|
|
|
|
প্রতিবন্ধকতাকে হেলায় হারিয়ে সাঁতার কাটছে ছোট্ট আকাশ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী। হাঁটতে পারে না। হাত দু’টোও আর পাঁচ জনের মতো নয়। জড়তা রয়েছে। তবে সাঁতার কাটতে পারে আর পাঁচ জনের মতোই, রীতিমতো বড়দের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। শুরুতে ছোটদের পুলে ভর্তি করা হয়েছিল। এক মাস পেরোনোর আগে বড়দের পুলে চলে যায়। দিনে ৪০০-৫০০ মিটার সাঁতার কাটা তার রোজকার অভ্যাস। মেদিনীপুরের বছর সাতেকের আকাশ করকে দেখে মুগ্ধ সকলে।
যাঁর কাছে সাঁতার শেখা শুরু, সেই প্রশিক্ষক প্রশান্ত বিশ্বাস বলছিলেন, “ওকে দেখে আমরাও অবাক হই। ইচ্ছে থাকলে প্রতিবন্ধকতা কোনও বাধা হতে পারে না, আকাশ তারই একটা উদাহরণ।”
অথচ, ছোট্ট আকাশকে নিয়ে তাঁর পরিবারের চিন্তার শেষ ছিল না। বাবা সুবীর করের কথায়, “জন্মের পরের দিনই ওকে কলকাতার হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম। সেই সব দিনগুলোর কথা মনে পড়ছে। কেউ কেউ বলেছিলেন, ওকে নিয়ে আশা ছেড়ে দিতে। আমরা কিন্তু আশা ছাড়িনি। মনে জোর ছিল। জানতাম, চেষ্টা করলে সবই সম্ভব।” এখনও আকাশের চিকিৎসা চলছে। ইতিমধ্যে ছেলেকে নিয়ে চেন্নাই, ভেলোর, হায়দরাবাদ প্রভৃতি এলাকায় চিকিৎসার জন্য গিয়েছেন সুবীরবাবু। হায়দরাবাদের এক চিকিৎসকের পরামর্শে গত বছর ছেলেকে ভর্তি করেন সুইমিং পুলে। শুরু হয় সাঁতার শেখা। সঙ্গে চলে শরীরচর্চা। আর এরপর থেকেই ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছে আকাশ। সুবীরবাবু বলছিলেন, “আগের থেকে ও অনেকটাই সুস্থ। আগে হাত দু’টো জড়ো করতে পারত না। এখন পারে। ও যে এ ভাবে সাঁতার কাটতে পারবে, তা আমরা কখনও ভাবিনি।” |
|
প্রতিবন্ধকতাকে হারিয়ে সাঁতার কাটা আকাশের। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ |
সুবীরবাবু ব্যবসা করেন। বাড়ি মেদিনীপুর শহরের হবিবপুরে। এক ছেলে, এক মেয়ের মধ্যে আকাশই ছোট। মেয়ে সমতা ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। আকাশ দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। সমতার মা মমতাদেবী বলেন, “ছোট থেকে ওকে নিয়ে চিন্তা ছিল। সব সময় ভাবতাম, ছেলেকে মানুষ করতে পারব তো? ছেলে কী ভাবে আর পাঁচজনের সঙ্গে মেলামেশা করবে? তবে আমরা হাল ছাড়িনি।” মেদিনীপুর জেলা স্পোর্টস ডেভেলপমেন্ট অ্যাকাডেমির ক্যাম্পাসে সুইমিং পুল রয়েছে। এখানেই সাঁতার শেখে আকাশ। রোজ সকাল সাড়ে সাতটায় জলে নামা। টানা দেড় ঘণ্টা ধরে পুল চষে বেড়ানোর পর ন’টা নাগাদ ফের বাড়ি ফেরা। ছেলের সঙ্গেই সাঁতার কাটেন সুবীরবাবু।
রোজ সকালে অ্যাকাডেমির সুইমিং পুলে সাঁতার কাটতে আসেন বিশ্বনাথ রায়, পার্থ ঘোষরা। বিশ্বনাথবাবু সুবীরবাবুর বন্ধু। তাঁর কথায়, “ও যখন সাঁতার কাটে, আমরাও অবাক হয়ে দেখি। প্রশিক্ষক যা শেখায়, তাই করার চেষ্টা করে। আর পাঁচ জনের পক্ষে যেটা সহজে করা সম্ভব, আকাশের পক্ষে তো সেটা ততটা সহজ নয়। তবে, দেখে তা মনে হয় না। বড়দের মতো পুলের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত চষে বেড়ায়।”
ইচ্ছে থাকলে যে সাফল্যের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা কোনও বাধা হতে পারে না, ইতিমধ্যে তা প্রমাণ করেছেন মাসাদুর রহমান বৈদ্য। পা নেই। তাতে কী? প্রতিবন্ধী এই সাঁতারু ইংলিশ চ্যানেল জয় করেছেন। দেখিয়েছেন, মনের জোর থাকলে সাফল্য আসবেই। মেদিনীপুরের এই সুইমিং পুলের উদ্বোধনও হয়েছে তাঁর হাত ধরে।
মাসাদুরের মতোই প্রতিবন্ধকতাকে হারিয়ে সাঁতার কাটছে আকাশ। |
|
|
|
|
|