বিয়াল্লিশের থানা দখল অভিযানের স্মৃতি ফিকে
শহিদ স্তম্ভে জমছে শ্যাওলা
‘ইংরেজ তুমি ভারত ছাড়ো’১৯৪২-এর অগস্ট আন্দোলনের এই স্লোগানে কেঁপে উঠেছিল গোটা দেশ। শহিদের রক্তে রাঙা হয়ে উঠেছিল দুই মেদিনীপুরের মাটি। স্মৃতির সরণি বেয়ে সে সব আজ ঝাপসা। স্বাধীনতা আন্দোলনের গৌরবময় অধ্যায় সংরক্ষণে না আছে কোনও প্রশাসনিক উদ্যোগ, না ব্যক্তিগত। ভারত ছাড়ো আন্দোলনে থানা দখল অভিযানের স্মৃতি বিজড়িত হলদিয়া মহকুমার সুতাহাটা ও মহিষাদল থানা রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে আজ জরাজীর্ণ। সুতাহাটা থানার পিছনে শহিদ স্তম্ভে জমছে শ্যাওলা।
সালটা ১৯৪২। ৯ অগস্ট দেশজুড়ে ইংরেজদের বিরুদ্ধে ‘ভারত ছাড়ো আন্দোলনের’ যে ঢেউ উঠল, তা আছড়ে পড়ল অবিভক্ত মেদিনীপুরেও। জেলার স্বাধীনতা সংগ্রামীরা সিদ্ধান্ত নেন ইংরেজদের ভারত ছাড়া করতে হলে থানা থেকে প্রশাসনিক ভবন দখল করতে হবে। সেই মতো ২৯ সেপ্টেম্বর জেলা জুড়ে শুরু হল থানা দখল অভিযান। ময়না থেকে মহিষাদল, সুতাহাটা থেকে ভগবানপুরএকের পর এক থানা দখলে এগিয়ে চললেন সংগ্রামীরা। আন্দোলন শুরুর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্রিটিশ পুলিশের গুলিতে শহিদ হলেন ৪৪ জন। তমলুক আদালত চত্বরে শহিদ হলেন অগ্নিকন্যা মাতঙ্গিনী হাজরা।
সুতাহাটা থানার পিছনে শহিদস্তম্ভ। —নিজস্ব চিত্র।
অগস্ট আন্দোলন চলাকালীন ঈশ্বরীবালা পাত্র, জনার্দন হাজরা, বিরাজমোহন দাসেদের তৈরি ‘বিদ্যুৎবাহিনী’ ও ‘ভগিনী সেনাদল’ সুতাহাটা থানা দখল করে জ্বালিয়ে দেয়। লেখক রাধাকৃষ্ণ বারীর লেখা ‘অবিভক্ত তমলুক মহকুমার স্বাধীনতা সংগ্রাম’ শীর্ষক বই থেকে জানা যায়, আন্দোলন শুরুর আগের দিন ২৮ সেপ্টেম্বর কুকড়াহাটি, চৈতন্যপুর, ডালিম্বচক-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার রাস্তা কেটে দেওয়া হয়েছিল। বেলা ২টোয় ৩০ হাজার মানুষের জনস্রোতে ভেসে যায় সুতাহাটা বাজার। ওই অভিযানের পূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন চিকিৎসক জনার্দন হাজরা। সুতাহাটা থানার বড়বাবু তখন তমলুকে অতিরিক্ত পুলিশের বন্দোবস্ত করতে ছুটে গিয়েছেন। থানায় থাকা ২ জন অফিসার ও ৪ জন সিপাইকে জনার্দন বাবু আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। তাঁদের থেকে কেড়ে নেওয়া হয় ৫টি রাইফেল। সেই সময় একটি ইংরেজ বিমান এলাকায় দু’টি বোমা নিক্ষেপ করে। কিন্তু তা গিয়ে পড়ে জলাজমিতে। উল্লসিত জনতা এরপর আগুন লাগিয়ে দেয় থানায়।
একই দিনে বিকেল থেকে শুরু করে রাত দু’টো পর্যন্ত চলেছিল ‘বিদ্যুৎবাহিনী’র মহিষাদল থানা দখলের লড়াই। থানায় পৌঁছনোর আগেই হিজলি টাইডাল খালের কাছে পুলিশের গুলিতে শহিদ হন বহু বিপ্লবী। এলাকার অশীতিপর বিপ্লবী সুভাষ সামন্তের কথায়, “আমরা সুন্দরা গ্রামের ক্যাম্প থেকে সুশীল ধাড়ার নেতৃত্বে রওনা হয়েছিলাম। পুলিশের গুলিবর্ষণে আমার সামনেই লুটিয়ে পড়ল ১২ জন। আমার বুকের বাঁ-দিক দিয়ে হাত হয়ে বেরিয়ে গেল গুলি। সুশীলদার চেষ্টায় তমলুক জেলে আমার চিকিৎসা হয়। এখনও বেঁচে আছি। সেই সব দিনের কথা আর কেউ মনে করে না।”
বস্তুত, এ সবের অস্তিত্ব এখন শুধু ইতিহাসের পাতায়। বাস্তবে সেই ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করেনি কেউ। সে দিনের সুতাহাটা থানা আজ বেহাল। স্বাধীনতার ৬৬ বছর পরেও সেখানে গড়ে ওঠেনি কোনও সংগ্রহশালা। ভরা শ্রাবণে থানার টিনের চালের ফুটো দিয়ে চুঁইয়ে পড়ে জল। থানার পিছনে ৪২’এর আন্দোলনের স্মৃতিতে ১৯৯২ সালের ৯ অগস্ট যে শহিদ স্তম্ভ বসানো হয়েছিল, আজ তাতে জমেছে শ্যাওলা। থানার সার্বিক পরিকাঠামোটাই ভেঙে পড়েছে। সংস্কার শেষ কবে হয়েছিল মনে নেই কারও। থানার এক এএসআই এর কথায়, “এত বছরেও কোনও কিছু হল না। চোখের সামনে বিপ্লবীদের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহ্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সরকারি উদ্যোগে এগুলো সংরক্ষণের ব্যবস্থা হলে ভাল লাগবে।” একই অবস্থা মহিষাদল থানার। থানায় আসার সরাসরি রাস্তা না থাকায় মূল সড়ক থেকে ঘুরপথে মোরাম রাস্তা ধরে পৌঁছতে হয় থানায়। জীর্ণ ভবনে শুধুমাত্র চালাটা বদলেছে। খড়ের ছাউনির জায়গায় অ্যাসবেসটস।
পূর্ব মেদিনীপুরের নতুন জেলাশাসক অন্তরা আচার্য আশ্বাস দেন, “খোঁজ নিয়ে দেখব। স্বাধীনতা আন্দোলনের ঐতিহ্য বাঁচাতে নিশ্চয়ই কিছু করা উচিত। আমি পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলব।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.