এখানে বড়জোর মাধ্যমিক হবে, এম এ নয়
রাজ্য সংস্থার নিজস্ব কোনও কোর্ট নেই! জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতার আগে কোনও ক্লাবের কোর্ট ভাড়া নিয়ে করতে হয় শিবির! সেটাও বড়জোর দু’দিনের জন্য!
পেশাদার কোচ নেই। যিনি সারাদিন গোপীচন্দের মতো পড়ে থাকবেন ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে। জেলা স্তরের সিনিয়র খেলোয়াড়রাও কোচিং করান। অ্যাকাডেমি দূরে থাক, অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কাঠের ফ্লোর আছে এ রকম ক্লাবের সংখ্যাও হাতে গোনা।
ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রের কোর্ট বন্ধ বহু দিন। সেখানে মেলা, সমাবেশ আর বিয়েবাড়ি ভাড়া দেওয়া হয় এখন। ময়দানে সংস্থার কোনও অফিস নেই। সচিবের অফিস থেকেই চলে সংস্থার কাজ।
সাইয়ের যে পাঁচটি কোর্ট ছিল, সেগুলোর অবস্থা এতটাই খারাপ যে রাজ্যের সেরা খেলোয়াড়রা এখন সেখানে অনুশীলনে নামতেই ভয় পান। প্রচুর দাম তাই বিদেশি শাটল-এ অনুশীলনের সুযোগ পান না খেলোয়াড়রা।
‘নেই রাজ্যের’ বাসিন্দা হলেও বাংলায় ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়ের সংখ্যা কিন্তু প্রচুর। এই মুহূর্তে রাজ্যে আটশোরও বেশি নথিভূক্ত খেলোয়াড় রয়েছেন। শুধু জুনিয়র টুর্নামেন্টে এ বারই নাম দিয়েছেন ২৩৪ জন।
বিশ্ব সেরাদের মহাসমাবেশ। ঝলমলে, বর্ণাঢ্য উদ্বোধন। প্রথম ম্যাচেই ‘ক্রিশ দিল্লি স্ম্যাশার্স’-এর সাই প্রনীথের
জয়— ধুমধামের মধ্যে শুরু হল ব্যাডমিন্টন দুনিয়ার নজিরবিহীন লিগ, আইবিএল! যেখানে প্রথম দিনে
লড়াই জমল ক্রিশ দিল্লি স্ম্যাশার্স বনাম পুণে পিস্টনসের। আইপিএলের ধাঁচে যুদ্ধে নামার আগে সাইনা
নেহওয়ালের নেতৃত্বে শপথ নিলেন ছয় ফ্র্যাঞ্চাইজির ছয় তারকা। ছবি: পিটিআই
দক্ষিণ কলকাতার মিলন সঙ্ঘ আর রায়পুর ক্লাবের কোর্টের পাশে বুধবার বিকেলে কিট কাঁধে গিজগিজ করছিল মা-বাবাদের ভিড়। সেখানেই এখন চলছে রাজ্য জুনিয়র ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট। সবার চোখ কোর্টে। ছেলে বা মেয়ে একটা পয়েন্ট নষ্ট করলেই অভিভাবকদের হা-হুতাশ। পয়েন্ট পেলে গর্বের উচ্ছ্বাস।
নিজেদের ছেলে-মেয়েকে সাইনা-সিন্ধু-কাশ্যপ বানানোর স্বপ্ন নিয়ে ছুটে এসেছেন ওঁরা। যেমন চোখধাঁধানো সাফল্য দেখে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বানানোর নেশায় ক্রিকেট কোচিং সেন্টারে ভিড় উপচে পড়ত এক সময়।
কিন্তু সত্যিই কি বাংলা থেকে কখনও বেরোতে পারে কোনও সাইনা নেহওয়াল বা পুরাপল্লি কাশ্যপ? অথবা তাঁদের কাছাকাছি মাপেরও ব্যাডমিন্টন প্লেয়ার?
