|
|
|
|
|
পশ্চিমে ক্রমশ নামছে জলস্তর
বৃষ্টির জল ধরে রাখায় জোর
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
|
ক্রমশ নীচে নামছে পশ্চিম মেদিনীপুরের জলস্তর। জেলার সর্বত্র বৃষ্টির জল ধরে রাখার ব্যবস্থা না করা গেলে আগামী দিনে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে বলে আশঙ্কা জেলা প্রশাসনের একাংশ আধিকারিকদের। বর্ষাকালে বছর তিন-চারেক আগেও যে এলাকায় ১৭-১৮ মিটার গভীরে পাইপ নিয়ে গেলে জলস্তর মিলত, পানীয় জলের প্রকল্প হত, এখন সেই এলাকায় প্রকল্পের জন্য এখন ২৪-২৫ মিটার গভীরে পাইপ নিয়ে যেতে হচ্ছে। পরিস্থিতি দেখে জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক মানছেন, “বৃষ্টির জল সংরক্ষণের উপর গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। এখন থেকে সতর্ক না হলে পরবর্তীকালে সমস্যা বাড়বে। তখন বিভিন্ন এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা দেখা দিতে পারে।” একই সঙ্গে তাঁর অভিমত, “জলস্তর নামলেও জলের অপব্যবহার বন্ধ হচ্ছে না। শহরের অনেক এলাকায় ট্যাপকল খোলা থাকে। এ বিষয়ে সকলের সচেতন হওয়া উচিত।”
সঙ্কট বাড়িয়ে কমছে বার্ষিক বৃষ্টির পরিমাণও। কেমন সেই চিত্রটা?
জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, পশ্চিমে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১ হাজার ৫৪২ মিলিমিটার। সেখানে ২০১২ সালে বৃষ্টি হয়েছে ১ হাজার ২২৪.৯ মিলিমিটার। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, “স্বাভাবিক বৃষ্টি হলে তেমন সমস্যা হত না। কিন্তু, বৃষ্টিপাতের পরিমাণও কমছে। ফলে, মাটির নীচ থেকে প্রচুর জল তোলা হচ্ছে। তবে সে ভাবে রিচার্জ হচ্ছে না। জল ‘রিচার্জ’ না হলে সমস্যা দেখা দেবেই।” পানীয় জলের উৎসে পৌঁছতে জেলার বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন গভীরতা পর্যন্ত পৌঁছতে হয়। ওই দফতরের জুন মাসের এক রিপোর্ট থেকে দেখা যাচ্ছে, মেদিনীপুর সদরে জলস্তর রয়েছে ২৪.০০ মিটার নীচে। অর্থাৎ, মাটি থেকে ২৪ মিটার গভীরে পৌঁছলে পানীয় জলের উৎস মিলবে। বিনপুর-২ ব্লকে যেমন পানীয় জল পেতে মাটি থেকে ২৫ মিটার গভীরে যেতে হবে।
সাধারণত, মে মাস থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়। সে সময় মাটির নীচে জল রিচার্জ হয়। তা-ও জুন মাসের রিপোর্টে জলস্তরের এমন ছবিটা উঠে এসেছে। বাস্তবে পরিস্থিতি আরও জটিল। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের কথায়, “এই পর্যবেক্ষণ নির্দিষ্ট কিছু এলাকার। বিনপুর ২ (বেলপাহাড়ি) ব্লকে এমন এলাকা রয়েছে, গরমের সময় যেখানে ১৪০-১৫০ মিটার গভীরে পাইপ লাইন নিয়ে যাওয়া হলেও সে ভাবে জলস্তর মেলে না। পাথুরে জমি থাকার ফলেই এই পরিস্থিতি।” এই সব এলাকায় নতুন জল প্রকল্প করতে গেলেও প্রশাসনকে নানা রকম সমস্যায় পড়তে হয়। পরিস্থিতি দেখে অবশ্য বৃষ্টির জল ধরে রাখার উদ্যোগ শুরু হয়েছে। বেশ কিছু প্রকল্প হচ্ছে। ‘জল ধরো, জল ভরো’ প্রকল্পের কাজ চলছে। এ জন্য পুকুর, চেক ড্যাম প্রভৃতি তৈরি হচ্ছে। জেলার উপর দিয়েই বয়ে গিয়েছে কংসাবতী, সুবর্ণরেখা। তাও বিস্তীণর্র্ এলাকায় সেচের জল পৌঁছয় না। পানীয় জলেরও সমস্যা রয়েছে। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক মানছেন, “পশ্চিম মেদিনীপুরের মতো জেলায় বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করেই বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়ণে জোর দেওয়া উচিত। প্রয়োজনে বৃষ্টির জলকে পানীয় জলে পরিণত করতে হবে।” ইতিমধ্যে জেলায় ‘ইন্টিগ্রেটেড ওয়াটার শেড ম্যানেজমেন্ট প্রোজেক্টে’র কাজ শুরু হয়েছে। এর ফলে, উঁচু এলাকা থেকে গড়িয়ে আসা জল ধরে রাখা যাবে। বর্ষার পরে সেই জল নানা কাজে ব্যবহার হতে পারে। সঙ্গে ভূমিক্ষয় রোধ হবে। এ জন্য প্রকল্প এলাকায় গাছ লাগানো হবে।
জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, “যে ভাবে জলস্তর নামছে, তাতে আগামী দিনে জল সকলের কাছে মূল্যবান হয়ে দাঁড়াবে। এখন থেকেই তার আঁচ মিলতে শুরু করেছে। পরিস্থিতি দেখে আমরাও বৃষ্টির জল ধরে রাখার জন্য কিছু প্রকল্প নিচ্ছি। কী ভাবে জল রিচার্জ করা যায়, তা দেখা হচ্ছে।” এখন বাজারে জল কিনতে পাওয়া যায়। ১৫-২০ টাকা দিলেই এক বোতল জল মিলবে। ধনী মানুষ না হয় জল কিনে নেবেন। কিন্তু গরিব মানুষ? বৃষ্টির জল ধরে রেখে তা ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা গেলেই সমস্যার সমাধান হতে পারে। ইতিমধ্যে এই উদ্যোগ শুরু হয়েছে।
|
কমছে বৃষ্টি |
জেলায় বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ১৫৪২
গত তিন বছরের হিসেব |
২০১০ |
১০০১.০১ |
২০১১ |
১৭১৭.০৯ |
২০১২ |
১২২৪.৯০ |
|
*মিলিমিটারে |
|
নামছে জলস্তর |
জঙ্গলমহলে ব্লক ভিত্তিক হিসেব |
• নয়াগ্রাম: ১৯ • বিনপুর ১:১৬.৯০
• বিনপুর ২: ২৫
• জামবনি: ১১.৯০
• ঝাড়গ্রাম: ১৮
• গোপীবল্লভপুর ১: ১২.৫০
• গোপীবল্লভপুর ২: ১২ |
*মিটারে
**জুন মাসের হিসেব |
|
|
|
|
|
|
|