ওষুধের দাম কমেনি, ফের
ছায়া গবেষণা-বিতর্কের
কেন্দ্রের ঘোষণা ছিল, ২৯ জুলাই থেকে দেশে ১৫১টি ওষুধের দাম কমবে। সময়সীমার দু’সপ্তাহ পেরিয়ে গেল, অথচ কোনও দোকানে নতুন দামে ওষুধ বিক্রি হচ্ছে না! বরং বিষয়টি নিয়ে সরকার ও প্রস্তুতকারীদের মধ্যে চলছে চাপান-উতোর, যা মীমাংসার আশু ইঙ্গিত নেই।
দাম না-কমার জন্য কেন্দ্রীয় কর্তারা আঙুল তুলছেন প্রস্তুতকারীদের দিকে। তাঁদের অভিযোগ: ১৪টি ওষুধ সংস্থা এবং প্রস্তুতকারীদের দু’টি সংগঠন মূল্যহ্রাসের বিরোধিতায় এককাট্টা হয়ে সিদ্ধান্তটি রুখে দিচ্ছে। অন্য দিকে প্রস্তুতকারীদের বক্তব্য, প্রক্রিয়াটি তারা ইতিমধ্যে শুরু করেছে। কিন্তু তারা এ-ও মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, উৎপাদনের বিক্রয়মূল্য অযৌক্তিক ভাবে কমালে সংস্থার নিজস্ব গবেষণায় (রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) সরাসরি প্রভাব পড়বে। টান ধরবে গবেষণাখাতে লগ্নিতে। আখেরে সাধারণ মানুষেরই ক্ষতি হবে। সেই পুরনো বিতর্ক। রোগী-স্বার্থে দাম কমালে কি গবেষণা বা গুণমানের সঙ্গে আপসের দরজা খুলে যায়? সম্প্রতি কয়েকটি জীবনদায়ী ওষুধের উপরে নোভার্টিসের মতো কিছু বহুজাতিক সংস্থার পেটেন্ট-স্বত্ব বাতিলের প্রেক্ষাপটে প্রশ্নটি আলোড়ন ফেলেছিল। এ বারও বৃহৎ প্রস্তুতকারীদের তরফে মূলত ওই যুক্তিই দেখানো হচ্ছে। উপরন্তু দেওয়া হচ্ছে হুঁশিয়ারি সরকার তাড়াহুড়ো করলে তারা বাজার থেকে পুরনো স্টক তুলে নিতে বাধ্য হবে। তাতে ওষুধের সাময়িক সঙ্কট দেখা দিতে পারে!
সরকার অবশ্য হুমকিকে তেমন আমল দিচ্ছে না। কেন্দ্রীয় ডেপুটি ড্রাগ কন্ট্রোলার রবি মেননের আশ্বাস, এ সব কিছু হবে না। “আসলে দাম কমানোটা মেনে নিতে বিভিন্ন বহুজাতিকের সমস্যা হচ্ছে। ওদের দিক থেকেই বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা চলছে।” বলছেন তিনি। কিন্তু গবেষণাটাও তো গুরুত্বপূর্ণ! তা যাতে ধাক্কা না-খায়, সরকার সে দিকে খেয়াল রাখছে তো?
