টিডিএস
আয়করের উত্স সন্ধান
সুস্বাদু একটি খাবার, যার জন্য আপনি অপেক্ষা করে বসে আছেন, তা পাতে পড়ার আগে কেউ যদি কামড় বসিয়ে দেয় তবে কেমন লাগবে? একটুও ভাল নয়। কিন্তু ভাল না- লাগলেও বাস্তবে কোনও কোনও ক্ষেত্রে এমনটাই ঘটে। ধরুন, কোনও সূত্র থেকে ১০ হাজার টাকার আয় আসবে বলে বসে আছেন। ভেবেও নিয়েছেন কোন কোন খাতে তা খরচ করবেন। টাকাটি যখন হাতে এল, দেখলেন দশ নয়, পেয়েছেন ন’হাজার। ১০% কেটে নেওয়া হয়েছে আয়কর বাবদ। উত্‌সমূলে কর কেটে নেওয়ার এই ব্যাপারটিকে আইনের ভাষায় বলা হয় ‘ট্যাক্স ডিডাকশন অ্যাট সোর্স’। সংক্ষেপে টিডিএস।
সব আয়ের উপর কিন্তু উত্‌সমূলে কর কাটা হয় না। আবার সবার ক্ষেত্রেও কাটা হয় না। উপযুক্ত ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ফর্মে প্রয়োজনীয় তথ্য দাখিল করে টিডিএস থেকে রেহাই পাওয়া যেতে পারে। এই সব কারণে আয়করদাতার তো বটেই, যাঁদের আয় করের আওতায় পড়ে না, তাঁদেরও টিডিএস সংক্রান্ত নিয়মকানুন জেনে রাখলে আখেরে লাভই হবে। এক নজরে বুঝে নেওয়া যাক কর কাটার হিসেবনিকেশ। কোন আয় কী মাত্রা ছাড়ালে কত কর কেটে নেওয়া হয়, তা দেওয়া হল সঙ্গের সারণিতে।
যে-আয়ের উপর উত্‌সমূলে কর কেটে নেওয়া হয়, খেয়াল রাখতে হবে সেই আয় যেন অবশ্যই আপনার আয়কর রিটার্নে দেখানো হয়। মনে রাখতে হবে, টিডিএস সংক্রান্ত পুরো তথ্য যে-সংস্থা কর কাটে, তাকে বাধ্যতামূলক ভাবে জমা করতে হয় আয়কর দফতরে। বছর শেষে আপনাকে সংশ্লিষ্ট সংস্থা/ব্যাঙ্ক থেকে সংগ্রহ করতে হবে টিডিএস সার্টিফিকেট। টিডিএস সংক্রান্ত তথ্য দেখে নেওয়া যেতে পারে আয়কর দফতরের ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত ২৬ এ এস ফর্মে।

যা মাথায় রাখতে হবে
১) কোনও কোনও প্রকল্পের আয় থেকে উত্‌সমূলে কর কেটে নেওয়া হয় না। তার মানে এই নয়, ওই প্রকল্পগুলি করমুক্ত। যেমন ডাকঘর মাসিক আয় প্রকল্পে টিডিএস নেই। কর কেটে রাখা হয় না মূলধনী বন্ডের সুদের থেকেও।
২) উত্‌সমূলে কর কেটে নেওয়া হলে, আপনার দায়িত্ব ফুরিয়ে গেল, তা কিন্তু নয়। আপনি যদি ২০ বা ৩০ শতাংশ করের আওতায় পড়েন এবং আপনার আয় থেকে যদি ১০% কর কাটা হয়, তবে বাকি কর জমার দায়িত্ব আপনার। এ ছাড়া আপনাকে জমা করতে হবে শিক্ষা সেস-এর টাকাও।
৩) আয় থেকে কর কেটে নেওয়া হলে সংশ্লিষ্ট সংস্থা থেকে টিডিএস সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে ভুলবেন না।
৪) আয়কর দফতরের ওয়েবসাইটে দেখে নিতে হবে ফর্ম ২৬ এ এস-এ আয় থেকে কেটে নেওয়া কর দেখানো হচ্ছে কিনা। না-হয়ে থাকলে, যোগাযোগ করতে হবে সংশ্লিষ্ট সংস্থা/ব্যাঙ্কের সঙ্গে। এটা করা না-হলে কেটে নেওয়া করের সুবিধা হারাতে পারেন আপনি।
৫) আপনার মোট আয় যদি ন্যূনতম করযোগ্য আয়ের কম হয় এবং আপনার কোনও আয় থেকে যদি কর কেটে নেওয়া হয়, তবে আপনি আয়করের রিটার্ন দাখিল করে কেটে নেওয়া কর ফেরত পাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারেন।
৬) প্যান দাখিল না-করার কারণে ১০ শতাংশের জায়গায় ২০ শতাংশ হারে কর কেটে নেওয়া হতে পারে। এই কারণে যেখানে আমানত রাখা আছে, সেখানে অবশ্যই দাখিল করতে হবে আপনার প্যান কার্ডের কপি।
৭) আয়কর দফতরের ওয়েবসাইট : www.incometaxindia.gov.in


