|
|
|
|
পরম্পরা অক্ষুণ্ণ রাখা পূজারার ভারতের
ড্রেসিংরুমে এ বার শ্যাম্পেনের ফোয়ারা |
রাজীব ঘোষ • কলকাতা |
হইচইয়ের শব্দে কান পাতা দায়। ফোনেই এই অবস্থা! সামনে থাকলে কী হত, কে জানে!
মহেন্দ্র সিংহ ধোনি, বিরাট কোহলির পর এ বার চেতেশ্বর পূজারার ভারতীয় দলও বজায় রাখল বিদেশের মাটিতে খেতাব জয়ের পরম্পরা। উল্লাসে কান ফাটবে না?
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জেতার পর বা জিম্বাবোয়েতে সিরিজ জিতে ভারতীয় দল যে উৎসবটা করেছিল, সেটা দেশবাসী দেখেছিলেন টেলিভিশনের দৌলতে। পূজারারা ভারত ‘এ’ বলে টেলিভিশন দেখায়নি। কিন্তু টেলিফোনের ওপ্রান্ত থেকে বুধবার সন্ধ্যায় যে বাঁধনহারা উচ্ছ্বাসের শব্দব্রহ্মটা ভেসে আসছিল, তাতেই পরিষ্কার টের পাওয়া গেল উৎসবের পরিবেশটা। বোঝা গেল, ফিঞ্চ, মার্শ, ম্যাক্সওয়েল, এনরিকে, ফাওয়াদ আহমেদদের অস্ট্রেলিয়া ‘এ’-কে ৫০ রানে হারিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজ চ্যাম্পিয়নরা ঠিক কতটা আত্মহারা। |
|
ফোনের ও পার থেকে যে ক্ষীণ আওয়াজটা ভেসে এল, তা মহম্মদ সামির। এই সে দিন দক্ষিণ আফ্রিকা ‘এ’-র বিরুদ্ধে ১১৯-এর ইনিংস খেলা অজি ওপেনার অ্যারন ফিঞ্চের স্টাম্প উড়িয়ে দিয়ে ও আর এক ওপেনার শন মার্শকে প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠিয়ে যিনি এ দিন অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসে ধস নামানো শুরু করেন, এ সেই সামি। এমনিতেই ক্ষীণকন্ঠি সামিকে বেশ চেঁচিয়েই বলতে হচ্ছিল, “এমন জিতে দারুণ লাগছে দাদা। কলকাতায় সবাই খুশি তো?” যখন মনের মতো উত্তর পেলেন, তখন বললেন, “আমরা (বোলাররা) আমাদের কাজটা ঠিকঠাক করেছি। তাতেই সাফল্য এল। আজ শুধু আমি নই, সবাই ভাল বল করেছে। ব্যাটসম্যানরা রোজ জেতাবে কেন? আমরাও তো আছি, না কি!”
ধোনির হাত ধরে বিদেশের মাটিতে জেতার যে অভ্যাসটা ভারতীয় দলে এসেছে, সেটা দেখা যাচ্ছে তাঁর দুই ‘ডেপুটি’ও ধরে রেখেছেন। কোহলি ৫-০ হোয়াইটওয়াশ করে এলেন জিম্বাবোয়ে থেকে। এ বার দক্ষিণ আফ্রিকার মাটি থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা ‘এ’ আর অস্ট্রেলিয়া ‘এ’-কে হারিয়ে ট্রফি জিতলেন পূজারা। টস জিতে প্রথমে ব্যাট করা ভারত ‘এ’ ২৪৩-এ শেষ হয়ে যাওয়ার পর সামির ২-৩০ ছাড়াও পূর্বাঞ্চলের আর এক উঠতি ক্রিকেটার, বোকারোর বাঁ হাতি স্পিনার শাহবাজ নাদিমের ৩-৩৪ ভারত ‘এ’ দলের জন্য ট্রফিটা নিশ্চিত করায় বড় ভূমিকা নেয়। দুই বোলারকে ভারতের জয়ের অন্যতম স্থপতি বলা ভুল হবে না। তবে এখানেই শেষ নয়। ঋদ্ধিমান সাহা আছেন যে! রোহিত শর্মার থ্রো ছোঁ মেরে নিয়ে মিচেল মার্শকে রান আউট করলেন যে ক্ষিপ্রতায়, সে ভাবেই দুই অজি টেল এন্ডারকে ফাঁদে ফেলে স্টাম্প করতে এক সেকেন্ডও দেরি করলেন না বাংলার উইকেটকিপার। দু’টিই নাদিমের বলে। “এ দিনের জয়ের অনেকটাই যদি পূর্বাঞ্চলের অবদান বলা যায়, তা হলে বিন্দুমাত্র ভুল হবে না বোধহয়”, প্রিটোরিয়ার এলসি ডেভিলিয়ার্স ওভালে দাঁড়িয়েই ফোনে বললেন ভারতীয় ‘এ’ দলের ম্যানেজার সুবীর গঙ্গোপাধ্যায়।