ডেপুটি ড্রাগ কন্ট্রোলারের দাবি, “সব দিক মাথায় রেখেই ন্যাশনাল ফার্মাসিউটিক্যাল প্রাইসিং অথরিটি ওষুধের দাম স্থির করেছিল। প্রতিরোধ আসতে শুরু করায় নতুন করে ভাবনা-চিন্তা হচ্ছে। তাই সিদ্ধান্ত কার্যকর হতে হয়তো আরও সময় লাগবে।”
অর্থাৎ, আশা মিলিয়ে অচলাবস্থা। স্বাস্থ্য মন্ত্রক যখন ক্যানসার, যক্ষ্মা, হার্টের ওষুধ ও প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিকের দাম কমানোর কথা ঘোষণা করেছিল, আশার আলো দেখেছিলেন রোগী ও তাঁদের পরিজনেরা। বলা হয়েছিল, ক্যানসারের বিভিন্ন ওষুধে ১০%-৩০% দাম কমবে। অ্যান্টিবায়োটিকে কমবে ১০%-৫০%, হার্টের ওষুধে ২০%-৩০%, যক্ষ্মার ওষুধে ৩০%-৪০%। দৃষ্টান্ত হিসেবে স্বাস্থ্য-কর্তারা জানিয়েছিলেন, তিন ট্যাবলেটের অ্যান্টিবায়োটিকের যে পাতার দাম ৯৯ টাকা, সেটি হবে ৫৯ টাকা। হার্টের অসুখের ৮০ টাকার ওষুধ মিলবে ৪৫ টাকায়। আবার কেমোথেরাপির ২৫ হাজার টাকার এক কোর্স ওষুধের দাম হবে ১৬ হাজার।
ওষুধ-মূল্য হ্রাসের এ হেন উদ্যোগ অবশ্য অভিনব নয়। ইন্দিরা গাঁধীর আমলে দামকে চারটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। প্রথম শ্রেণিতে ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ওষুধগুলো, যার উৎপাদন খরচের উপরে ৭৫ শতাংশের বেশি লাভ রাখা যেত না। দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুনাফার ঊর্ধ্বসীমা ধার্য হয় ১০০%, তৃতীয় শ্রেণিতে ২০০%, চতুর্থ শ্রেণিতে যথেচ্ছ লাভের সুযোগ। রাজীব জমানায় সব ঢেলে সাজা হয়। নিয়ন্ত্রিত ও অনিয়ন্ত্রিত, দু’টি ভাগে ভাগ করে লাগাম দেওয়া হয় ৭৪টি ওষুধের মূল্যে। ১৯৯৫-এ কেন্দ্র নতুন করে ৭৫টি ওষুধের দাম বেঁধে দেয়।
‘ড্রাগ প্রাইসেস কন্ট্রোল অর্ডার, ২০১৩’ অনুযায়ী এ বারও বিবিধ ওষুধের মূল্য নিয়ন্ত্রণে বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে। তারই প্রথম দফায় ১৫১টি ওষুধের দর কমার কথা ছিল ২৯ জুলাই থেকে। অগস্টের মাঝামাঝি আরও ১৯৭টির দাম কমার কথা। কেন্দ্রীয় ড্রাগ কন্ট্রোলের এ-ও নির্দেশ: বেঁধে দেওয়ার এক বছরের মধ্যে দাম বাড়ানো যাবে না। বাস্তবে অবশ্য কোনও নির্দেশই ফার্মাসিতে পৌঁছয়নি। তাই পুরনো দামেই ওষুধ বিকোচ্ছে। প্রশাসনের কী বক্তব্য?
রাজ্যের ড্রাগ কন্ট্রোলার চিন্তামণি ঘোষের ব্যাখ্যা, “এটা কেন্দ্রের এক্তিয়ারে। যত দূর জানি, প্রথম দফার ১৫১টি ওষুধ নতুন দামেই বিক্রি হওয়া উচিত। হচ্ছে কি না, আমাদের অফিসাররা তা দেখবেন।”
ওষুধ বিক্রেতাদের সংগঠন ‘বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশন’-এর সাধারণ সম্পাদক তুষার চক্রবর্তীর দাবি, “প্রস্তুতকারীরা স্পষ্ট কিছু না-জানানো পর্যন্ত আমাদের পুরনো দামেই বেচতে হবে।” অন্য দিকে প্রস্তুতকারীদের তরফে ‘ইন্ডিয়ান ড্রাগ ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর দারা পটেল বলছেন, “দেশ জুড়ে লক্ষ লক্ষ বিক্রেতাকে নতুন মূল্য-তালিকা পৌঁছে দেওয়া কিংবা পুরনো দামের ওষুধ তুলে নেওয়ার ব্যবস্থা করা সহজ নয়। আরও সময় লাগবেই।”
দিন গোনা ছাড়া আমজনতার উপায় কী?

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.