সিন্ধুরক্ষকে উদ্ধার পাঁচটি দেহ, আর আশা দেখছে না নৌসেনা
বিস্ফোরণে তলিয়ে যাওয়া ডুবোজাহাজ আইএনএস সিন্ধুরক্ষকের ভেতর থেকে শুক্রবার পাঁচ জনের দেহ উদ্ধার করেছে নৌবাহিনীর উদ্ধারকারী দল। ওই পাঁচটি দেহই এমন ভাবে পুড়ে গিয়েছে, যে সেগুলিকে দেখে শনাক্ত করা অসম্ভব। তাই ডিএনএ পরীক্ষার ব্যবস্থা হচ্ছে। তবে নৌবাহিনীর তরফে আজ বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, খুঁজে পাওয়া দেহগুলির যা অবস্থা এবং ডুবোজাহাজটি যে ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা দেখে নিশ্চিত হয়েই বলা যায় যে, সেটির ভেতর থেকে কাউকে জীবন্ত উদ্ধার করার সম্ভাবনা নেই।
মঙ্গলবার ভোররাতে মুম্বইয়ে নৌবাহিনীর বন্দরের অদূরে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় পরপর তিনটি বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের জেরে তলিয়ে যায় নৌবাহিনীর প্রথম সারির এই ডুবোজাহাজটি। সেই সময়ে তাতে যে ১৮ জন ছিলেন, তাঁদের নামের তালিকা গত কালই প্রকাশ করা হয়েছে। এঁদের মধ্যে রয়েছেন দুর্গাপুরের মলয় হালদার। জুলাই মাসের শেষেই পদোন্নতি হওয়ার পর সিন্ধুরক্ষকে মোতায়েন হয়েছিলেন ২২ বছরের এই যুবক। তাঁর প্রতিবেশীরা আজও বলছিলেন, ডুবোজাহাজের ভেতরে কোনও ঘরে মলয় আটকে আছেন বলে আশা করছেন তাঁরা।
কিন্তু নৌবাহিনীর আজকের বিবৃতি আর কোনও আশা দেখাচ্ছে না। সেটিতে বলা হয়েছে, “সাবমেরিনটির কন্ট্রোল রুম এলাকা এমন ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যে, তা দেখে মনে হচ্ছে, সামনের দিকে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের কারও দেহ মেলার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ। বিস্ফোরণ আর উত্তাপে ইস্পাত গলে গিয়েছে। হয়তো দেহগুলিও পুড়ে গিয়েছে।”
সিন্ধুরক্ষক দুর্ঘটনায় নিখোঁজদের মধ্যে রয়েছেন এঁরা

