|
|
|
|
|
|
সিইও-র টেবিল থেকে |
মেয়েদের স্বাস্থ্যরক্ষায় জোর দিতে চাই |
হাসপাতালে ভর্তি হলেই প্রথম প্রশ্ন বিমা আছে কিনা। বিমা থাকলে চিকিত্সার খরচ এক, না-থাকলে আর এক। বিমা সংস্থাগুলি দীর্ঘকাল ধরেই এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে আসছে। এই প্রতিবাদে ফল না-হওয়ার মূল্য তারা গুনে নিতে শুরু করে গ্রাহকদের বিমার উপর নানা নতুন শর্ত আরোপ করেই। তাতেও খুব একটা লাভ না-হওয়ায় এ বার তাদের দাবি, স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে একটি জাতীয় নিয়ন্ত্রক সংস্থার। দাবি উঠছে, স্বাস্থ্য পরিষেবাকে আরও স্বচ্ছ করে তোলারও। একই সঙ্গে ভারতের বাজারে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিমার অভাবকে সুযোগ ধরে সংস্থাগুলি নানা প্রকল্প আনছে। গ্রাহকের স্বার্থরক্ষায় আসছে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহারও। বাড়তে থাকা সাধারণ বিমার বাজারে এই জাতীয় নানা বিষয় নিয়ে রিলায়্যান্স জেনারেল ইনশিওরেন্সের সিইও রাকেশ জৈন-এর সঙ্গে আলাপচারিতায় সুপর্ণ পাঠক |
|
স্বাস্থ্য পরিষেবা ক্ষেত্রে জাতীয় স্তরে একটি নিয়ন্ত্রক তৈরির পক্ষে সওয়াল করছেন আপনি ও আপনার সহকর্মীরা। কেন?
আমাদের দেশে স্বাস্থ্য ও চিকিত্সা পরিষেবার দখলে জাতীয় আয়ের (জিডিপি) প্রায় ৪.৬%। টাকায় হিসাব কষে অঙ্কটা দাঁড়ায় প্রায় ৪ লক্ষ কোটি টাকা। বুঝতেই পারছেন আর্থিক দিক থেকে কী বিশাল এই ক্ষেত্র।
সাম্প্রতিক কালে আমরা দেখছি সামাজিক পরিষেবা খাতে সরকারও অনেকটা খরচ বাড়িয়ে দিয়েছে। আমি কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের সম্মিলিত প্রকল্পগুলির কথা বলছি। সেখানে দেখা যাচ্ছে চূড়ান্ত অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে স্বাস্থ্য ও চিকিত্সা পরিষেবাকে। দ্বাদশ পঞ্চবার্ষিকী যোজনাতেও সামাজিক পরিষেবায় বরাদ্দের বিচারে দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থানে স্বাস্থ্য। সুতরাং বাজার যখন এত বড়, তখন পরিষেবার মান আরও ভাল করার দিকে নজর দেওয়া উচিত বলে আমার মনে হয়। স্বাস্থ্য পরিষেবা পরিচালনার বেশ কিছু আন্তর্জাতিক মডেল রয়েছে, যেগুলি অত্যন্ত সফল। এ বার ওই আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী এগোনো জরুরি হয়ে পড়েছে
আমাদের দেশে।
সিঙ্গাপুরকেই ধরুন। প্রাথমিক ভাবে একটা দেশে কম শিশু মৃত্যুর হার ও গড়পড়তা বেশি সম্ভাব্য আয়ুর বিচারে স্বাস্থ্য পরিষেবার মডেলের সাফল্য মাপা হয়। এই দিক থেকে সিঙ্গাপুর অনেকের থেকেই আলাদা। তাদের রাষ্ট্রচালিত মডেলের তিনটি প্রধান বিষয় হল
১) বেতনের একটা অংশ স্বাস্থ্য খাতে বাধ্যতামূলক সঞ্চয়
২) রাষ্ট্রায়ত্ত স্বাস্থ্যবিমা প্রকল্প এবং
৩) স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থার কাজকর্ম ও দাম সংক্রান্ত বিষয়ে নজরদারির জন্য অত্যন্ত সক্রিয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা।
আমি এটাই বলতে চাইছি। আমাদের দেশে এই ক্ষেত্রটি এত বড়। সমাজের সব অংশের স্বার্থ জড়িত। টাকাও যথেষ্ট বেশি খরচ করা হচ্ছে। সুতরাং এমন একটি অপরিহার্য পরিষেবার উপর নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ থাকা খুব জরুরি। পরিষেবা সরবরাহের বিষয়টি যদি ভাল ভাবে পরিচালনা
করা যায়, তা হলে একটা শক্তিশালী ও দক্ষ স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যবস্থা তৈরি হবে এখানেও।
• ভারতে বাজার অর্থনীতির এই জমানায় নিয়ন্ত্রকের সংখ্যা অনেক বেশি হয়ে যাচ্ছে বলে মনে হয় না আপনার? গ্রাহকের স্বার্থরক্ষায় সমস্যাগুলি সমাধানের কি আর অন্য পথ নেই?
