নিজেদের প্রচারই বিরুদ্ধে গিয়েছে, মত সিপিএমে
গ্রামবাংলায় পরিবর্তনের ঢেউ যে এখনও অব্যাহত, পঞ্চায়েত ভোটের প্রাথমিক বিশ্লেষণে সে কথা মেনে নিচ্ছে সিপিএম।
শাসক দলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস ও কারচুপির অভিযোগ থেকে সরে না-এসেও সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব স্বীকার করছেন, দু’বছর আগে যে বড় সংখ্যক মানুষ রাজ্যে ‘পরিবর্তন’ এনেছিলেন, তাঁদের অধিকাংশ পঞ্চায়েতেও তৃণমূলকে ভোট দিয়েছেন। সোজা কথায়, মহাকরণে পরিবর্তন আনার পরে ভোটারেরা গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদেও পরিবর্তন আনতে চেয়েছেন বলে সিপিএম নেতৃত্বের ব্যাখ্যা। এ ক্ষেত্রে সিপিএমের প্রচার নিজেদেরই বিরুদ্ধে গিয়েছে বলে দলের মত।
সিপিএম ক্রমাগত প্রচার করে এসেছে, তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে দু’বছর পঞ্চায়েতে বামেদের কোনও কাজ করতে দেওয়া হয়নি। বিডিও-দের হাতে সরকার ক্ষমতা তুলে দিয়েছে। সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বের একাংশের মতে, এর ফলে ভোটারেরা মনে করেছেন, বামেদের ফের ক্ষমতায় আনলে একই অবস্থা হবে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, “সরকারে যাঁরা আছেন, পঞ্চায়েতের ক্ষমতাতেও তাঁরা না-থাকলে উন্নয়নের কাজ ব্যাহত হবে বলে মানুষ মনে করেছেন। তৃণমূলের সাফল্যের এটাই মূল কারণ। এ ক্ষেত্রে আমাদের প্রচারই আমাদের বিরুদ্ধে গিয়েছে।” পাশাপাশি তৃণমূলও প্রচার করেছে যে, বামফ্রন্টকে পঞ্চায়েতে জেতালে উন্নয়ন থমকে থাকবে। সিপিএমের কৃষক সভার এক নেতার অভিজ্ঞতা, “প্রচারে গিয়ে এই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে, আপনারা যখন পঞ্চায়েতের ক্ষমতায় এলে কাজ করতে পারবেন না, তখন অযথা আপনাদের ভোট দিয়ে কী লাভ?”
কৃষকদের আত্মহত্যা, ফসলের দাম না-পাওয়া, বিদ্যুতের দামবৃদ্ধি এবং সারদা কেলেঙ্কারি সব মিলিয়ে শাসক দল এ বার পঞ্চায়েত ভোটে কিছুটা ধাক্কা খাবে বলে সিপিএম নেতৃত্ব আশা করেছিলেন। কিন্তু ভোটের ফলে দেখা যাচ্ছে, হাতে-গোনা কয়েকটি জেলা এবং আরও কয়েকটির কিছু অংশ বাদ দিলে তৃণমূলের প্রতি জনসমর্থন আরও পোক্ত হয়েছে! বিশেষত, যে রাঢ়বঙ্গ একদা বামেদের গড় বলে পরিচিত ছিল, সেখানে সিপিএমের ফল ২০১১ তো বটেই, ২০০৮-র চেয়েও খারাপ। সেই বিপর্যয়ের ব্যাখ্যা হিসেবেই সিপিএম ভোটারদের ওই মানসিকতার বিষয়টি তুলে ধরছে।
সিপিএম নেতৃত্ব মেনে নিচ্ছেন, দলীয় ত্রুটি-বিচ্যুতিও পঞ্চায়েতে বিপর্যয়ের জন্য দায়ী। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পার্টির শুদ্ধকরণ হয়নি। নীতিগত ভাবে দল ঠিক করেছিল, নেতা-কর্মীদের বিনয়ী হতে হবে। ব্যক্তিগত ও দলীয় কাজে নৈতিকতা বজায় রাখতে হবে। সাধারণ মানুষের সঙ্গে জনসংযোগ নতুন করে গড়ে তুলতে হবে। কিন্তু রাজ্য কমিটির এক সদস্যের কথায়, “এগুলো স্রেফ খাতায়-কলমে থেকে গিয়েছে!”
দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর আর এক সদস্যের মতে, শুদ্ধকরণ উপরের দিক থেকে শুরু হওয়াই বাঞ্ছনীয়। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, দলের বেশ কয়েক জেলা স্তরের শীর্ষ নেতা রয়েছেন, যাঁদের নজরকাড়া উঁচু জীবনযাত্রা, দামি গাড়িতে ঘোরা, জনবিচ্ছিন্নতা, এমনকী দলেরই নিচু তলার কর্মীদের প্রতি দুর্ব্যবহার, অবজ্ঞা এ সব রোগ কাটেনি! ওই নেতার মন্তব্য, “ফলে যা হওয়ার তা-ই হচ্ছে!” তবে দলের অন্য এক অংশের মত, দল ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার পরেও ঔদ্ধত্য দেখিয়ে চলেছেন, এমন নেতা-কর্মীর সংখ্যা নেহাতই হাতে-গোনা। কিন্তু তৃণমূলের প্রতি যাঁরা আস্থা রেখেছেন, তাঁদের ভরসা এখনও সিপিএমের দিকে ফেরেনি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.