেছিল, এমনকী ঘাঁটিও গেড়েছিল মার্কিন গুপ্তচর বিমান।
আমেরিকার তথ্যের অধিকার আইনবলে সম্প্রতি মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ-র কাছ থেকে গুপ্তচর বিমানের উড়ান সম্পর্কিত বেশ কিছু গোপন নথি হাতে পেয়েছে ওয়াশিংটনে স্বাধীন ভাবে কর্মরত সংস্থা ন্যাশনাল সিকিওরিটি আর্কাইভ। ১৯৫৪ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত সময়সীমার ওই সব তথ্যের মধ্যেই রয়েছে ভারতে মার্কিন গুপ্তচর বিমানের কার্যকলাপ সংক্রান্ত খবরাখবর।
সিআইএ-র রিপোর্ট বলছে, ১৯৬২ সালের অক্টোবরে জম্মু-কাশ্মীর ও তৎকালীন উত্তর-পূর্ব সীমান্ত এজেন্সি (নেফা) এলাকায় ভারতীয় সেনাকে বিধ্বস্ত করেছিল চিনা বাহিনী। এই অবস্থায় নেহরু আমেরিকার কাছ থেকে সামরিক সাহায্য চান। কিন্তু সেই সংক্রান্ত আলোচনার সময় মনে হয়েছিল, চিনা আগ্রাসনের যে বিবরণ ভারত দিচ্ছে, তা যথাযথ নয়। তখন ভারতে নিযুক্ত তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত জন কেনেথ গলব্রেথ গুপ্তচর বিমানে নজরদারির প্রস্তাব দেন। যাতে বোঝা যাবে সত্যিই কতটা এলাকা চিন দখল করেছে।
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ’৬২-র নভেম্বরে তাইল্যান্ডের তাখলি ঘাঁটি থেকে প্রথম ভারত-চিন সীমান্তে নজরদারি চালায় মার্কিন গুপ্তচর বিমান। সেই সময় মায়ানমারের (তৎকালীন বর্মা) উপর দিয়ে মার্কিন বিমানের ওড়ার অনুমতি ছিল না। ফলে ইউ-২ বিমানটিকে বঙ্গোপসাগর ও পূর্ব ভারত হয়ে আসতে হয়। যে কারণে ভারতের আকাশসীমায় জ্বালানি ভরার প্রয়োজন হয় তার। ১১ নভেম্বরই নেহরু সেই অনুমতি দিয়েছিলেন বলে দাবি সিআইএ-র। মাঝ-আকাশে ভরা হয় জ্বালানি।
এর পর ১৯৬৩-র এপ্রিলে ভারতের একটি বিমানঘাঁটি ব্যবহার করার প্রস্তাব দেয় সিআইএ। ৩ জুন ভারতের রাষ্ট্রপতি সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের সঙ্গে বৈঠকের সময় প্রসঙ্গটি তোলেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি। ঠিক হয় চারবাটিয়ায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার একটি ঘাঁটি মেরামত করে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে আমেরিকাকে।
চারবাটিয়া থেকে প্রথম ইউ-২ বিমান ওড়ে ১৯৬৪ সালের ২৪ মে। এর তিন দিন পরেই নেহরু মারা যান। ফলে সাময়িক ভাবে বন্ধ হয়ে যায় উড়ান। মার্কিন বিমান এবং বিমানচালক চারবাটিয়া ছেড়ে গেলেও খরচ বাঁচাতে থেকে যান অন্য কর্মীরা। সে বছরই ডিসেম্বর মাসে ভারত-চিন সীমান্তে ফের উত্তেজনা মাথাচাড়া দিলে চারবাটিয়ায় ফিরে আসে মার্কিন গুপ্তচর বিমান। তিন বার নজরদারি চালায় সীমান্তে। তবে তত দিনে তাইল্যান্ডের তাখলিই ইউ-২র মূল ঘাঁটি হয়ে উঠেছিল বলে রিপোর্টে জানানো হয়েছে। শেষ পর্যন্ত ১৯৬৭-র জুলাইয়ে চারবাটিয়া ব্যবহার করা বন্ধ করে দেয় আমেরিকা।
তবে নেহরুর অনুরোধই ভারত-চিন সীমান্তে নজরদারির একমাত্র কারণ ছিল না। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারতে ঘাঁটি গেড়ে কাজাখস্তানে সোভিয়েত ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি এবং পশ্চিম চিনেও নজরদারি চালানোর পরিকল্পনা ছিল সিআইএ-র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.