|
|
|
|
পুজোয় নজরে তিন পাড়ের তাঁত
নিজস্ব সংবাদদাতা • কালনা |
পুজো আসলেই একঘেয়ে নকশার বাইরে একটু অন্যরকম খুঁজতে থাকেন ১৬ থেকে ৬০ সবাই। আর এই চাহিদা মেটাতে পুজোর বেশ কয়েক মাস আগে থেকেই চুল খাড়া হয়ে যায় তাঁতিদের। এক সুতোর সঙ্গে অন্য সুতো, এক রঙের সঙ্গে অন্য রঙ মিলিয়ে আলাদা কিছু তৈরির চেষ্টায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন তাঁরা।
নদিয়ার ফুলিয়া চটকতলার শ্যামল বসাকও প্রায় দু’মাসের চেষ্টায় এ বছরের জন্য তৈরি করে ফেলেছেন ‘ট্রিপল বাই ওয়ান পাড়’ শাড়ি। অর্থাৎ একই শাড়িতে আঁচল থেকে বেরোচ্ছে তিনটে আলাদা রঙের পাড়। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পড়লে যা প্রতিবারই নতুন। ভিন্ন স্বাদের এই শাড়িটি ইতিমধ্যেই নজর কেড়েছে রাজ্যের হস্তচালিত তাঁত ও তন্তুজ দফতরের। রাজ্যের ক্ষুদ্র ও কুটীর শিল্প দফতরের প্রতিমন্ত্রী তথা তন্তুজের চেয়ারম্যান স্বপন দেবনাথ বলেন, “দাম বেশি হলেও ফুলিয়ার ওই তাঁতির তৈরি শাড়িতে নতুনত্ব রয়েছে। এবার পুজোর কলকাতার বেশ কয়েকটা তন্তুজের শো-রুমে শাড়িটি এক্সক্লুসিভ হিসেবে রাখার চেষ্টা চলছে।” |
|
তিন পাড়। ছবি: কেদারনাথ ভট্টাচার্য। |
মাস তিনেক আগে থেকেই মাথায় অন্য কিছু করার চিন্তাটা ঘুরছিল শ্যামলবাবুর। তখনই ঠিক করেন, ব্যাঙ্গালুরু সিল্ক ও বিভিন্ন রঙ ব্যবহার করে নতুন ধরণের তাঁতের শাড়ি তৈরি করবেন। কিন্তু দামি সিল্কের সুতো কেনায় বাধ সাধে দারিদ্র। তবে হাল ছাড়েন নি তিনি। মায়ের লাগানো তিনটে আমগাছ ও দু’টি কাঁঠাল গাছ বিক্রি করে টাকা জোগাড় করেন। তারপরে রঙিন সিল্কের সুতো নিয়ে বসে পড়েন নিজের হস্তচালিত তাঁতে। প্রথম শাড়িটা বুনতে সময় লেগে যায় ৪৬ দিন। শাড়ি পিছু খরচ পড়ে ১৩ হাজার টাকা। জমকালো শাড়িটির গায়ে লাল, কালো রঙ ব্যবহার করা হয়েছে। পাড়ে রয়েছে সবুজ, মেরুন ও নীল। শ্যামলবাবু বলেন, “এই ট্রিপল বাই ওয়ান পাড় শাড়িটি দেখে প্রথমে স্বপনবাবু পরে ডিরেক্টর অফ হ্যান্ডলুম এবং তন্তুজের এমডি প্রশংসা করেছেন। প্রত্যেককেই আর্থিক অবস্থা জানিয়েছি। সবাই সাধ্যমতো পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।” শ্যামলবাবু জানান, শাড়িটার বিশেষত্ব পাড়েই। তাঁর দাবি, দু’দিন দু দিকে ঘুরিয়ে পড়লে বোঝাই যাবে না একই শাড়ি। এছাড়া সাধারণ শাড়ির পাড়ে যে লতা-পাতা বা কলকা করা হয় এখানে তা না করে ঝাপের নকশা করা হয়েছে। ফলে টিনএজার থেকে মাঝবয়সী সকলকেই মানাবে এই শাড়ি। স্বপনবাবু জানান, পুজোর আগেই কলকাতার কয়েকটা শোরুমে শাড়িটা রাখার চেষ্টা হচ্ছে। তবে শুনেছি বুনতে সময় লাগে। সেক্ষেত্রে শিল্পী কত শাড়ি দিতে পারবেন সেটা একটা ব্যাপার। তবে শ্যামলবাবু জানান, প্রথম শাড়িটা বুনতে বেশি সময় লাগলেও এখন কারিগরি দিকটা রপ্ত হয়ে যাওয়ায় অন্যদের দিয়েও শাড়ি বোনানো যাবে। শাড়িটি নিয়ে মন্ত্রীর কাছে ও অন্যান্য সরকারি দফতরে শ্যমালবাবুর সঙ্গে গিয়েছিলেন আরও চার তাঁতশিল্পী। তাঁরা বলেন, “হস্তচালিত তাঁতশিল্পের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে। এই ধরণের প্রচেষ্টা সফল হলে তাঁতশিল্পীরা অক্সিজেন পাবেন।”
|
|
|
|
|
|