দেখুন, আমাদের দেশে যারা স্বাস্থ্য পরিষেবা দেয়, তারা একটা আধা-একচেটিয়া পরিবেশের মধ্যে দাঁড়িয়েই ব্যবসাটা করে। যথেষ্ট পরিকাঠামোর অভাবই এর জন্য দায়ী। একটা দেশ, যেখানে স্বাস্থ্য পরিষেবা খাতের
প্রায় ৮০% খরচই ব্যক্তিকে ও বিমা সংস্থাকে বহন করতে হয়, সেখানে গ্রাহকের দরাদরি করার কোনও ক্ষমতাই থাকে না।
তার উপর ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী জনসাধারণের স্বাস্থ্য, হাসপাতাল, ডিসপেনসারি রাজ্যের আওতাধীন বিষয়। তাই তা সংশ্লিষ্ট রাজ্যের আইন মেনে চলে। ফলে বিভিন্ন রাজ্যে তাদের নিয়ম-কানুন আলাদা। অথচ বিমা সংস্থাগুলি জাতীয় স্তরে কাজ করে কেন্দ্রীয় আইন মেনে। এটা সামঞ্জস্যহীন। এই কারণে অনেক সমস্যা তৈরি হয়। আর এ সব কারণেই পরিষেবা সরবরাহকারীদের সামলানোর জন্য একটি কেন্দ্রীয় নজরদারি এজেন্সির প্রয়োজন খুব বেশি। যাতে সাধারণ মানুষের অর্থ সব থেকে ভাল ভাবে কাজে লাগানো যায়। |
|
• সাধারণ বিমা প্রকল্পগুলি অনেকেই ঠিক মতো বুঝতে পারেন না বলে দূরে সরে থাকেন। এটা বাজার বাড়ানোর ক্ষেত্রে বড় বাধা। এখানে শিল্পের ভূমিকা কী হওয়া উচিত?
উত্তর: অর্থনীতি যত এগোচ্ছে, ততই তার গতিপথ বদলে যাচ্ছে। আগে আমাদের অর্থনীতি ছিল কৃষি নির্ভর। এখন পরিষেবার উপর নির্ভরতা
অনেক বেশি বেড়েছে। যে কোনও গৃহস্থালিতে নজর দিন। দেখবেন, রোজগারের একটা অংশ দিয়ে সম্পত্তি তৈরির ঝোঁক এখন অনেকটাই বেশি। সাধারণ বিমা শিল্পকে এই জায়গাটা বুঝতে হবে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের নিজেদেরও বদলাতে হবে। পণ্যের তুলনায় গ্রাহকের উপর বেশি জোর দিতে হবে। প্রকল্প তৈরি করতে হবে গ্রাহকের চাহিদা, আশঙ্কা, নিরাপত্তা, প্রয়োজন-অপ্রয়োজন, মানসিকতার উপর নির্ভর করে।
যদি সেটা ঠিকঠাক করা যায় এবং গ্রাহক কোন বিষয়টিকে ঝুঁকির বলে মনে করে দূরে সরিয়ে দিতে পারেন সেটা মাথায় রাখা হয়, তা হলে আমাদের বিশ্বাস আগামী দিনে সাধারণ বিমার গ্রহণযোগ্যতা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়তে দেখা যাবে।
• ভুল বুঝিয়ে প্রকল্প বিক্রির অভিযোগ ক্রমশ বাড়ছে। সাধারণ মানুষকে এর থেকে বাঁচাতে কী ভাবে এই পরিস্থিতি সামলানো যায়?
সাধারণ বিমার একটা বড় অংশ জুড়ে থাকে পণ্যের ক্ষতিপূরণ মেটানো। সে ক্ষেত্রে আমাদের শিল্পে ব্যবসা আনা থেকে শুরু করে ক্ষতিপূরণ মেটানো এই পুরো প্রক্রিয়াটাই চলে কাগজপত্রের উপর ভিত্তি করে। আমার ধারণা এটাই মিস-সেলিং বা ভুল বুঝিয়ে বিমা বিক্রির হার বাড়ার প্রধান কারণ। তবে মিস-সেলিংয়ের বিষয়টি সংস্থার উপরেও অনেকটা নির্ভর করে। যেমন, আমরা মানব সম্পদ বাড়ানোর পাশাপাশি প্রযুক্তি ব্যবহারে জোর দিচ্ছি। বিমা প্রকল্প বিক্রির পদ্ধতিতে ‘মিস সেলিং’-সহ নানা ধরনের ভুল-ভ্রান্তি যত দূর সম্ভব কমাতে কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। গ্রাহকের তরফে করা যে-কোনও রকম অভিযোগ সামলাতে ও দ্রুত ঠিকঠাক সিদ্ধান্ত নিতে সংশ্লিষ্ট বিভাগে কর্মী সংখ্যাও অনেক বাড়িয়েছি।
• বিমা বিক্রির ক্ষেত্রে গ্রাহকের সুবিধার জন্য অবিলম্বে কী কী পদক্ষেপ করা জরুরি বলে মনে হয় আপনার? প্রযুক্তি কি এ ক্ষেত্রে কোনও রকম সাহায্য করতে পারে?