মলয় হালদার

টিমোথি সিংহ

নরোত্তম দেউড়ি
—নিজস্ব চিত্র
এই অসহ্য উত্তাপের জন্যই বুধবার পর্যন্ত ভাঙা ডুবোজাহাজে ঢুকতেই পারেননি ডুবুরিরা। ভেতরের উত্তাপে জল ফুটছিল। এমনিতেই ডুবোজাহাজে জায়গা থাকে অল্প। তার ওপর বিস্ফোরণের অভিঘাতে ধাতব যন্ত্রপাতি বিপজ্জনক ভাবে বেঁকেচুরে গিয়ে আর নড়াচড়ার জায়গা প্রায় রাখেনি। দরজাগুলো এঁটে গিয়েছে। তেল আর কাদা মেশা ঘোলা জল চারদিকে। শক্তিশালী আন্ডার-ওয়াটার ল্যাম্প জ্বেলেও প্রায় কিছুই দেখা যাচ্ছে না। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মুখপাত্র নরেন্দ্র ভিসপুটে বলেন, “ধীরে ধীরে উদ্ধারকাজ চালাতে হচ্ছে। আমাদের ডুবুরিরা চব্বিশ ঘণ্টা খাটছেন।” তিনি জানান, সিন্ধুরক্ষক থেকে জল বার করে সেটিকে ভাসিয়ে তোলার চেষ্টাও চলছে, তবে মৃতদেহের খোঁজটাই আপাতত প্রধান লক্ষ্য।
দুর্ঘটনার সম্ভাব্য কারণ নিয়ে নৌবাহিনীর বিবৃতিতে এ দিন আর কিছু বলা হয়নি। ইতিমধ্যেই তদন্ত কমিটি গড়া হয়েছে। বুধবার প্রাথমিক রিপোর্টে বলা হয়েছিল, ডুবোজাহাজটির সামনের দিকের একটি কেবিনে টর্পেডো রাখা ছিল। বিস্ফোরণ ঘটেছিল সেখানেই। বস্তুত, কয়েকটি সূত্রের দাবি, সে দিন দুর্ঘটনার সময়ে ডুবোজাহাজটিতে যাবতীয় অস্ত্র (অর্থাৎ টর্পেডো, ক্ষেপণাস্ত্র ইত্যাদি) মজুত ছিল। পরিভাষায় এই অবস্থার রণতরীকে বলে ‘লোডেড’। স্বভাবতই আগুন লাগার পরে পরিস্থিতিটা আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে।
এই প্রসঙ্গেই উঠে আসছে টিমোথি সিংহের কথা। সিন্ধুরক্ষকের এই ২৯ বছরের তরুণের বাড়ি শিলচর শহরের কাছে, পয়লাপুলে। নৌবাহিনীর তরফে জানানো হয়েছে, পেটি অফিসার টিমোথি সে দিন সিন্ধুরক্ষকে বিস্ফোরণের পরেও নিজেকে বাঁচাতে জলে ঝাঁপ দেননি। বরং টর্পেডো ও ক্ষেপণাস্ত্রগুলোকে বাঁচাতে তিনি তখন সাবমেরিনের ভেতরে, অস্ত্রাগারের দিকে চলে যান। সেখানেই পরপর বিস্ফোরণ হয়। মঙ্গলবার বাবাকে ফোনে টিমোথি জানিয়েছিলেন, স্বাধীনতা দিবসে আরব সাগরে টহল দেবেন। দুর্ঘটনা ঘটে সেই রাতেই। আর ১৫ অগস্ট টিমোথির বাবা-মা ছেলের খোঁজে পাড়ি দেন মুম্বই।
অসমেরই উত্তর লখিমপুরের যুবক, ২১ বছরের নরোত্তম দেউড়ি ক’দিন আগেই ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন ‘কর্মস্থল’ সিন্ধুরক্ষকের ছবি। শেষ দিককার ছবিগুলো কলকাতার। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল আর পার্ক স্ট্রিট গোরস্থান। কলকাতা হয়েই মুম্বই গিয়েছিলেন নরোত্তম।
দুর্গাপুরে মলয়দের ডিপিএল কলোনির ই-২৬ নম্বর বাড়িটায় এখন তালা। তবু মাঝেমধ্যেই সামনে ভিড় করছেন পড়শিরা। বাড়িতে খবর পৌঁছেছিল বুধবার সকালে। দুপুরেই ছেলের খোঁজে সপরিবার মুম্বই রওনা হয়ে যান দুর্গাপুর প্রজেক্টস লিমিটেডের কর্মী মৃণাল হালদার। আশপাশের লোকজন তখনও সে ভাবে জানতে পারেননি। কিন্তু বৃহস্পতিবার তালিকা প্রকাশের পর আর কিছুই গোপন থাকেনি।
মানকরের একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ইলেকট্রনিক্স নিয়ে পড়াশোনা করতে করতেই ২০১১ সালে নৌবাহিনীতে চাকরি পেয়ে যান মলয়। ছেলেবেলার বন্ধু শুভজিৎ মুখোপাধ্যায় জানান, ৪ জুন মলয় বাড়ি এসেছিলেন। ২৯ জুন তাঁকে দুর্গাপুর স্টেশনে বাঘ এক্সপ্রেসে তুলে দেন শুভজিৎ। তাঁর কথায়, “বলেছিল বিশাখাপত্তনমে বিভাগীয় পরীক্ষা দিয়ে চলে যাবে মুম্বই। জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে মলয় ওই ডুবোজাহাজে যোগ দেয়। সকালে মুম্বইয়ে ওর বাবাকে ফোন করেছিলাম। শুধু কাঁদছেন।” পাশের বাড়ির ছায়া চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ছোট থেকেই মলয় পড়াশোনা, খেলাধুলোয় তুখোড়। সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। কী যে হল ভাবতেই পারছি না।”

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.