|
|
|
|
|
|
কমোডিটি এক্সচেঞ্জ |
|
ডলারে লগ্নির আগে
সম্প্রতি রেকর্ড নেমেছিল টাকার দর। ডলার ছাড়িয়েছিল ৬১-র গণ্ডি। কিন্তু
এই দোলাচলের মধ্যেও লগ্নির ঠিকানা হিসেবে বাছতে পারেন ডলারকে।
তাই নজর রাখুন তার দরের ওঠা-পড়ায় অরিন্দম সাহা |
|
গত সংখ্যায় আমরা আলোচনা করেছি কী ভাবে পণ্য লেনদেনের বাজারে ডলার কেনা-বেচা করা হয়, তা নিয়ে। এ বার দেখে নিই কী কী বিষয়ের উপর নির্ভর করে ডলারের দামের ওঠা-পড়া। যা থেকে লগ্নিকারী দামের বাড়া-কমার আঁচ পেতে পারেন। ফলে ঝঁুকি কিছুটা হলেও এড়িয়ে বিনিয়োগ করা সহজ হয়। যদিও অনেক বিষয়ের উপরই ডলারের দামের ওঠা-নামা নির্ভর করে। কিন্তু এর মধ্যে আমরা কয়েকটিকে বেছে নিয়ে আজকের আলোচনা করব।
নজর থাকুক শেয়ার বাজারে
শেয়ার বাজার নিয়ে জ্ঞান থাকলে, ডলারে লগ্নির ক্ষেত্রে অনেকটাই সুবিধা মেলে। কারণ, শেয়ার বাজারের ওঠা-পড়া থেকেও অনেক সময়ে দেশে ডলারের জোগান এবং তার দরের ওঠা-পড়ার আঁচ করা যায়।
আসলে শেয়ার বাজারে লগ্নির অনেকটাই আসে বিদেশি বিনিয়োগকারী সংস্থাগুলি থেকে। তারা যদি এখানে লগ্নি করে বন্ড বা শেয়ার কেনে, তার মানে দেশে ডলারের জোগান বাড়ছে (কারণ সংস্থাগুলি ডলারের ঝাঁপি নিয়েই এখানে আসে)। ফলে শেয়ার বাজারও তেজী হয়ে ওঠে। আর সংস্থাগুলি যদি বাজার থেকে চলে যায়, তা হলে বাজার পড়ে। কমে ডলারের জোগানও।
তাই সেনসেক্স, নিফটি, এমসিএক্স-এসএক্স ৪০-র মতো সূচকগুলির দিকে নজর রাখলে, ডলারের দামের ওঠা-পড়াও খেয়াল রাখতে পারবেন।
আমদানি-রফতানির খবর রাখুন
চলতি খাতে লেনদেন ঘাটতি নিয়ে অনেক কথাই শোনা যাচ্ছে চার দিকে। যার মূল বক্তব্য হল, দেশে বৈদেশিক মুদ্রার আয়ের তুলনায় বেড়েছে ব্যয়। যার মধ্যে একটি হল আমদানি-রফতানি। অর্থাত্ রফতানি করে যত না ডলার আসছে, আমদানি খাতে তার থেকে বেশি বেরিয়ে যাচ্ছে। এর অন্যতম কারণ, বিদেশের বাজারে মন্দার কারণে চাহিদা কমা। তাই সেখানে রফতানি হচ্ছে না সে ভাবে। কিন্তু দেশে বেড়েছে চাহিদা। বিশেষত তেল, গ্যাস ইত্যাদির। ফলে বাড়তি আমদানি করতে হচ্ছে। আর এর প্রভাব পড়েছে ডলারের দামে। কারণ ডলার দিয়েই বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করতে হয়। ফলে যত বেশি পণ্য আমদানি করা হবে, তত বাড়বে ডলারের চাহিদা। বাড়বে দামও। আর চাহিদা কমলে হবে উল্টোটা। |
|
ডলারের জন্য আলাদা সূচক
ডলারের গতিবিধি নজরে রাখার অন্যতম সহজ উপায় হল ‘ডলার ইন্ডেক্স’-এর ওঠা-পড়ার দিকে লক্ষ্য রাখা। বিভিন্ন সংস্থার শেয়ার দরের বিচারে যেমন সেনসেক্স বা নিফটি-র মত সূচক তৈরি করা হয়। ঠিক তেমনই বিশ্বের ছ’টি মুদ্রার (ইউরো, পাউন্ড, ইয়েন, ক্যানাডিয়ান ডলার, সুইডিশ ক্রোনা ও সুইস ফ্রাঁ) ভিত্তিতে ডলারের দামেরও একটি সূচক হিসাব করা হয়। দাম বাড়লে সূচক বাড়ে। আর কমলে কমে। এই মুদ্রাগুলির মধ্যে ইউরোর গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। পাশাপাশি, বিশ্বে মুদ্রা বাজারে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয় ইউরো ও ডলার। যে-কারণে এই দুই মুদ্রার দিকে নজর রাখলে ডলারের দামের আঁচ মেলে। ধরা যাক, ইউরোর সাপেক্ষে ডলারের দর কমছে। তা হলে ডলার ইনডেক্সও কমবে। তার প্রভাব কিছুটা হলেও পড়বে ভারতে। এখানে ডলারের দর কমছে মানে টাকার দর বাড়ছে। আগামী দিনেও এই ধারা বজায় থাকবে ধরে নিলে লগ্নিকারী ডলার বিক্রি করার জন্য চুক্তি করে রাখতে পারেন।
