|
|
|
|
শহিদের মর্যাদা চায় ভগতের পরিবার
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
স্বাধীনতা দিবসের রাত পোহালেই আন্দোলনে নামছেন ওঁরা। যাদবেন্দ্র সিংহ সাঁধু, তাঁর মা সুরেন্দ্র কউর, আর বোন মঞ্জুলা তুর। সঙ্গে পরিবারের অন্য লোকজন।
কারা ওঁরা?
ভগৎ সিংহের ভাই সর্দার কুলবীর সিংহর পৌত্র যাদবেন্দ্র। ঠাকুর্দার বড় ভাইয়ের জন্য ‘শহিদ’-এর মর্যাদা চান তাঁরা। তাই স্বাধীনতা দিবসের পর দিন থেকেই আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যাদবেন্দ্র এবং তাঁর পরিবার।
১৯২৯ সালের ৮ এপ্রিল। বটুকেশ্বর দত্তকে সঙ্গে নিয়ে ব্রিটিশ জমানার সেন্ট্রাল লেজিস্টেটিভ অ্যাসেম্বলির ভিতরে ঢুকে পড়েছিলেন ভগৎ সিংহ। দর্শকদের গ্যালারি থেকে বোমা ছোড়েন তাঁরা। ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ স্লোগান দিয়ে ছড়িয়ে দেন লিফলেট। তার পর লাহোর ষড়যন্ত্র মামলা। দু’বছর পর লাহোর জেলেই ২৩ মার্চের ভোরে ফাঁসি হয়ে যায় ভগৎ সিংহের। তখন তাঁর বয়স মাত্র ২৩। একইসঙ্গে ফাঁসিতে ঝোলানো হয় রাজগুরু ও সুখদেওকে। বহু দিন ধরেই ২৩ মার্চকে ‘শহিদ দিবস’ আখ্যা দিয়ে জাতীয় ছুটির দিন ঘোষণা করার দাবি জানিয়ে আসছেন ভগৎ সিংহের পরিবার। কিন্তু তা মানা হয়নি। তা হলে হঠাৎ এখন আন্দোলন কেন?
যাদবেন্দ্র জানান, তথ্যের অধিকার আইনে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে জানতে চাওয়া হয় ভগৎ সিংহ, রাজগুরু এবং সুখদেওকে কবে শহিদের মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল? দেওয়া না হলে সে বিষয়ে কোনও কাজ চলছে কি? ৯ মে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ডিরেক্টর ও তথ্য আধিকারিক শ্যামলা মোহন জানান, এ বিষয়ে সরকারের কাছে কোনও তথ্য নেই। যাদবেন্দ্র বলেন, “যাঁকে গোটা দেশ শহিদ ভগৎ সিংহ বলে জানে, স্বাধীনতার ৬৬ বছর পরেও তাঁকে শহিদের মর্যাদা দেয়নি সরকার।” |
|
ভগৎ সিংহের নাতি-নাতনি যাদবেন্দ্র ও মঞ্জুলা। ছবি: পারিবারিক অ্যালবাম থেকে। |
শহিদ-এর মর্যাদার জন্য সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার শিন্দের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেছিলেন যাদবেন্দ্ররা। কিন্তু তিনি মুম্বইয়ে অসুস্থ। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আর পি এন সিংহের সঙ্গে দেখা করতে চাইলেও তাঁদের বলা হয়, মন্ত্রী অধিবেশনে ব্যস্ত। সরকারের এই ঢিলেঢালা মনোভাবে আরও ক্ষুব্ধ যাদবেন্দ্ররা। কিন্তু এত দিন পরেই বা তাঁরা কেন শহিদের মর্যাদা চাইছেন? যাদবেন্দ্র বলেন, “ওঁকে শহিদ আখ্যা দিলে ২৩ মার্চকে শহিদ দিবস ঘোষণার দাবি জানানোও সহজ হবে।” পরিবারের সদস্যদের প্রশ্ন, যদি ২ অক্টোবর জাতীয় ছুটি হতে পারে, তা হলে ২৩ মার্চ নয় কেন?
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক কর্তাদের বক্তব্য, স্বাধীনতা সংগ্রামীদের যথোচিত সম্মান দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু স্বাধীনতার লড়াইয়ে অনেকেই প্রাণ দিয়েছেন। অনেকেরই ফাঁসি হয়েছে। তাঁদের মধ্যে কাউকে আলাদা করে শহিদের আখ্যা দেওয়া কতটা ঠিক, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তাই এ বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, “২০০৮ সালে তাঁর ১০১-তম জন্মবর্ষে সংসদ চত্বরে ভগৎ সিংহের ১৮ ফুট উঁচু ব্রোঞ্জের মূর্তি বসে। ওই বছরই তিন মূর্তি ভবনে তাঁর জীবন নিয়ে প্রদর্শনী হয়। খোদ প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ সেটির উদ্বোধন করেন। সেখানে ভগৎ সিংহের পরিবারের সদস্যদেরও সম্মান জানানো হয়।”
তাতে অবশ্য পরিবারের সদস্যরা সন্তুষ্ট নন। তাই আন্দোলনে নামার কথা ভেবেছেন তাঁরা। পাশাপাশি ভগৎ সিংহ কী ভাবে মার্কসবাদে প্রভাবিত হন, গাঁধীর সত্যাগ্রহ আন্দোলনের বদলে অন্য ধারার প্রতিবাদের প্রয়োজন বোধ করেন, সে সব নিয়ে দু’বছর ধরে তিনি জেলে বসে ইংরেজিতে যে ডায়েরি লিখেছিলেন, তা আগামী মাসে প্রকাশিত হবে। এত দিন পরিবারের কাছেই ছিল ডায়েরিটি। সাধারণ মানুষ ভগৎ সিংহের আদর্শ সম্পর্কে আরও জানুক, তাই পরিবারের এই উদ্যোগ। |
|
|
|
|
|