উত্তর: সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রাহককে সঠিক তথ্য দেওয়া। এবং সেই সঙ্গে গ্রাহকের প্রয়োজন অনুযায়ী প্রকল্প চালু করা। আমি প্রবল ভাবে বিশ্বাস করি যে, বিমাকারীর হাতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সঠিক তথ্য তুলে দেওয়ার জন্য সব থেকে উন্নত ও দক্ষ মাধ্যম হল প্রযুক্তি। এতে গ্রাহকও সব কিছু জেনে-বুঝে ঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। সম্ভবত এটাই একমাত্র মাধ্যম, যেটি অল্প সময়ের মধ্যে অনেক বেশি তথ্য পৌঁছে দিতে পারে গ্রাহকের দরজায়। এবং তার এই ক্ষমতা ক্রমাগত বাড়তেই থাকে।
এক তো প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রকল্প কেনা হোক বা ক্ষতিপূরণ পাওয়া, সব কাজই গ্রাহককে তাঁর সুবিধা মতো করতে দেওয়া যায়। তার উপর প্রযুক্তি ব্যবহার করে সংস্থা তার প্রকল্প চালানোর খরচও কমাতে পারে। ফলে দামের দিক থেকে সেই খরচ কমার সুবিধা পান বিমাকারীও।
• আপনারা শুধুমাত্র মহিলাদের জন্য পলিসি তৈরি করেছেন। কেন? সেগুলির সুবিধা কী?
দেশের বাজার মূল্যায়ন করার সময়ে আমরা দেখেছি বহু ভারতীয় পরিবারে এখনও মহিলা বা শিশুকন্যাদের স্বাস্থ্যরক্ষার বিষয়টি প্রাথমিক গুরুত্ব পায় না। এখানে লিঙ্গভেদ নজরে পড়ার মতো। বরং ৬ বছর বয়স পর্যন্ত স্বাস্থ্য সম্পর্কে অগ্রাধিকার পায় শিশুপুত্ররা।
আমরা মহিলা ও শিশুকন্যাদের স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়ার বিষয়টিকে তুলে ধরতে চাই। কারণ আমাদের কাছে এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়। আর সেই জন্যই রিলায়্যান্স হেল্থগেইন বিমা প্রকল্পে মহিলা ও শিশুকন্যাদের পলিসির আওতায় আনা হলে প্রিমিয়ামে বিশেষ ছাড় দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি আমরা। যাতে ওই ছাড়ে প্রলুব্ধ হয়ে পরিবারের মেয়েদের বিমা করাতে উদ্যোগী হন পরিবারের অন্য সদস্যরা।
পণ্যগুলির আরও কয়েকটি আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য আছে, যা ভারতে এই প্রথমবার আনা হল। যেমন, কল অপশন, কিছু নির্দিষ্ট জটিল রোগের ক্ষতিপূরণ মেটানোর ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম ছাড়াই এক বছরের জন্য পলিসির আপনা-আপনি পুনর্নবীকরণ ইত্যাদি।
• এখন সম্ভাব্য গড় আয় বেড়ে যাওয়ায় প্রবীণ নাগরিকদের একটা বড় অংশ বিমার আওতার বাইরে রয়ে গিয়েছেন। এই খামতি পূরণে শিল্পের কি এগিয়ে আসা উচিত নয়? আপনারা কিছু ভাবছেন?
বিমা শিল্প বুঝতে পারছে প্রয়োজনের এই জায়গাটা। আমরা এটা মাথায় রেখেই রিলায়্যান্স হেল্থগেইন প্রকল্পে সারা জীবন ধরে প্রকল্প পুনর্নবীকরণের সুযোগ এনেছি। আমাদের ক্লেম দফতরে যে-দল কাজ করে, তার সদস্যদের বিশেষ প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। যাতে তাঁরা শুধুমাত্র প্রবীণ নাগরিকদের পরিষেবা দেওয়ার বিষয়টি মানবিকতার সঙ্গে এবং দ্রুত সামলাতে পারেন।
• সাধারণ বিমা কেনার ক্ষেত্রে ক্রেতার প্রতি আপনার কী পরামর্শ?
ঝুঁকির দু’টি জায়গা আছে।
১) সঞ্চয় সুরক্ষিত রাখা ও ঋণের চাপ এড়ানো ও
২) সম্পদ রক্ষা।
প্রথমত, নিজের ও পরিবারের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখতে প্রতিটি মানুষের যথেষ্ট পরিমাণ বিমা থাকা উচিত।
দ্বিতীয়ত, প্রত্যেককে গুরুত্ব অনুযায়ী নিজের সম্পদগুলিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। দেখতে হবে ওই সম্পদ নষ্ট হলে বা কোনও ভাবে সেটি থেকে লোকসান হলে তাঁর আর্থিক অবস্থার উপর কী প্রভাব পড়বে। তার পর সেই অনুযায়ী সেগুলিকে সুনির্দিষ্ট বিমার আওতায় আনতে হবে। সেটা তাঁর বাড়ি, গাড়ি, দোকান-সহ অনেক কিছুই হতে পারে। |
|
|
|
|
|