সুদের হারে পরিবর্তন
ব্যাঙ্ক বা ডাকঘরে বেশি সুদ পেলে আমরা সকলেই খুশি হই। কিন্তু এর উপরেও যে ডলারের দামের ওঠা-পড়া নির্ভর করে, তা অনেকেই জানেন না।
ধরা যাক, মার্কিন সরকারি বন্ডে সুদের হার ১%। আর ভারতে সরকারি বন্ডের ক্ষেত্রে তা ৮%। ফলে যিনি ভারতে বিনিয়োগ করছেন (ধরে নিচ্ছি লগ্নির বাদবাকি সমস্ত শর্ত একই থাকছে), তিনি একই পরিমাণ টাকা ঢেলেও ৭% বেশি সুদ পাচ্ছেন। ফলে চড়া সুদের আশায় তাঁর এ দেশে লগ্নি করার কথা। সে ক্ষেত্রে ডলারের জোগান বাড়বে। ফলে তার দাম কমবে।
এখন মার্কিন মুলুকে সুদ কম। আর এ দেশে বেশি। কিন্তু ভারতের অর্থনীতি এতই বেহাল যে, তা সত্ত্বেও এখানে ডলার ঢালতে ভরসা পাচ্ছেন না লগ্নিকারীরা। ফলে সুদের এই সূত্র অন্তত এখন সে ভাবে খাটছে না। |
নজর থাকবে যে দিকে |
দেশের আর্থিক অবস্থা |
ফলাফল |
ডলারের দাম (টাকায়) |
লগ্নিকারী কী করবেন |
আমদানি বাড়ছে
ও রফতানি কমছে |
ডলারের চাহিদা বাড়বে |
বাড়বে |
কিনতে চুক্তি করুন |
দেশে সুদ বাড়ছে |
বিদেশি লগ্নি বাড়বে |
কমবে |
বেচতে চুক্তি করুন |
সোনা, অশোধিত তেল,
তুলো ইত্যাদির দর বৃদ্ধি |
আমদানি খরচ বাড়বে |
বাড়বে |
কিনতে চুক্তি করুন |
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ডলার কিনছে বা
বিদেশি সংস্থা লগ্নি সরাচ্ছে |
ডলারের জোগান কমবে |
বাড়বে |
কিনতে চুক্তি করুন |
|
ইন্টার ব্যাঙ্ক স্পট রেট
স্বল্প মেয়াদে ডলারের গতিবিধি নজরে রাখার সেরা উপায় হল ইন্টার ব্যাঙ্ক স্পট রেট। ব্যাঙ্কগুলি নিজেদের চাহিদা মেটাতে ডলার কেনা-বেচা করে। যা ইন্টার ব্যাঙ্ক মার্কেট নামে পরিচিত। অংশ নেয় আমদানি-রফতানি সংস্থাও। এখানে প্রতি মুহূর্তে লেনদেনের ফলে ডলারের যে-দাম দাঁড়ায়, তাই ইন্টার ব্যাঙ্ক রেট বা স্পট রেট।
ডলারের ক্ষেত্রে আগাম চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দর অনুযায়ী তার দাম স্থির হয়। যা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে স্পট রেটের সমতুল্য। তাই লগ্নিকারী চাইলে ওই স্পট রেটের দিকে নজর রাখতে পারেন।
সবশেষে...
বিদেশের অনেক বাজারেও টাকা-ডলার লেনদেন হয়। যেমন সিঙ্গাপুর, হংকং-এর ওভার দ্য কাউন্টার মার্কেট। এখানে সারা দিনই কেনা-বেচা চলে। তাই সেগুলির দিকেও নজর রাখতে পারেন।
প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে আগের লেনদেনের তথ্য (টেকনিক্যাল চার্ট) দেখেও ডলারের দামের গতিপ্রকৃতির উপর লক্ষ্য রাখা সম্ভব। তাই এই প্রযুক্তি এখন অনেকেই ব্যবহার করেন। |
লেখক এমসিএক্স স্টক এক্সচেঞ্জ-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট
(মতামত ব্যক্তিগত) |
|
|
|
|
|