পরে খবর পাওয়া গেল, হোটেলে ফিরে বড়সড় এক পার্টিতে ঢুকে পড়েছেন রায়না, রোহিত, শিখর, ঋদ্ধি, রায়ডু-সহ দলের সকলেই। বাদ নেই কোচ লালচাঁদ রাজপুতও। মাঠে ট্রফি নেওয়ার সময় এক প্রস্থ শ্যাম্পেন-স্নান হয়েছিল। পার্টিতে আর এক প্রস্থ হল। হারুন লরগ্যাটের বোর্ডই সেই শ্যাম্পেন উপহার দিয়ে গিয়েছে পূজারাদের। তন্দুরি চিকেন ও চিকেন টিক্কা মসালা-সহ আরও কয়েক পদ ভারতীয় খানা নিয়ে আসার ব্যবস্থা করলেন সুবীরবাবু। মাঠে থাকতেই অবশ্য ভারতীয় বোর্ডের তরফে জগমোহন ডালমিয়া, সঞ্জয় পটেলদের শুভেচ্ছাবার্তা এসে পৌঁছে যায় ভারতীয় শিবিরে। |
|
প্রিটোরিয়ায় চ্যাম্পিয়নরা। |
শিখর ধবনের ৬২ ও দীনেশ কার্তিকের ৭৩-এ ভারত ২৪৩ করার পর প্রশ্ন উঠেছিল, জেতা যাবে তো? অস্ট্রেলিয়া ইনিংস শুরুর আগে রাজপুত বোলারদের বলেন, “কোনও চাপ নেই। উপভোগ করো। যে যার নিজের স্বাভাবিক বোলিংটা করো।” টোটকাটা সম্ভবত ভারতীয় বোলারদের চাপ হাল্কা করতে কাজে দেয়। সামি বলছিলেন, “লালুজি বললেন, লাইন আর লেংথটা বজায় রেখে যাও, তাতেই কাজ হবে। শুরু থেকে সেটাই করে গেলাম। এমন পাটা উইকেটে এ ছাড়া আর উপায় কী? ওদের ৫৩ রানে পাঁচ উইকেট ফেলে দেওয়ার পরই বুঝে গেলাম, ম্যাচ আমরাই জিতছি। আমি সৌভাগ্যবান যে, শুরুটা করতে পেরেছি। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা, এমন যেন বারবার করতে পারি!”
|
ধোনির নেতৃত্বে |
কোহলির নেতৃত্বে |
পূজারার নেতৃত্বে |
অক্টোবর, ২০১১- দেশের মাঠে ইংল্যান্ডকে ৫-০ উড়িয়ে দেওয়া।
অগস্ট, ২০১২ - শ্রীলঙ্কার মাটিতে ৪-১ সিরিজ জয়।
জুন, ২০১৩ - ইংল্যান্ডে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়।
জুন-জুলাই ২০১৩ - ক্যারিবিয়ানে ত্রিদেশীয় সিরিজে চ্যাম্পিয়ন। |
জুলাই, ২০১৩ - প্রথম দলের একাধিক ক্রিকেটারকে বাইরে রেখে জিম্বাবোয়েতে ৫-০ সিরিজ জয়। |
অগস্ট ২০১৩ ‘এ’ দলের ত্রিদেশীয় সিরিজে চ্যাম্পিয়ন। |
|
|
ট্রফি ছাড়াও যা পাওয়া গেল
বিশ্লেষণ: দীপ দাশগুপ্ত |
|
জাতীয় দল বাছতে সুবিধা
• বছর শেষে দক্ষিণ আফ্রিকাতেই ধোনিদের টেস্ট সিরিজ। সেই দল গড়ার আগে দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেটে আমাদের কোন ক্রিকেটারের ঠিক কী অবস্থা হতে পারে, তার আভাস বেশ খানিকটা পেয়ে গেলেন নির্বাচকরা। কারণ, ভারত ‘এ’ দলের সিংহভাগ ক্রিকেটারই জাতীয় দলের প্লেয়ার।
জেতাটা অভ্যাসে পরিণত করা
• ধবন, পূজারা-সহ এই চ্যাম্পিয়ন ‘এ’ দলের অনেকেই দক্ষিণ আফ্রিকায় টেস্ট সিরিজে যাবে। তার আগে সে দেশের পিচে ভারতীয়দের জেতার এই ধারাবাহিকতাটা আসল সময় ওদের কাজে দেবে।
‘মিথ’ ভেঙে পাওয়া আত্মবিশ্বাস
• দক্ষিণ আফ্রিকার গতিময় পিচে ব্যাট করা ভীষণ কঠিন এই ‘মিথ’ মাথায় নিয়ে খেলতে গিয়ে অতীতে ভুগতে হয়েছে ভারতকে। ‘এ’ দলের ব্যাটসম্যানদের দুর্দান্ত সাফল্য তাই ভাল লক্ষ্মণ। বিশেষ করে ধবনের ২৪৮ তো টেস্ট দলের মনোবল চাঙ্গা করবেই।
পরিবেশের সঙ্গে পরিচয়
• ‘এ’ দলের যে সব ক্রিকেটার টেস্ট টিমে থাকবে তারা দক্ষিণ আফ্রিকার পরিবেশ সম্পর্কে আগাম ধারণা নিয়ে ফিরছে। ফলে আসল সময় সমস্যা হবে না। তবে ধবনরা যেন ভুলে না যায়, ‘এ’ দলের ওয়ান ডে সিরিজ জেতার পিচ কিন্তু ধোনির দলের টেস্ট সিরিজের সময় আমূল বদলে যাবে। স্টেইনের দেশ নিশ্চয়ই টেস্টের আগে আমাদের ব্যাটিং প্র্যাক্টিস দেয়নি ‘এ’ সিরিজে! |
|
|
|
|
|
|