“এখন যা অবস্থা তাতে অসম্ভব। কী আছে আমাদের এখানে? গোপীচন্দ বা প্রকাশ পাড়ুকোনের মতো একটা অ্যাকাডেমি আছে? কোনও পেশাদার ভাল কোচ আছে? একমাত্র টুর্নামেন্টে খেলা ছাড়া ইওনেস্ক শাটল পাই আমরা?” গড়গড় করে বলে দিলেন গত দশ বারের রাজ্য চ্যাম্পিয়ন অরূপ বৈদ্য। ইন্দ্রজিৎ মুখোপাধ্যায়ের পর সর্বভারতীয় র্যাঙ্কিংয়ে (সিনিয়র) আজ পর্যন্ত তিনিই সেরা। বত্রিশ বছরেও খেলে চলেছেন। রাজ্যে কোনও প্রতিদ্বন্দ্বীই নেই তাঁর সামনে।
“থাকবে কী করে? আমাদের এখানে যা পরিকাঠামো তাতে হয়তো ব্যাডমিন্টনের মাধ্যমিক পাশ হতে পারে। কিন্তু তার পর আর হবে না। এম এ পাস করতে হলে যেতে হবে গোপী, প্রকাশ, নিদেনপক্ষে থানের অ্যাকাডেমিতে,” বললেন হীরককান্তি সেনগুপ্ত। কয়েক বছর আগে কর্তাদের ঝগড়ায় বীতশ্রদ্ধ হয়ে খেলাটাকে বাঁচাতে প্লেয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন গড়েছিলেন হীরকরা। “দেখবেন, আমাদের জুনিয়র পর্যন্ত খুব ভাল। তার পর সব হারিয়ে যাচ্ছে। আরে, একজন রাজ্য স্তরের খেলোয়াড় যদি দু’তিন ঘণ্টাও অনুশীলন করে, তা হলেই এক হাজার টাকার শাটল লাগে।” হতাশ শোনায় হীরকের গলা। যিনি এক সময় গোপীচন্দ্রকে এনে অ্যাকাডেমি করার স্বপ্ন দেখেছিলেন বাইপাসে।
সাইনা-সিন্ধু হওয়ার মতো কোনও প্রতিভা যে বাংলায় নেই তা-ও নয়। অরূপ-হীরকরা অন্তত এই মুহূর্তে চারটি নাম সামনে আনতে চাইছেন হাওড়ার শেষাদ্রি সান্যাল, মণিদীপা দে, কলকাতার ঈপ্সিতা সিংহ এবং অরিন্তপ দাশগুপ্ত। এঁদের মধ্যে সাইনাদের বিভাগেই ১১ নম্বর র্যাঙ্কিং ছিল শেষাদ্রির। প্রতিশ্রুতিমান মেয়েটি গোপীর অ্যাকাডেমিতে ট্রেনিং নিতে গিয়েছিলেন এক মাসের জন্য। খরচ হয়েছিল ১৭ হাজার।
শেষাদ্রি ফিরে এলেও অন্য রাজ্যের অ্যাকাডেমিতে চলে গিয়েছেন ঋতুপর্ণা দাস, শুভঙ্কর দে, বিষ্ণু সান্যাল, রিয়া মুখোপাধ্যায়ের মতো বাংলার ব্যাডমিন্টন প্রতিভারা। জাতীয় টুর্নামেন্টেও তাঁরা খেলছেন অন্য রাজ্যের হয়ে। অন্ধ্রপ্রদেশের হয়ে ঋতুপর্ণা। উত্তরপ্রদেশে রিয়া। মহারাষ্ট্রে বিষ্ণু। শুভঙ্কর একমাত্র বাঙালি প্লেয়ার হিসেবে আইবিএলে সুযোগ পেয়েছেন সাইনার হায়দরাবাদ হটশটস-এ। শুভঙ্করের শুরু কিন্তু কলকাতার রায়পুর ক্লাবেই। “এটা আটকাতেই তো আমরা সাইয়ের সঙ্গে যৌথ ভাবে একটা অ্যাকাডেমি করতে চাইছি। ওদের পাঁচটা কাঠের কোর্ট আছে। আশা করছি এ বছরই সেটা হয়ে যাবে। সেখানে গোপী-সাইনাদের আনব। কথা হয়ে গিয়েছে। ক্রীড়ামন্ত্রী বলেছেন, ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রটাও করে দেবেন,” বলছিলেন শেখর বিশ্বাস। রাজ্য ব্যাডমিন্টন সংস্থার বর্তমান সচিব। বছর চারেক আগেও ব্যাডমিন্টন সংস্থা নিয়ে ডামাডোল ছিল তুঙ্গে। প্রতিদিন চলত চাপান-উতোর। এখন সেটা নেই। জেলায় কোচিং ক্যাম্প শুরু হয়েছে। প্রচুর টুর্নামেন্ট হচ্ছে। তা সত্ত্বেও ঊষানাথ বন্দ্যোপাধ্যায়-শেখর বিশ্বাসদের সংস্থার চেষ্টা সফল হবে কি না তা সময় বলবে!
তবে এটা ঘটনা, সাইনা-সিন্ধু-কাশ্যপদের সাফল্যে বাংলার ব্যাডমিন্টন কোর্টে ভিড় বেড়েছে। জেলার ক্লাবগুলোতে র্যাকেট হাতে হাজির হচ্ছে প্রচুর ছেলে-মেয়ে। কিন্তু পরিকাঠামোর বদল না হলে এই ভিড় কিন্তু ক্রমশ পাতলা হবে।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.