কর না-কাটার ফর্ম

আপনার অনুমিত মোট আয় যদি করযোগ্য না-হয় তবে আপনি আমানত সংগ্রহকারী সংস্থায় নির্দিষ্ট ফর্মে আবেদন করতে পারেন, যাতে আপনার পাওনা সুদ/আয় থেকে কর কেটে না-নেওয়া হয়। আপনি যদি প্রবীণ নাগরিক না-হন, অর্থাত্‌ আপনার বয়স ৬০ বছরের কম হলে আপনাকে কর কাটা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য দাখিল করতে হবে ফর্ম ১৫ জি। বয়স ৬০ পেরোলে সময় মতো জমা করতে হবে ফর্ম ১৫ এইচ। ১৫ জি ফর্মে স্বাক্ষরকারীকে ঘোষণা করতে হয় সংশ্লিষ্ট বছরে তাঁর আয়ের উপর কর হবে শূন্য এবং ওই বছরে তাঁর আয় করমুক্ত আয়ের মাত্রা ছাড়াবে না। ১৫ এইচ ফর্মে স্বাক্ষরকারী ঘোষণা করেন, সংশ্লিষ্ট বছরে তাঁর অনুমিত মোট আয়ের উপর কোনও কর দেয় হবে না। এই ফর্ম দাখিল করতে হবে প্রথম সুদ প্রদান শুরু হওয়ার আগেই। একটি ফর্ম একটি নির্দিষ্ট বছরের জন্যই বহাল থাকে। অর্থাত্‌ প্রতি বছর উপযুক্ত ক্ষেত্রে দাখিল করতে হয় এই ফর্ম। সময় মতো এই ঘোষণা করলে সংশ্লিষ্ট আয় থেকে উত্‌সমূলে কোনও কর কাটা হয় না।
অনেক সময়ে দেখা যায়, করযোগ্য আয় থাকা সত্ত্বেও কেউ কেউ এই ফর্ম দাখিল করেন। কোনও কোনও ব্যাঙ্ককর্মীও গ্রাহকের আয়ের পুরো তথ্য না-জেনে আমানতকারীকে এই ফর্ম দাখিল করার পরামর্শ দেন, যাতে উত্‌সমূলে কর না-কাটা হয়। মনে রাখতে হবে আয় করযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও ১৫ জি অথবা ১৫ এইচ ফর্ম দাখিল করা গুরুতর দণ্ডনীয় অপরাধ। এই ফর্মে মিথ্যা ঘোষণা করলে আয়কর আইনের ২৭৭ ধারা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিচার হতে পারে এবং দোষী প্রমাণিত হলে জেল পর্যন্ত হতে পারে।
এই কারণে ১৫ জি অথবা ১৫ এইচ ফর্ম দাখিল করার আগে ভাল ভাবে দেখে নিতে হবে, সম্ভাব্য করযোগ্য আয় কী হতে পারে। মোট আয় করমুক্ত আয়ের সীমার মধ্যে থাকবে নিশ্চিত হলেই তবেই দাখিল করুন এই ফর্ম। এই ফর্মের দুটি কপি দাখিল করতে হয় উপযুক্ত সময়ের মধ্যে। ফর্মটি খুব ভাল করে পড়ে, বুঝে, সব তথ্য যথাযথ ভাবে ভর্তি করে এবং স্বাক্ষর করে তা জমা করতে হবে সুদ প্রদানকারী সংস্থার কাছে। ঠিকঠাক ভাবে এই ফর্ম ভর্তি না- করলে যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও আপনার আয় থেকে কর কেটে নেওয়া হতে পারে। পরে তা ফেরত পেতে ঝক্বি সামলাতে হতে পারে।

কোন আয়ে কত টিডিএস (ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে)
ধারা আয়ের সূত্র ন্যূনতম আয় (টাকা) টিডিএস (শতাংশ)
১৯২ বেতন করযোগ্য হলে প্রযোজ্য করের হার
১৯৩ ডিবেঞ্চারের সুদ ৫,০০০ ১০
১৯৪এ ব্যাঙ্ক আমানতে সুদ ১০,০০০ ১০
১৯৪এ অন্যান্য সুদ ৫,০০০ ১০
১৯৪বি লটারি/ক্রসওয়ার্ড ১০,০০০ ৩০
১৯৪বিবি ঘোড়দৌড় ৫,০০০ ৩০
১৯৪সি (১) চুক্তি বাবদ আয় ৩০,০০০
১৯৪সি (২) উপ-চুক্তি/বিজ্ঞাপন ৩০,০০০
১৯৪ডি বিমা কমিশন ২০,০০০ ১০
১৯৪জি লটারির টিকিট বিক্রির উপর কমিশন ১,০০০ ১০
১৯৪এইচ কমিশন/ব্রোকারেজ ৫,০০০ ১০
১৯৪আই বাড়ি/জমি/আসবাব ভাড়া ১.৮ লক্ষ ১০
১৯৪আইএ স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর ৫০ লক্ষ
১৯৪জে পেশাগত/কারিগরি পরিষেবা/রয়্যালটি ৩০,০০০ ১০
১৯৪জে (১) কোম্পানি ডিরেক্টরের কমিশন --- ১০
১৯৪এল এ স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ বাবদ ক্ষতিপূরণ ২ লক্ষ ১০


লেখক ম্যাকলিওড রাসেল ইন্ডিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কোম্পানি সেক্রেটারি
(মতামত ব্যক্তিগত)



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.